Migrant labourers death

ফের রাজ্যের তিন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ভিনরাজ্যে

জেলা

 গ্রামে কাজ নেই। সংসার চালাতে হলে বাইরে যেতে হবে কাজে। কিন্তু নিরাপত্তা কোথায় শ্রমিকদের? আবারও রাজ্যের ৩ পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু অসহায় আর বেসামাল করে দিল তিনটি পরিবারকে।  
কোচবিহারের উছলপুকুরির মালিরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রী রঞ্জিত বর্মণ (৩৫) চার বছর আগে প্রথম বন্ধুর সাথে কাজের সন্ধানে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। প্রতিবার বাড়ি এসেই বাবা নলিনী বর্মণকে বলতেন, ‘‘আর যাবো না,এবার গ্রামেই থাকবো।’’ তারপর হন্যে হয়ে এদিক ওদিক কাজ খুঁজে না পেয়ে ফের বাধ্য হয়ে ট্রেনে চেপে চলে যেতেন সেই বেঙ্গালুরুতে। শেষবার গিয়েছিলেন প্রায় এক বছর আগে। 
এবার পুজোর আগেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল রঞ্জিতের। একমাস আগেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হন রঞ্জিত। সেখানে হাসপাতালে চিকিৎসাও চলে। তাঁর সঙ্গীদের বক্তব্য, পুরোপুরি সুস্থ হবার আগেই ফের কাজে যোগ দেন এই শ্রমিক। দিন পনেরো আগে কাজে গিয়ে অসুস্থ বোধ করেন রঞ্জিত। সেদিন রাতেই খাওয়া দাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করায় ঘরের বাইরে গিয়ে বসেন। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। প্রায় ঘণ্টা চারেক পর বন্ধুরা খেয়াল করেন রঞ্জিত ঘরে আসেনি। এরপর বাইরে গিয়ে তাঁরা দেখেন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে রঞ্জিত।
এরপর দ্রুত তাঁকে কাছাকাছি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়, অপারেশনও হয়। খবর আসে বাড়িতে। অনেক টাকার প্রয়োজন। ঠিকাদার সংস্থা হাত গুটিয়ে নেয়। পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সে করে রঞ্জিত বর্মণকে নিয়ে ফিরছিলেন। ফেরার পথেই নবদ্বীপের কাছে রঞ্জিতের মৃত্যু হয়। সোমবার রঞ্জিতের মৃতদেহ তাঁর মালিরবাড়ির গ্রামে ফিরে আসে। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বাবা নলিনী বর্মণ বলেন, ‘‘ওর জবকার্ড ছিল, কিন্তু কোনোদিন গ্রামে কাজ পায়নি। এখানে রাজমিস্ত্রীর কাজ মেলে না। গ্রামে কাজ মিললে ছেলেটা এভাবে মারা যেত না।’’
সিপিআই(এম)’র জেলা নেতা বিপিন শীল বলেন, আমাদের মেখলিগঞ্জ এলাকার গ্রামে গ্রামে কাজের হাহাকার। চাষের জমিতেও আগের মতো কাজ মেলে না। সারা বছরে বড়জোর ৬০/৬৫ দিন কাজ মেলে। ফলে স্রোতের মতো গ্রামের মানুষ ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন। ভিন রাজ্যে কাজ মিললেও ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা নেই কেরালা ছাড়া অন্যত্র। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ বারবার ফিরে আসার ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসুস্থ কিংবা মৃত্যু হলে ঠিকাদার সংস্থাগুলি কোনও দায় নিচ্ছে না শ্রমিকের। এবিষয়ে রাজ্য সরকারও উদাসীন। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু মিছিল চলছেই কোচবিহারের গ্রামে গ্রামে।
অন্যদিকে, ভিনরাজ্যে গিয়ে মুর্শিদাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম মোকলেসুর রহমান (৩৩)। জানা গেছে, দিল্লিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে জল তোলার সময়ে মোটরে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তিনি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পৌরসভা এলাকার নতুন কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। দু’মাস আগে রাজমিস্ত্রির কাজে দিল্লিতে যান তিনি। দিল্লির সরোজিনী নগরে কাজ করার সময়ে জল তোলার জন্য মোটর চালু করতে যান তিনি। কিন্তু তখনই  বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মোকলেসুর রহমানের মৃত্যুর খবর আচমকা তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পরেই তীব্র শোক নামে পরিবারে। মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সোমবার সকাল থেকেই উদ্যোগী হয়েছেন গ্রামের মানুষ। 
নির্মাণ কাজে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন মালদহের এক পরিযায়ী শ্রমিকও।  জানা গেছে, মৃত শ্রমিকের নাম আকিদুল শেখ। তাঁর বাড়ি মালদহের কালিয়াচকের শেরশাহিতে। সংসারে অর্থের জোগান দিতে হায়দরাবাদে কাজের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। গত একমাসের বেশি সময় ধরে হায়দরাবাদে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ বা  নির্মাণ কাজ করার সময়। বিদ্যুৎচালিত একটি মেশিনে হঠাৎ বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ঘটে যায়। এরপরেই নেমে আসে মৃত্যু। জানা গেছে ৩ সন্তানের পিতা আকিদুর। তাঁর স্ত্রী এই মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মৃত আকিদুরের পরিবারের বক্তব্য, রবিবার ব্রেকার মেশিনে কাজ করার সময়ে কারেন্ট লেগে যায় তাঁর গায়ে। সেখানে কর্মরত অন্যান্য শ্রমিকরা দেখতে পেয়ে আকিদুরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি।

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment