মুক্তধারা | গল্প
দিগন্তে
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
রোদপোড়া মাঠটাকে ঘিরে লোকের ভিড়। অনবরত মানুষের আসা যাওয়ার মাঝে কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না।
কেবল কথাবার্তার শব্দ। কখনো চিৎকার।
উত্তাপের আঁচ পাচ্ছিল শর্বানী। মাটির দাওয়া থেকে নেমে উঁকি দেয় সে। কাঁকালে বাচ্চাটাকে ধরে হাত নেড়ে ডাকে চিত্তকে-
-"হ্যা গা একবার ইদিকে আসতে পার?
ভিড়ের মধ্যে থেকে হাত নাড়ে চিত্ত। কিছু বলে। শোনা যায় না। শর্বানী কানে হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে। বুঝতে পারে না। দু পা এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। আঁচ করতে চায়। দাঁড়িয়ে থাকে কিছুটা উৎসুক হয়ে।
বসন্ত ছুটে বেরিয়ে যেতে চায়।পদ্ম হাত ধরে টেনে রাখে ছেলের। কাঁচা বয়েস।বড্ড মাথা গরম । ভয় পায় পদ্ম।
বসন্ত মায়ের হাত ছাডায় না ।কিন্ত উঠোনে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে থাকে-'মাঠ ছাড়বে নি,চিত্তকাকা,সুয্যুকাকা তোমরা মাঠ ছাড়বে নি। সবাই মিলে আগলাও'
পদ্ম শর্বনীর দিকে তাকিয়ে বলে-',শাবু,ওই দেখ,সেই সব এয়েছে। আমাদের মাঠ ওরা নে ছাড়বেই।এই নে কতো বার টানাটানি।'
শর্বানী তার ডাগর চোখ দুখানা তুলে পদ্মর দিকে চায়। কেমন কষ্ট হয় তার। চোখদুটোয় জল এসে যায়।
শর্বানীর আজ বিয়ে হয়েছে ছ বছর। আসা অবধি সে দেখছে মাঠটা,দেখছে মাঠ ঘিরে থাকা মানুষদেরও। মাঠটাকে ঘিরেই তাদের বসতি। হিন্দু মুসলমান সবাই মিলে প্রায় তিরিশ ঘর।
তাই তো মন খারাপ হয় যখন সে ভাবে এই মাঠটা বেহাত হয়ে যাবে, বাজার বসবে।এভাবে হয়তো কোনদিন তাদের বসতিও চলে যাবে,কতবার তার কানে এসেছে কারা যেন দখল করে নিতে চায় সব।আজ চাক্ষুষ করলো।
অস্থির লাগে তার।
' দখল','দখল'-
শব্দটা মনে হলেই শরীরটায় জ্বালা হয় শর্বানীর। আজও একটা জ্বলন হচ্ছে তার। কি যে করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সবদিকটা কেমন বেসামাল লাগছে।
চারিদিকটা চোখটা কুঁচকে দেখে শর্বানী। চিত্তকে খুঁজতে চেষ্টা করে। চোখে পড়ে না।মনে মনে বিপদের আঁচ পায় সে।
'পদ্মদিদি, কারোর দেখতি পাচ্ছো?
-না, তো রে শাবু,দেখছি নি তো।'-পদ্ম মাথা নাড়ে।
বসন্ত এবার মায়ের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায়।হ্যাঁচকা টানে পদ্ম টাল খেয়ে যায়। চেঁচিয়ে কিছু বলতে যায়।তার আগেই শর্বানী কাঁকালের বাচ্চাটাকে পদ্মর কোলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায় মাঠের দিকে।তার সঙ্গে ছুটে বেরিয়ে যায় সবিতা,আনোয়ারাও।
Comments :0