PD Editorial Hindenburg

পিপলস্‌ ডেমোক্র্যাসির সম্পাদকীয়:
‘হিন্দুত্ব-কর্পোরেট আঁতাতেরই
প্রতীক মোদী-আদানির আঁতাত’

জাতীয়

PD Editorial

আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন বারবারই উঠেছে। রাজনৈতিক সংযোগ এবং আর্থিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এই বাস্তবতা মনে করিয়েছে ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’ পত্রিকার সম্পাদকীয়। 

সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সাপ্তাহিক মুখপত্রের সম্পাদকীয় নিবন্ধে এই প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে, ‘‘যেভাবে বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলি আদানিকে সমানে ছাড় দিয়ে গিয়েছে, সেই সুযোগে যেভাবে ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রসারিত হয়েছে, আজকের সময়ে তা ধান্দার ধনতন্ত্রের জঘন্যতম উদাহরণ।’’ 

সম্পাদকীয় বলেছে, ২০০২’তে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকে আঁতাত শুরু হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক উত্থানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক বাড়বৃদ্ধি। ২০১৪’তে আদানি গোষ্ঠীর সম্পদের মূল্য ছিল ৫০.৪ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২’এ ফুলেফেঁপে হয়েছে ১০.৩০ লক্ষ কোটি টাকা। 

মনে করানো হয়েছে যে সংবাদ ওয়েবসাইট ‘দি ওয়্যার’ নভেম্বর ২০১’তে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলার মুখে পড়েছিল। আদানির এলএনজি টার্মিনালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল বা ‘গেইল’ বিনিয়োগ করছে কেন তোলা হয়েছিল সেই প্রশ্ন। সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’তে লেখায় এমনই মানহানির মুখে ফেলেছে আদানি গোষ্ঠী। রবি নায়ারের মতো আরও সাংবাদিক রয়েছেন এই তালিকায়। 

সম্পাদকীয় বলেছে, ‘‘মোদী-আদানি আঁতাত এ দেশে হিন্দুত্ব-কর্পোরেট আঁতাতের প্রতীক। দেশকে আজ এই আঁতাতই শাসন করছে।’’ জনতার পক্ষে কেন বিপজ্জনক এই আঁতাত ব্যাখ্যা করে সম্পাদকীয় বলছে, ‘‘আদানি মনে করছে মোদী সরকারের সহায়তায় এই ঝড় সামলে দেবে। কিন্তু দেশের নাগরিকরা, যাঁরা দেখছেন গণতন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে, জীবনজীবিকা বিপন্ন করছে সাম্প্রদায়িক-কর্পোরেট আঁতাত, আদানিকে এই লুট আর বেনিয়মে অর্জিত সম্পদের দায় মেটাতে বাধ্য করা তাঁদের তরফে জরুরি।’’ 

সম্পাদকীয় বলেছে, ‘‘আদানি-হিন্ডেনবার্গ কিস্‌সাকে কেবল শেয়ার দামে কারচুপি, অর্থ পাচার এবং হিসেবের জালিয়াতি বা তার পালটা ‘ভারতের শীর্ষতম শিল্পপতিকে হেয় করার চেষ্টা’ সংক্রান্ত আলোচনায় আটকে রাখলে ভুল হবে। নরেন্দ্র মোদীর মদত এবং সুরক্ষায় আদানির ভারতে সবচেয়ে ধনী হয়ে ওঠা কেন, সেই বিশ্লেষণ ছাড়া এই কাহিনী অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’’

সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান মনে করিয়েছে সম্পাদকীয়। বলা হয়েছে, ‘‘বিধিবদ্ধ সব প্রতিষ্ঠান এবং আইন প্রয়োগের সংস্থাগুলিকে নিজেদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা জরুরি। আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক এবং ব্যবসায়িক লেনদেন বিশদে তদন্ত করতে হবে।’’ সেই সঙ্গে দাবি, ‘‘উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে তোলা অভিযোগের তদন্ত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে।’’

সম্পাদকীয়তে ব্যাখ্যা, জনগণের কাছে বড় উদ্বেগের কারণ এই সংস্থা বছরের পর বছর দেশের জনতার আর্থিক সঞ্চয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করে চলেছে। মোদী সরকারের বদান্যতায় আদানি গোষ্ঠী বন্দর, বিমানবন্দর, শস্য গুদাম, বিদ্যুৎ পরিবহণ এবং সিমেন্ট শিল্পের সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বড় বেসরকারি গোষ্ঠীর সঙ্গে কয়লা খননে ব্যাপক মাত্রায় অংশীদারিত্ব রয়েছে। 

সম্পাদকীয় বলেছে, এই সম্পদ দখলে নিতে পেরেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি’র বিনিয়োগের জন্য। এলআইসি প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই গোষ্ঠীর সাতটি সংস্থায়। আদানির মোট ঋণের ৪০ শতাংশ জুগিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। ফলে আদানির শেয়ার পড়তে থাকলে জনতার সঞ্চয় এবং সরকারি তহবিলের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

 

Comments :0

Login to leave a comment