NATUNPATA | GK — ABUL BARKAT VASA SAHID | TAPAN KUMAR BIRAGAYA — 23 FEBRUARY 2024

নতুনপাতা | জানা অজানা | ভাষা শহিদ আবুল বরকত — তপন কুমার বৈরাগ্য | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA  GK  ABUL BARKAT VASA SAHID  TAPAN KUMAR BIRAGAYA  23 FEBRUARY 2024

নতুনপাতা  

জানা অজানা

ভাষা শহিদ আবুল বরকত
তপন কুমার বৈরাগ্য

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,আমি কি
ভুলতে পারি'। সত্যিই ভুলতে পারিনা।তাইতো আমাদের হৃদয় পটে
চির অম্লান হয়ে আছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পাঁচ ভাষা শহিদ।যারা
হলেন আবদুল জব্বার, রফিউদ্দিন আহমেদ,আবদুস সালাম,আবুল
বরকত,শফিউর রহমান। এই পাঁচ শহিদের মধ্যে আবুল বরকতের
জন্ম আমাদের এই পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার, কান্দি
মহকুমার  ভরতপুর থানার সালারের নিকটবর্তী বাবলা গ্রামে।
বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিলেন বরকত।বরকত কথার অর্থ
কল্যাণ,সৌভাগ্য অবিচলতা । ডাকনাম ছিলো আবাই।
তিনি ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসতেন। মা বাবার ছিলো বড়
আদরের ছেলে।আমাদের সৌভাগ্য তার জন্ম ভারতবর্ষে।
ভারতবাসী হিসাবে আমরা তাঁর জন্য গর্বিত।


বরকতের জন্ম ১৯২৭খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জুন। পিতার নাম
সামসুজ্জোহা এবং মাতা ছিলেন হাসিনা বিবি।তাঁদের দুই ছেলে
ও এক মেয়ে।বড় ছেলে বরকত। বরকতের বাবলা বহড়া
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক  শিক্ষা লাভ।ছোটবেলা থেকে
তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে
তিনি ভর্তি হন তালিবপুর হাইস্কুলে। ১৮বছর বয়েসে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে
তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন খুব সাফল্যের সাথে ।এরপর তিনি ভর্তি হন
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকে তিনি
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।এরপর এলো ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই
আগস্ট। তার আগে ইংরেজরা ভারতের বিভাজন ঘটালো।ভারত ও
পাকিস্তান নামক দুটো রাষ্ট্রে। পাকিস্তান আবার দুটো ভাগ।
পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান।একই শাসক,অথচ দুটি রাষ্ট্রের
মধ্যে দূরত্ব ১২০০মাইল। ভারত বিভাগের পর তিনি ১৯৪৮খ্রিস্টাব্দে
চলে আসেন ঢাকায় মামার বাড়িতে। এখানে এসে তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫১খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন।এরপর তিনি এম,এ ভর্তি হন।
পূর্বপাকিস্তানের শাসকেরা চাইলেন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে।কিন্তু
সেই দেশের শতকরা ৯৫জন বাঙালী চাইলো রাষ্ট্রভাষা হোক বাংলা।
শুরু হলো ভাষা আন্দোলন।এই আন্দোলনে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা
পালন করলো।

ইংরাজীর ১৯৫২খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারী,বাংলার
৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯। ছাত্রদের আন্দোলনের জন্য সারা ঢাকা শহরে
জারি হয়েছে১৪৪ধারা।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হোস্টেল প্রাঙ্গণে
বিক্ষোভ রত ছাত্রদের দিকে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে।
সেই দলে ছিলো আবুল বরকত।একটায় দাবী বাংলাভাষাকে 
রাষ্ট্র ভাষা করতে হবে।সেদিন বরকতের পরণে ছিলো নীল হাফ সার্ট, খাঁকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল। বরকতের সুঠাম দেহ ছিলো। 
পুলিশের গুলি এসে লাগলো তাঁর তলপেটে। 
রক্তে ভেসে গেল সারা শরীর।পোষাকগুলো রক্তে লাল হয়ে উঠলো। 
ঘটনাটা ঘটলো বিকেল সাড়ে তিনটেয়।
জনা তিনেক ব্যক্তি ছুটে এসে বরকতকে কাঁধে তুলে মেডিক্যাল
কলেজের জরুরী বিভাগে ভর্তি করেন।
সেদিন তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করেছিলেন--
আমি আর বাঁচবো না।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য ২১ফেব্রুয়ারী রাত আটটায়
বরকত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পিতামাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থেকে যান।
এরপর বাংলাদেশের উপর দিয়ে কতো ঝড় বয়ে যায়। 
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরকতকে ২০০০খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর
একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী
তার জন্মভিটেতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শ্রদ্ধার সাথে পালন
করা হয়।তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের তৃতীয় শহিদ। মাত্র ২৫বছরের
জীবন;কিন্তু বাঙালীদের কাছে তিনি চির অমর হয়ে আছেন।

Comments :0

Login to leave a comment