Modi Women

মোদীর মুখে বোল ফুটেছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

মৌনব্রতে থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘুম ভেঙেছে। গত ১২ দিনের মধ্যে দু’দুবার মহিলাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। ধর্ষণ-নির্যাতনসহ নারীদের বিরুদ্ধে যেকোনও অপরাধকে তিনি ক্ষমার অযোগ্য বলেছেন। এমন কথাও বলেছেন নারীদের যন্ত্রণা তিনি অনুভব করেন। এধরনের ভাষণ শুনে তো মানুষ বিস্ময়ে হতবাক। এ তো অনেকটা ভূতের মুখে রামনামের মতো। সেই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকে নারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ নিয়ে তাঁকে কখনো উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেও শোনা যায়নি। এই সময়কালে মাসিক পার্বনের মতো শতাধিক ‘মন কি বাত’ শুনেছেন দেশবাসী। সেখানেও কোনোদিন এমন নারীদরদ উথলে উঠতে দেখা যায়নি। তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো তাকে নারীদের নিরাপত্তা নি‍‌য়ে এত কথা বলতে হচ্ছে?
তাঁর দশ বছরের শাসনকালে প্রতিদিন নারী নির্যাতনের কুৎসিত, জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। কাঠুয়া, হাথরাস, উন্নাও, মণিপুরে নৃশংসতম ও বর্বরতম ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে গোটা দেশে উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে। কিন্তু একবারের জন্যও টু শব্দটিও করেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁরই নিজের রাজ্য গুজরাটে হিন্দুত্ববাদী নরপিশাচদের জান্তব হিংস্রতার বলি বিলকিস বানোর নিরাপত্তা নিয়েও তিনি কথা বলেননি। তাঁর দলেরই গুজরাট সরকার যখন পশুরও অধম ধর্ষক-খুনিদের মুক্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাঁরই নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার যখন সেই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয় তখন তিনি সম্ভবত কানে তুলো আর চোখে ঠুলি পরে বসেছিলেন। শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই ধর্ষক-খুনিদের ফের জেলে পুরে বিলকিস বানোর নিরাপত্তার উদ্বেগ খানিকটা হালকা করেছিল, নরেন্দ্র মোদী সেটা করেননি। জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার থাকার সময় কাঠুয়াতে এক মন্দিরের মধ্যে এক ৮ বছরের যাযাবর পরিবারের কন্যাকে ধর্ষণ করে পাথরে মাথা থেতলে মেরে ফে‍‌লেছিল পুরোহিত। মোদী মৌনই ছিলেন। তাঁর দলের বিধায়কের নেতৃত্বে আইনজীবীরা ধর্ষকের মুক্তির দাবিতে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল করেছিল। মোদী কিছুই দেখেননি কিছুই শোনেননি। গেরুয়া জমানায় উত্তর প্রদেশে একের পর এক ঘটেছে হাড় হিম করা অকল্পনীয় সব নৃশংস ঘটনা। উন্নাও ও হাথরাসের ঘটনা তারমধ্যে গোটা মানবিক সমাজ ও সভ্যতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। যোগী রাজ্যের একটা সাধারণ চিত্র হলো উচ্চ বর্ণের লোকেরা প্রধানত নিম্নবর্ণের দলিত আদিবাসী নারীদের উপর পিশাচের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ ধর্ষক-খুনিদের পক্ষ নেয় এবং তাদের সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করে। উন্নাওতে দিনের পর দিন বিজেপি বিধায়কের ধর্ষণের শিকার হয় দলিত কন্যা। হাথরাসে ধর্ষক খু‍নি চার উচ্চবর্ণের যুবক। উন্নাওর ধর্ষিতার গোটা পরিবারকেই কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দেবার ব্যবস্থা হয়েছিল। হাথরাসে প্রমাণ লোপাটে মধ্যরাতে পরিবারকে না জানিয়ে ধর্ষিতার দেহ পুড়িয়ে ফে‍‌লেছিল পুলিশ। নরেন্দ্র মোদীকে এই দীর্ঘকাল পর্বে একটি কথাও বলতে কেউ শুনেছেন কি! মণিপুরে যখন গণহত্যা চলছে, নারীত্বের অপমান যখন সব সীমা অতিক্রম করে গেছে, ধর্ষণ করে নগ্ন করে যখন মহিলাদের প্রকাশ্য রাস্তায় শত শত মানুষের সামনে হাঁটানো হচ্ছে তখন নরেন্দ্র মোদী বোবার ভূমিকা পালন করেছেন। আজও মণিপুর নিয়ে তিনি নীরব। মণিপুরের নির্যাতিতা মা-বোনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গত দু’বছরে এক ঘণ্টা সময়ও বার করতে পারেননি। সেই প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে নারী নির্যাতন-অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলছেন! নিশ্চয়ই রাজনৈতিক সুবিধা পাবার কোনও আঁচ পেয়েছেন। কলকাতায় আর জি কর নিয়ে যখন দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন তখন সুযোগ বুঝে ফায়দা লোটার ফন্দি এঁটেছেন। নারীদের সম্মান, মর্যাদা, নিরাপত্তা নিয়ে যদি কোনও নেতা স্বতঃপ্রবৃত্ত সচেতন হন তাহলে সবসময়ই তার প্রকাশ ঘটবে, হঠাৎ করে তা উথলে উঠবে না।

 

Comments :0

Login to leave a comment