নতুনপাতা
জানা অজানা
ঘৃণার শৈশব
তপন কুমার বৈরাগ্য
ভারতের সংবিধানের খসড়া কার্যনির্বাহক
সমিতির সভাপতি ভারতের দলিত আন্দোলনের
পুরোধা ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেদকর।
যিনি ছিলেন জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রী সভার
প্রথম আইনমন্ত্রী।
এই মানুষটিকে ছোটবেলায় অনেক ঘৃণা ,অনেক
অপমান মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছিল।চোখ
ফেটে জল এসেছে।মনটা ব্যথায় কাতর হয়েছে,
তার একটায় কারণ দলিত সম্প্রদায়ে জন্ম গ্রহণ
করার জন্য। যারা উচ্চবর্ণের হিন্দু তারা এই
দলিতদের অচ্ছুৎ বলে মনে করতো। আম্বেদকর
তখন বম্বের বর্তমানে মুম্বাইয়ের এলফিনস্টন
হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। দলিত বলে তাকে
ক্লাসের শেষ বেঞ্চে একা বসতে হতো। ক্লাসের উচ্চবর্ণের
হিন্দুছাত্ররা ক্লাসে প্রবেশ করে ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে
টিফিন রাখার জায়গা আছে ,সেখানে টিফিনগুলো
রেখে দিতো। একদিন অঙ্কের শিক্ষকমহাশয় আম্বেদকরকে প্রথম ব্ল্যাকবোর্ড অঙ্ক করতে ডাকলেন।
ছাত্ররা খুবই অবাক হয়ে গেলেন শিক্ষক মহাশয়ের
এ হেন আচরণের জন্য।
ছেলেরা ছুটাছুটি করতে লাগলো নিজেদের টিফিনবাক্স
সরানোর জন্য। কারণ একজন অচ্ছুৎ বালক
সেখানে গেলে তাদের খাবারও অচ্ছুৎ হয়ে যাবে।
সেদিন এই বালকটা মনে মনে খুবই অপমানিত
হয়ে ছিলেন। সেদিন শিক্ষকমহাশয়ও মনে মনে
খুব দুঃখ পেয়েছিলেন।তিনি ভেবেছিলেন এই
ছেলেটা একদিন না একদিন দলিত সম্প্রদায়ের
পুরোধা হয়ে উঠবেনই।এমনকি বিদ্যালয়ের কলে
এই বালকটির জল খাওয়ার পর্যন্ত অধিকার
ছিলো না ।স্কুলের পিয়নকে বারবার অনুরোধ করার
পর বিরক্ত হয়ে জলের কল খুলে দিতেন ।সেই জল ,পাত্র করে নিয়ে দূরে গিয়ে তাকে পান করতে হতো।
ঘৃণার শৈশব তাঁর জীবনে দেখিয়েছে এক নতুন
দিগন্ত।আম্বেদকর মহার দলিত জাতিতে
জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে।
তিনি যে জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন তার নাম মহোও।
বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত।মাত্র পাঁচ
বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারান।ছোটবেলা
থেকে মাতৃস্নেহ থেকেও তিনি বঞ্চিত ছিলেন।
আজ এই বালকটির কথা মনে রেখে সব মানুষকে
আমাদের সমান চোখে দেখতে হবে।যেটা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন আম্বেদকর।
দেশের ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে এই শপথই আমাদের
আজ নিতে হবে।
Comments :0