Md Salim

অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে একজোটে, বললেন সেলিম

রাজ্য জেলা

থানা এখন দুষ্কৃতীদের আখড়া, মানুষ পুলিশের ওপরে ভরসা হারাচ্ছে। সন্দেশখালিতে পুলিশের মদত নিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনীর লুট ও মহিলাদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে সোমবার করিমপুরে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, রাজ্যের মানুষ ইনসাফ চাইছেন। কিন্তু একা একা ইনসাফ আদায় করা যায় না। তাই তৃণমূল আর বিজেপি’র ভাগাভাগির চক্রান্ত ব্যর্থ করে মানুষকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষের জোটই ইনসাফ আদায় করতে পারবে।
সোমবার মহম্মদ সেলিম নদীয়ার করিমপুরে এসে সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনজীবিকা এবং স্থানীয় নানা সমস্যার কথা শোনেন। ট্রেন থেকে নেমেই পলাশীর একটি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। স্টেশন চত্বরে রেল হকার, বেকার যুবক, পরিযায়ী শ্রমিক, টোটো চালক সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ জড়ো হয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর সেলিম নদীয়ার দক্ষিণ প্রান্তের করিমপুর বিধানসভার এলাকার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। মধুগাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে ভারতের অংশের প্রায় একশো একর বাংলাদেশের দিকে চলে গেছে। এই নিয়ে এলাকার মানুষ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সেলিমকে। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল এবং প্রশাসন কেউই এদিকে নজর দিচ্ছে না। 
এরপর সিপিআই(এম)’র ডাকা একটি সভায়  অংশ নিয়ে সেলিম বলেন, রাজ্যের দিদির লুট আর দেশে মোদীর লুট চলছে। লুটের বিরুদ্ধে লড়তে হলে তৃণমূল এবং বিজেপি কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। লুটেরাদের ধর্ম দেখলে রক্ষা পাওয়া যায় না, তেমনই লুটের বিরুদ্ধে যদি লড়তে হয় তাহলেও ধর্ম না দেখে সবাইকে এককাট্টা হতে হয়। এলাকায় এলাকায় জল জমি জঙ্গল সব লুট হয়ে যাচ্ছে, গরিবের প্রকল্পের টাকা থেকে চাকরি লুট হয়ে যাচ্ছে। আর যারা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করে, তারা মানুষকে ধর্মের নামে আলাদা আলাদা করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই বামপন্থীদের লড়াই। তৃণমূল আর বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে আদৌ লড়ছে না। ওদের মধ্যে বোঝাপড়া এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। রাজ্যকে বাঁচাতে হলে মানুষকে এককাট্টা হয়ে সব চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত, দুষ্কৃতীদের একযোগে তাড়াতে হবে। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এটাই সময়ের দাবি। 
সন্দেশখালির ঘটনা উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, থানাগুলো সব দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুষ্কৃতী যোগ ছাড়া এই দুর্নীতিতন্ত্র চলে না। তাই পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তৃণমূল নেতারা নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত ২৫-৭৫ ভাগের ভিত্তিতে অবাধ লুটের জন্য দুষ্কৃতীতন্ত্র কায়েম করেছে। তাদের হাতে রাজ্যের মহিলাদের বিপন্ন। কোনো সভ্য সমাজে এসব চলতে পারে? সন্দেশখালির লজ্জা কার? মুখ্যমন্ত্রীই পুলিশ মন্ত্রী, কোনো বক্তব্য আছে তাঁর? তাঁর নির্দেশে পুলিশ অপরাধীদের আড়াল করতে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করছে, সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছে। শুধু সন্দেশখালি নয়, রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় একইভাবে মানুষকে জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে।
সেলিম বলেছেন, বামপন্থীরা সন্দেশখালির আক্রান্তদের পাশে আছে। সেই জন্যই বামপন্থীদের ওপরে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর যে পুলিশ বাহিনী শেখ শাহজাহানকে খুঁজে পাচ্ছে না, সেই পুলিশই সন্দেশখালির প্রাক্তণ বিধায়ক সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সদস্য নিরাপদ সর্দারকে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু গায়ের জোরে, অস্ত্রের জোরে ওরা জিততে পারবে না। মানুষ এককাট্টা হয়েই ওদের জবাব দেবে। 
করিমপুরের এই সভায় সিপিআই(এম) নেতা লিয়াকত হোসেন সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটি সদস্য অলকেশ দাস, বদরুজ্জোয়া খান, নদীয়া জেলার নেতা রঞ্জিত মন্ডল, মানস মন্ডল,নাদির হোসেন মন্ডল, গোলাম রাব্বি প্রমুখ। সভায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়।

Comments :0

Login to leave a comment