বইকথা
ছোটদের আম্বেদকর
প্রদোষকুমার বাগচী
একজন সাহসী ও পরিশ্রমী মানুষের কথা
এবার তোমাদের কাছে এমন একজন মানুষের কথা বলবো যাঁর নাম তোমরা অনেকে হয়তো জানো আবার অনেকে জানো না। নামটি বলার আগে তোমাদের জানিয়ে রাখি ওর যখন ৫ কি ৬ বছর বয়স তখন ও স্কুলে যেতো ওর দাদার সঙ্গে। ওর নাম ছিল ভীম। একদিন ক্লাসে একজন শিক্ষক ভীমকে ব্ল্যাকবোর্ডে একটি অঙ্ক কষে সবাইকে বুঝিয়ে দিতে বলায় অন্য ছাত্ররা চিৎকার করে বললো যে ও ব্ল্যাকবোর্ড ছুঁতে পারবে না। ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে রাখা ওদের যে টিফিনের বাক্স আছে সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার পরেই ও অঙ্ক কষতে পারবে। সকলে এসে টিফিনের বাক্স সরিয়ে নেওয়ার পর ভীম সেদিন অঙ্ক কষে দিয়েছিল।
এবার বলতো ওরা এরকম কেন করেছিল? ভীম কি কোনও অপরাধ করেছিল? আসলে ভীমকে অস্পৃশ্য বলা হতো। এটাই তার অপরাধ। মাহার সম্প্রদায়ে জন্ম তাঁর। তাই ক্লাসে তাকে আর তার দাদাকে আলাদা বসতে হতো। পাছে ওদের ছোঁয়া লেগে যায়। ওদের টিফিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই ওদের থেকে দুরে থাকতো সবাই। আচ্ছা ভীমকে কে অস্পৃশ্য করল? সেটা না হয় নাই বললাম তোমরা বই পড়ে জেনে নিও।
তোমরা হয়তো এসব শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছো! তোমরা আরও অবাক হবে একথা শুনলে যে ওরা কিন্তু ক্লাসে কথা বলতে পারতো না। ওদের সব সময় মুখ বুজে থাকতে হতো। কথা বললে বাতাস দূষিত হবে। জলতেষ্টা পেলেও তাই তারা বলতে পারতো না। সেটা আকারে ইঙ্গিতে উপরের দিকে তাকিয়ে মুখ হাঁ করে বোঝাতে হতো। দয়া করে হয়তো কেউ একটূ জল মুখে অনেক উঁচু থেকে ঢেলে দিতো। তখন ওদের তেষ্টা মিটতো। না হলে এমনি কষ্ট করেই কাটাতে হতো। ক্লাসরুমের বাইরেও তাদের জীবন যন্ত্রণার শেষ ছিল না। পরে কঠোর পরিশ্রম করে মেধাবী ছাত্র ভীম বিদেশে পড়তে গিয়েছিলেন। তিনি অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ১৯৪০ সালে মাহারদের জন্য পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অস্পৃশ্যতা দূর করার আন্দোলন করেছিলেন। হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র ‘মনুস্মৃতি’ পুড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার অমন সাহস কজন দেখিয়েছেন? সেই তিনিই এদেশের সংবিধান রচনার প্রধান রূপকার হিসাবে ভারতের নতুন স্মৃতিগ্রন্থ রচনা করেন। এই মানুষটির জন্য আমাদের চিন্তা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু আজও অনেকে যখন সেই অস্পৃশ্যতা, জাতপাত ইত্যাদি ফিরিয়ে আনতে চায় তখন তোমাদের এই ভীমরাও বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথা ভালো করে জানতে হবে। মহৎ এই পরিশ্রমী মানুষটিই হচ্ছেন বাবা সাহেব আম্বেদকর। তোমরা বইটি একবার পড়লেই বুঝতে পারবে কত সাহসী, সজ্জন, পরিশ্রমী, যুক্তিনিষ্ঠ এবং জ্ঞানী ছিলেন এই মানুষটি।
ছোটদের আম্বেদকর। অঞ্জনা দাম। জ্ঞান বিচিত্রা। ১৬, ডা. কার্তিক বোস স্ট্রট, কলকাতা—৭০০ ০০৯। ৫০ টাকা।
Comments :0