Bankura

কাজের সন্ধানে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাচ্ছেন মহিলারা

জেলা

মধুসূদন চ্যাটার্জি

সুলেখা, অঙ্কিতা, উমা বাউরিরা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কেউ আরামবাগ, কেউ বর্ধমানের গ্রামে যাচ্ছেন বোরো ধান লাগানোর কাজে। ২০- ২৫দিন কাজ মিলবে? মজুরি পাবেন ২০০ টাকা, সঙ্গে খোরাকির কিছুটা চাল।
‘ব্যাস এটাই আমাদের গতরের দাম, এর বেশি দাম কে দেবে আমাদের? যারা আমাদের প্রতিদিন দেখছে, চেনে সেই পঞ্চায়েতে তো এখন খালি চেয়ার আলো করে বসে আছে মেম্বাররা। গাঁয়ে কাজ জুটলে কে যেত অন্য জায়গায়? আমাদের কি যন্ত্রণা ওরা বুঝবে?’ বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে আরামবাগ, বর্ধমানমুখী বাস ধরতে এসে কথাগুলো শোনালেন সুলেখা বাউরি। তিনি এসেছেন বাঁকুড়ার ইন্দপুর থেকে। তাঁর পাশেই সংসারের বাক্স-প্যাঁটরা সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকা থেকে আসা কল্পনা মান্ডি। এঁরা কেউ কাউকে চেনেন না, বাসস্ট্যান্ডেই আলাপ। যাবেনও এঁরা আলাদা জায়গায়। শুধু একটাই মিল নিজের জন্মভূমিতে এঁদের কাজ নেই। কাজের জন্য ছুটতে হচ্ছে ভিন জেলায়।
মানবাজার থেকে আসা অঙ্কিতা বাউরি জানান, ‘পয়সা কোথায় আমাদের? এবছর ধান ভালো হয়নি। ধান কাটতে বেশি পারিনি। ঘরে পয়সা নেই। তাই যাওয়ার ভাড়াটুকু কোনও মতে জোগাড় করে বেরিয়েছি। কটা দিন কাজ পাব জানি না। 
শুধু মহিলারাই নন, এঁদের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও যাচ্ছে এদের সঙ্গে। ফলে মাসখানেক লেখাপড়া বন্ধ তাদেরও। সুলেখা জানান, ‘কার কাছে রেখে যাব? আমার স্বামী বাইরে জনমজুরের কাজ করতে চলে গেছে। পাটনায় রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগাড়িয়ার কাজ করে।’ বয়স্ক গোবিন্দ বাউরি জানান, বহু আগে একেবারে ছোটবেলায় বাবা মায়ের সঙ্গে বর্ধমানের গ্রামে গিয়েছি। তখন কংগ্রেসের আমল। গাঁয়ে খাবার, কাজ কিছুই ছিল না। এখন আবার এই বয়সেও যেতে হচ্ছে ধান রোয়ার কাজে।’
বর্ষা চলে যাওয়ার পর গ্রাম এলাকায় মাটি কাটার কাজ হতো(রেগার কাজ)। রাস্তা, পুকুর, জমি ভরাট এসব করে সবাই না হলেও কিছু মানুষ তোঁয়াজ পেতেন। এখন তিন বছর তো কোনও কাজই নেই। পঞ্চায়েতের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে বলছে ‘মোদী’ টাকা দেয়নি। আমরা জানতে চেয়েছি, ‘মোদী, দিদি আমরা বুঝি না, তোমরা তো কাজ করিয়েছিলে। তোমরা টাকা আছে কিনা দেখনি? আগের টাকা গুলো কোথায় গেল? কোনও উত্তর আসে না। তৃণমূলের লোকজন এখন পঞ্চায়েত অফিসে বসে খালি খাওয়া দাওয়া করে। আর মাঝে মধ্যে বলে দুয়ারে সরকারে গিয়ে সব জানাতে। আর কোথায় কোথায় যেতে হবে আমাদের কে জানে? জানান অঙ্কিতা বাউরিরা।
এঁদের অনেকেই জানান, রেশনে যা চাল দেয় সেই চালে আমাদের পেট ভরে না। এরকম অবস্থা কোনোদিন আমাদের হয়নি। যে কাজে এঁরা যাচ্ছেন সেখান থেকে ফিরে আসবেন কয়েকদিনের মধ্যেই তার পর শূন্য হাতে বসে থাকতে হবে। কোথায় কোনও কাজের দিশা দেখতে পাচ্ছেন না এঁরা। একদিকে মানসিক অশান্তি, অন্যদিকে ন্যূনতম পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় শারীরিকভাবে কম বয়েসেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গ্রামের মানুষজন। কে এঁদের খবর রাখেন? 

Comments :0

Login to leave a comment