MUKTADHARA | PROBANDHAYA — AMAR EKUSHE | PALLAB MUKHOPADHAYA — 21 FEBRUARY 2024

মুক্তধারা | প্রবন্ধ — অমর একুশে | পল্লব মুখোপাধ্যায় — ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA   PROBANDHAYA  AMAR EKUSHE  PALLAB MUKHOPADHAYA  21 FEBRUARY 2024

মুক্তধারা  

প্রবন্ধ 

অমর একুশে
পল্লব মুখোপাধ্যায়

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইউনেস্কো-র উদ্যোগে গোটা দুনিয়া জুড়ে বিভিন্নভাষী মানুষ পালন করেন নিজ নিজ মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসা জানিয়ে
এই দিনটি। আমাদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ এই দিনটি পালনের নেপথ্যে রয়েছে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারি-র অর্থ রফিক, জববার,
বরকত, সালাম, অহিউল্লাহ্। ২১ ফেব্রুয়ারি-র অর্থ "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?" ২১ ফেব্রুয়ারি-র অর্থ শামসুর রহমান-এর অমর কবিতা "মাতৃভাষা উচ্চারিত হলে"। ২১ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসকে স্মরণ করার সমান্তরালে উদ্বেগ ও বিচলিত হওয়ার দিনও। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি উপেক্ষা ও অনাদরের বিষয়টি সম্প্রতি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। মূলত আত্মচেতনার অভাব থেকেই আসে এই উপেক্ষা ও অনাদর। কোনও জনগোষ্ঠীর আসল জাতি পরিচয় তার মাতৃভাষা। আদতে মাতৃভাষার ব্যবহার মানুষের জন্মগত অধিকার। ভারতীয় সংবিধানেও নাগরিকের নিজস্ব ভাষার সংরক্ষণের বিষয়টি লিপিবদ্ধ। বাংলা ভাষার অপমান হয়েছিল বলে এক নতুন, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশ তৈরি হয়েছিল। যে অনন্য ভাষা সংগ্রাম-এর ইতিহাস ২১ ফেব্রুয়ারি বহন করে চলেছে তা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার অপরিমেয় গৌরবের সূচক নয়, সেই শ্লাঘা পরবর্তী সময়ে গোটা দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার অভিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভাষা দিবস উদযাপনের সময় যে বিষয়টি বারংবার সামনে আসে তা হল বাংলা ভাষা, বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে আমরা ভাবিত কিনা। বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলে গর্বিত কিনা, গর্বিত হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করায় উৎসাহিত কিনা। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারকে মর্যাদাসহ বহন করা ও গভীর আত্মসম্মানবোধে উজ্জীবিত হওয়াও ভাষা দিবস-এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। অমর একুশের মহতী প্রভাতে নতুন, অভিনব কোনও বক্তব্য নয়। জানা-চেনাকথাকেই ফের স্মরণ করা। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অমর একুশের উদ্দীপনার বার্তা পরিবার, সমাজ, মানুষের মনে ছড়িয়ে দেওয়া। অন্য কোনওভাষার প্রতি বৈরী মনোভাব নয়, মাতৃভাষার প্রতি স্বাভাবিক ভালোবাসাই এই উদ্দীপনার উৎস। উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনে বিদেশি ভাষার ব্যবহার অবশ্যই করা যেতে পারে কিন্তু সাধারণ সরকারি কাজেও বিদেশি বা আন্তসংযোগকারী ভাষার ব্যবহার করতে যাব কেন ? সরকারি-বেসরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলে বাংলা মাধ্যমে
শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের হীনমন্যতা কেটে যাবে। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা জানা জরুরি হিসেবে বিবেচিত হবে। ভাষা দিবস পালনের সঙ্গী হয়েই প্রতি বছর আসে বাংলা ভাষার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচলিত হওয়ার প্রশ্ন। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আসে। আসবেও। এই মনোভাবকে উপেক্ষা করেই মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সংশয়, অবিশ্বাস কাটিয়ে তুলতে হবে। আদতে একুশে ফেব্রুয়ারি এক মহতী আবেগের দিন, মহতী আবেগ ছড়িয়ে দেওয়ার দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার বিপন্নতা রুখতে হবে, এই হোক আমাদের শপথ, অঙ্গীকার। ইতিহাস, আবেগ, ভাষা, সংস্কৃতি, শপথ, অঙ্গীকার কী স্বাভাবিক,সহজভাবেই না আমাদের স্বত্তার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস, অভিজ্ঞতা, যন্ত্রণা, অঙ্গীকার মিশ্রিত অমর একুশে যদি ঘুম থেকে জেগে ওঠার ডাক দিয়ে যায়, ঘুমিয়ে থাকা যায় কি ? যদি বা যায়, উচিত ?

Comments :0

Login to leave a comment