বই
বাংলা ভাষায় এঙ্গেলস চর্চায় নতুন দান
প্রদোষকুমার বাগচী
মার্কসবাদ কথাটি শোনেননি এমন মানুষ আজ দুর্লভ। কোনও ব্যক্তি তিনি মার্কসবাদী হোন বা না হোন মার্কসবাদ কি বস্তু তা নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। পুঁজিবাদ যখন ঘোর বিপদে পড়েছিল সেই ২০০৮ সাল থেকে তখনও
নতুন করে মানুষ জানতে চেষ্টা করছেন যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কেন বার বার এত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এই প্রশ্নের জবাব তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন সেই মার্কস এঙ্গেলসের্ই লেখায়। তাই যাঁরা মার্কসবাদকে ঘৃণা করেন বলে ভাব দেখান, তাঁরাও
তলে তলে মার্কসবাদ পড়ার চেষ্টা করেন। পুঁজিবাদকে কোনওরকমে আরও কিছুদিন টিকিয়ে রাখা যায় কিনা মার্কস এঙ্গেলসের লেখা থেকে তাঁর সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন। একদিকে তারা এই কাজ করেন অন্যদিকে মার্কসবাদের
অপপ্রচার করেন অনেক পয়সা খরচ করে। বলা হয় যে মার্কসবাদ একটা বাতিল তত্ত্ব। কেউ বলেন মার্কস এঙ্গেলস দুজনে আলাদা কথা বলেছেন। আবার কেউ মনে করেন এঙ্গেলস মার্কসের ছায়া হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি কার্যত
হারিয়ে গেছেন মার্কসের প্রচারের আলোয়।
মার্কসের চিন্তা ছিল বিমূর্ত, দর্শন ও সাহিত্যধর্মী, কিন্তু এঙ্গেলস তেমন প্রখর নয়। তিনি খানিকটা বিজ্ঞানমনস্ক, খানিকটা জাগতিক। মার্কসের দর্শনবোধ তার মধ্যে নেই। আবার কেউ বলেছেন
তাঁদের দুজনের মতবিরোধ ছিল। কেউ আবার এঙ্গেলসের ভাবনায় ভিন্নতর উপাদান খুঁজে পেয়েছেন। আলোচ্য বইয়ের লেখক বলেছেন মার্কস-এঙ্গেলসকে যতই দুই ভিন্ন মানুষ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা হোক তাঁরা দুজনে দুজনের
পরিপূরক। অবশ্য এঙ্গেলসকে মার্কসের ছায়াসঙ্গি হিসাবে দেখানোর মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে এঙ্গেলসকে গুরুত্বহীন করে তোলার চেষ্টা আছে। তাই লেখক তাঁর বইটিতে বছরের পর বছর ধরে এঙ্গেলস কেন গুরুত্ব পেয়ে আসছেন সেকথা
আলোচনা করেছেন। এঙ্গেলসের চিন্তায় কোথায় মৌলিকত্ব আছে সেদিকটিও উন্মোচিত করেছেন। এঙ্গেলস বিরোধী ভাবধারা খণ্ডন করতে লেখক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ব্যাপারটা মার্কস বনাম এঙ্গেলস নয়, বরং মার্কস ও
এঙ্গেলস পরস্পরের পরিপূরক। বইটিতে কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। তার মধ্যে এঙ্গেলস বিরোধিতার জবাবে, প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতার বিরোধিতার জবাবে, এঙ্গেলসের বিদ্যাচর্চা নিয়ে আলোচনা থেকে পাঠক অনেক চিন্তার খোরাক পাবেন।
বাংলা ভাষায় এঙ্গেলস চর্চা অনেক কম হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেও এই বইটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
এঙ্গেলস বিরোধিতার জবাবে : মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্বিবাচনিক সহযাত্রা
সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। আপন পাঠ। বেলেঘাটা। কলকাতা—৭০০ ০১০। ৩৩০ টাকা।
Comments :0