মণ্ডা মিঠাই
নতুনপাতা
সাঁতার শেখা
শুভ্রদীপ পাল চৌধুরি
সে অর্থে আমি কোনদিন সাহসী কোনও অভিযানে অংশ নিতে পারি নি। জেঠু বলে মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সাহসিকতার কাজ হল হাঁটতে শেখা। অবশ্য হাঁটা শেখায় মা-বাবার স্নেহের হাত সঙ্গে থাকে। জেঠু বলে আমারা এ্যডভেনচার ধরণের অনেক কাজ করি যেগুলি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না, কিন্তু তলিয়ে ভাবলে সেগুলি কম অ্যাডভেঞ্চারাস নয়, যেমন সাঁতার শেখা, সাইকেল চালানো। আমি আসছে বছর জেঠুর সাথে রক-ক্লাইম্বিং এ যাব। তাই আমার জীবনের দ্বিতীয় সাহসী কাজ ‘সাঁতার শেখা’-র গল্প বলব।
আমি তখন খুবই ছোট, ৭ কিংবা ৮ হবে, এক গরমের দিনের কথা। ঘর থেকে পালিয়ে প্রতিদিন বাড়ির কাছের পুকুরে ডুবোতে চলে যেতাম। জলে ডুব দিতাম কিন্তু সাঁতার কাটতে পারতাম না। পাড়ায় সমবয়সী অনেক বন্ধুরা সাঁতার পারত, ওরা আমাকে ‘সাঁতার পারে না , সাঁতার পারে না’ বলে খেপাত। আমি রেগে যেতাম।
প্রতিদিন পুকুরে স্নানের সময় দাদা কোথা থেকে লাফ দিয়ে এসে পড়ত, দাদা আমাকে জলে ডুবিয়ে দিয়ে জল খাওয়াত। আমি হাবুডুবু অবস্থায় নাকের জলে চোখের জলে এক করে বাড়ি ফিরতাম। এর জন্য বাড়িতে অনেক বকা খেতাম, কিন্তু তাও পুকুরে যেতাম, কিন্তু সাঁতার শিখতে পারলাম না। এই
করে এক বছর চলে গেল, আবার গ্রীষ্ম এল, পুকুরের জলে লাফালাফির মধ্যে দাদা ও তার বন্ধুরা আমাকে সাঁতার শেখাতে পারল না।
একদিন দাদা বলল ‘চল, তোকে আজ সাঁতার শেখাবই’। শুনে আমার ভয় লেগে গেল – “দাদা, আমায় আবার জলে ডোবাবি না তো ?” আমরা গেলাম ভট্ট-র পুকুরে, সঙ্গে একটা জলের ড্রাম। দাদা একটা গামছা দিয়ে খালি ড্রামটা মুখবন্ধ অবস্থায় কোমরে বেঁধে দিল, আমি দিব্যি সাঁতার কাটছি। কিছুক্ষণ পর দাদা বলল – ‘ড্রামটা খুলে সাঁতার কাটতে পারিস কিনা দেখ’। দাদার কথা শুনে ড্রামটা খুলে দিলাম। একটু ভয় ভয় করছে, তবুও আমি কিছুটা গিয়ে আর যেতে পারছি না। পুরোপুরি জলে হাবুডুবু খাচ্ছি, জলে প্রায় ডুবে যাব যাব , দাদা আমার চুলের মুটি ধরে টেনে পাড়ে নিয়ে আসল। এবারও আমার সাঁতার শেখা হল না।
কয়েকদিন বাদে দাদা আবার পাড়ার পুকুরে সাঁতার শেখানোর প্রস্তাব দিল। দাদা কোমরে গামছা দিয়ে ড্রাম বেঁধে সাঁতার কাটতে বলল। আমি অনেকক্ষণ সাঁতার কেটেই যাচ্ছি। দাদার সেই একই কথা- ‘ড্রামটা খুলে দেখতো সাঁতার কাটতে পারিস কিনা?’ ভয় লাগছে যদি ডুবে যাই। কোনও কথা না ভেবে আমি জলে নেমে সাঁতার কাটতে শুরু করেছে, কেটেই চলেছি, অনেক দূর সাঁতার কেটে চলে গেলাম।
আহ, সাঁতার কাটা শিখে ফেলেছি, আনন্দে মাতোয়ারা, কি মজা, কি মজা । প্রতিদিন সাঁতরে পুকুরের এপার ওপার করছি।
এরপর দাদার কথায় ডুব সাঁতার শিখতে শুরু করলাম, অনেক দম
লাগে, শ্বাস বন্ধ করে জলে ডুব দিয়ে হাত-পা নেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা।
এরপর চিৎ সাঁতার, খুব কঠিন, শরীরটাকে পাতার মত হালকা করতে হবে। দাদা পিঠে মাথায় হাত রেখে ভেসে থাকার কৌশল শেখায়, একটু একটু করে চিৎ সাঁতার শিখে ফেললাম।
এর পর নানা রকমের ঝাঁপ বা ভল্ট শিখলাম – ফ্রন্ট ভল্ট, ব্যাক ভল্ট। এভাবে দাদার সাহায্যে আমি সাঁতারে দক্ষ হলাম।
Comments :0