Himachal flod

ফের হড়পা বান-ধস হিমাচলে, মৃত ৫১

জাতীয়

একটানা বৃষ্টিতে ফের ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিল হিমাচল প্রদেশ। মাস দুয়েক আগে প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত এই পাহাড়ি রাজ্যে রবিবার রাত থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নেমেছে হড়পা বান, ধস। সোমবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, কমপক্ষে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানী শহর সিমলাতেই অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেইসঙ্গে মান্ডি, হামিরপুর, কাংরা, নাহান সহ বিভিন্ন এলাকা ভাসছে বন্যার জলে। যত্রতত্র ভেঙে পড়েছে বাড়ি। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সড়কপথ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ডও। রাত পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চারধাম যাত্রা। ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেললাইনের কাজে যুক্ত থাকা ১১৪ জন শ্রমিক একটি টানেলের মধ্যে আটকে পড়েন। পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে দড়ির সাহায্যে।
সিমলার সামারহিল এলাকায় এক শিব মন্দিরে এদিন আচমকা ধস নামে। মন্দিরে প্রচুর ভিড় ছিল। প্রাথমিকভাবে ন’জনের দেহ উদ্ধার হয়। রাত বাড়তে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। সিমলারই ফাগলিতে ধস নেমে বহু বাড়ি সেই ধসে ভেঙে পড়েছে। সিমলা-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়ক সহ রাজ্যজুড়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে এবং ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি ও বহুতল। এবছরের বর্ষায় এখনও পর্যন্ত দেশে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিমাচল প্রদেশ। জুনের শেষ থেকে শুরু হয়েছে এই মরশুম। ভারী বৃষ্টি, বন্যা, ধস, হড়পা পানে ইতিমধ্যেই ২৫০’র বেশি মৃত্যুর সাক্ষী এই রাজ্য। রবিবার সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, হিমাচলে এই বর্ষার মরশুমে ৭০২০.২৮ কোটির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। 
হিমাচলের পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি। টুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে একাধিক প্রাণহানি হয়েছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সম্পদের।’’ রাজ্য ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত উদ্ধারকাজে শামিল হোক, আহ্বান জানান তিনি। 
আগের ভয়াবহ বিপর্যয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের দুর্যোগ ঘনানোয় স্বাভাবিক জনজীবন চূড়ান্তভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ষদ জানিয়েছে, ৬২১টি সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এদিন রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মান্ডির সম্বল গ্রামে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা প্রবল জলস্রোতে ভেসে গিয়েছেন অন্তত সাত জন। সোলানের জাড়োন গ্রামে রবিবার রাতে হড়পা বানে মৃত্যু হয় একই পরিবারের সাত সদস্যের। ওই হড়পা বানেই আরও দু’টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। সেই বাড়ির ছ’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত সাত জনের মধ্যে ৮, ১২, ১৪ বছরের চার জন শিশু রয়েছে— রাহুল, নেহা, গোলু, রক্ষা। এছাড়াও প্রাণ হারান হরনম (৩৮), কমল কিশোর (৩৫), হেমলতা (৩৪)। বালেরা পঞ্চায়েত এলাকায় একটি কুড়েঘর ভেসে গিয়েছে। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আরও দুই শিশুর। একজনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকাজেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। বানাল গ্রামে ধসে একজন মহিলা প্রাণ হারান। হামিরপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও দু’জন নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও’তে হিমাচলের বিপর্যস্ত অবস্থা ফুটে উঠছে। জলের স্রোতে মুহুর্মুহু ভেসে যাচ্ছে বাড়ি-ঘর, দোকান-বাজার। ভাঙা রাস্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছে বাস। ভেঙে পড়ছে বহুতল। এরকম অজস্র দৃশ্য ছড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের নানা-প্রান্তে। বহু এলাকায় মৃত্যুর নির্দিষ্ট তথ্য বা নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। কুলু, কিন্নর, লাহুল-স্পিতি বাদে রাজ্যের বাকি ৯টি জেলাতেই শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। এদিকে, রবিবার রাত থেকে একাধিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে শামিল হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। নিম্ন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 
প্রায় একই অবস্থা উত্তরাখণ্ডেও। ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে রাজ্যেও। দেরাদুন এবং নৈনিতাল সহ রাজ্যের ছয় জেলায় জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেরাদুনের মালদেবতায় ‘দুন ডিফেন্স কলেজ’-এর বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়েছে। ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, ওই বহুতলের পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা নদী বন্দাল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ল লালরঙা ওই বহুতল। এই বর্ষার মরশুমে এখনও পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। নিখোঁজ রয়েছেন ১৭ জন। লাগাতার বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডেও ভেঙে পড়েছে একাধিক সড়কপথ। ঋষিকেশ-চাম্বা জাতীয় সড়ক, ঋষিকেশ-দেবপ্রয়াগ-শ্রীনগর জাতীয় সড়কও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেরাদুন এবং চম্পাবতে এদিন স্কুল বন্ধ রাখে স্থানীয় প্রশাসন।

Comments :0

Login to leave a comment