MONDA MITHI — NATUNPATA / PALLAV MUKHOPADHYA

মণ্ডা মিঠাই / অমর কথাশিল্পী — পল্লব মুখোপাধ্যায় / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  NATUNPATA   PALLAV MUKHOPADHYA - 16 September

নতুনপাতা

মণ্ডা মিঠাই 

অমর কথাশিল্পী
পল্লব মুখোপাধ্যায়

 

হুগলি জেলার দেবানন্দপুর-এ ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর (১২৮৩ বঙ্গাব্দের ৩১ ভাদ্র) অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়-এর জন্ম। বাবা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মা ভুবনমোহিনী দেবী। তাঁর দুই ভাই প্রভাসচন্দ্র ও
প্রকাশচন্দ্র এবং দুই বোন আনিলা দেবী ও সুশীলা দেবী। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন যেমন মেধাবী তেমন দুরন্ত।
প্রথমে প্যারি পন্ডিতের পাঠশালা, পরে সিদ্ধেশ্বর মাস্টারের স্কুল-এ পড়াশোনা করেন শরৎচন্দ্র। এরপর
ভাগলপুরের দুর্গাচারণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তি পাস করে ভাগলপুরের জেলা স্কুল-এ ভর্তি হন। সতেরো বছর
বয়সে পাঠশালার সহপাঠী কাশীনাথ-এর নাম নিয়ে 'কাশীনাথ' নামে একটি গল্প লেখেন। ভাগলপুরের
তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজ-এ ভর্তি হন।
কিন্তু অর্থাভাবে তাঁর এফ. এ. পরীক্ষা দেওয়া হল না। কলেজ-এর পড়া ছেড়ে অভিনয় ও খেলাধুলো করে কাটাতে
লাগলেন। ভাগলপুরের নির্ভীক, পরোপকারী, মহাপ্রাণ এক আদর্শ যুবক রাজেন মজুমদার-এর সঙ্গে মিশে তাঁর
পরোপকারমূলক কাজের সঙ্গী হন শরৎচন্দ্র। পরে এঁকেই 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে ইন্দ্রনাথরুপে চিত্রিত করে গেছেন।


ক্রমশ বন্ধু, প্রতিবেশীদের নিয়ে একটি সাহিত্য সভা গড়ে তুলেছিলেন শরৎচন্দ্র। সপ্তাহে একদিন করে সাহিত্য
সভার অধিবেশন বসত। শরৎচন্দ্র এই সময়েই তাঁর 'বড়দিদি', 'দেবদাস', 'চন্দ্রনাথ', 'শুভদা' প্রভৃতি উপন্যাস
এবং 'অনুপমার প্রেম', 'আলো ও ছায়া', 'বোঝা', 'হরিচরণ' প্রভৃতি গল্প রচনা করেছিলেন। রেঙ্গুন যাওয়ার আগে
কলকাতার বৌবাজার-এ গিরিনমামা-র অনুরোধে বসে সঙ্গে সঙ্গে একটি গল্প লিখে সুরেনবাবু-র (সুরেনমামা) নাম
দিয়ে 'কুন্তলীন' প্রতিযোগিতায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গল্পটির নাম ‘মন্দির’। দেড়শ গল্পের মধ্যে 'মন্দির' সর্বশ্রেষ্ঠ
বলে বিবেচিত হয়। ১৩১৪ বঙ্গাব্দে 'ভারতী' পত্রিকায় 'বড়দিদি' প্রকাশিত হয়েছিল। তখন অনেকের মতো
রবীন্দ্রনাথ-ও এই লেখা পড়ে তাঁকে প্রতিভাবান লেখক বলে বুঝেছিলেন। 'রামের সুমতি' প্রকাশিত হলে পর
নবপ্রকাশিত 'ভারতবর্ষ' এবং 'সাহিত্য' প্রভৃতি পত্রিকায়-ও শরৎচন্দ্র লিখতে শুরু করেন। 'যমুনা' পত্রিকাতেও
তাঁর লেখা প্রকাশ হতে থাকে। 'যমুনা' সম্পাদক ফনি পাল-ই প্রথম তাঁর 'বড়দিদি' উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন। 

 

সেই শুরু। বাংলা ছাপিয়ে গোটা দেশব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত শরৎচন্দ্রের সাহিত্য। কেন তিনি অমর
কথাশিল্পী তা আজ আর নতুন করে ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। দরদী, বিবেকী মানুষটি এমনকি পশুপাখির দুঃখ
দুর্দশা দেখলে-শুনলেও অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়তেন। কলকাতা পশুক্লেশ নিবরাণী সমিতির হাওড়া শাখার
সভাপতি ছিলেন। ভারতের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগ্রামীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলতেন। অনেক
বিপ্লবীদের সঙ্গে ছিল তাঁর হৃদ্যতা। বহু বিপ্লবীকে তিনি হাতিয়ার ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার
লুণ্ঠনের নায়ক বিপ্লবী সূর্য সেনকেও তিনি তাঁর বৈপ্লবিক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন। অতিথিপরায়ণ,
বন্ধুবৎসল মানুষটি ছিলেন লেখার বিষয়ে সৌখিন। ছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও তাঁর
ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। শরৎচন্দ্রের জীবনাবসান-এর কয়েকদিন পর ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ১২ মাঘ কবি লেখেন -
''যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে/ ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে/ দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি/
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে বরি"।

Comments :0

Login to leave a comment