Onion price hike

পেঁয়াজের ঝাঁঝে মোদী সরকারের চোখে জল

জাতীয়

টমেটোর সঙ্গে সবজির দাম বাড়ায় পর পর এবারে বাজারে পেঁয়াজের হু হু করে দাম বেড়ে চলেছে। পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে তাই ঘুম ছুটেছে  প্রধানমন্ত্রী মোদীর। বড় রকমের প্রমাদ গুনছে মোদী সরকার। বছরের শেষে হবে পাঁচ রাজ্যের  বিধানসভা নির্বাচন। তার পরেই আগামী বছরে চলে যেতে হবে লোকসভা নির্বাচনে। ভারতের বহু নির্বাচনেই পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে পালটে গেছে সরকার। এবারে পেঁয়াজের দামে ভয় পাচ্ছে সরকার? 
পেঁয়াজের দাম সামলাতে পর পর মোদী সরকারের বেহিসাবি পদক্ষেপে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। রপ্তানি রোধে শুল্ক বসানো, কৃষকের থেকে পেঁয়াজ কিনে বাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিলি। শোনা যাচ্ছে দিল্লিতে কেন্দ্র দ্রুত ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করার ব্যবস্থা করছে। তাতেও খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে কোথায়? বাজারে আজও পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহে ২২ শতাংশ  হারে বেড়েছে। 
এদিকে মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোটের মন্ত্রী দাদা ভুসে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিন। দাম আবার কমলে আবার পেঁয়াজ খাবেন। অন্যদিকে দেশের সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও তাদের ফসল পেঁয়াজের দাম না মেলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি রোধে কেন্দ্র শুল্ক চাপানোয় মান্ডিতে কৃষকদের বিক্ষোভ চলছে। এদিন শিবসেনা তাদের মুখপত্রে এক প্রতিবেদনে পরিষ্কার জানিয়েছে, পেঁয়াজে কেন্দ্র ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপানোয় কৃষকদের বা সাধারণ মানুষের কারোই উপকার হবে না। দাম কমবে না। লাভ তুলবে কর্পোরেট। 
দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার ১৫ মাসে সর্বাধিক বেড়ে হয়েছে ৭.৪শতাংশ। সর্বাধিক দাম বেড়েছে খাদ্য পণ্যের। বছর ভর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাতে তোয়াক্কা ছিল না কেন্দ্রের। চলতি মাসে ফের টমেটোর দাম আকাশ ছোঁয়া, তাতে কিছু দাম কমতে এখন পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে। এবারে নির্বাচন আসছে। তাই পেঁয়াজের দাম নিয়ে মাথাব্যথা বেড়েছে বিজেপি’র। তাই পেঁয়াজের দামে রাশ টানতে তড়িঘড়ি রপ্তানি কমাতে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের জোগান অব্যাহত রাখতে রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এতে আবার কৃষকদের ক্ষোভ বাড়ছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে তাই কৃষকদের থেকে সরাসরি পেঁয়াজ কেনার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। পরিস্থিতি সামলাতে এদিন ভোগ্যপণ্য বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বললেন, রপ্তানি কমাতে পেঁয়াজে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানোয় কৃষকরা আতঙ্কিত হবেন না। সরকার নিজে কৃষকদের থেকে পেঁয়াজ কিনবে। জরুরি মজুতের জন্য ২ হাজার ৪১০ টাকা কুইন্টাল দরে কৃষকদের থেকে পেঁয়াজ কিনবে সরকার। তিনি বলেন, ৪০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে সাধারণ মানুষের যেমন সুবিধা করা হয়েছে একই সঙ্গে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে কৃষকদের সুবিধা করা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকার অতিরিক্ত ২লক্ষ টন পেঁয়াজ কিনবে কৃষকদের থেকে। গোয়েলের দাবি কৃষকদের পেঁয়াজের যে দাম দেওয়া হচ্ছে তা ঐতিহাসিকভাবে বেশি দাম। কৃষকরা রপ্তানিকারকদের থেকে পেঁয়াজের দাম পায় ১ হাজার ৯০০ টাকা কুইন্টাল। সেখানে কৃষকদের কেন্দ্র অনেক বেশি দাম দিচ্ছে পেঁয়াজের।
দেশে মহারাষ্ট্র এবং মধ্য প্রদেশে সর্বাধিক পেঁয়াজের ফলন হয়ে থাকে। দুটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। পেঁয়াজের রপ্তানি কমাতে শুল্ক চাপানোয় কৃষকদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তা এদিন মন্ত্রী গোয়েলের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের রপ্তানি কমাতে আমাদের সরকারের শুল্ক চাপানো নিয়ে বিরোধীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ভুল প্রচার করছে। আমি সমস্ত পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যের কৃষকদের বলছি ‌আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। আপনারা আতঙ্কিত হয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে যাবেন না।  অপেক্ষা করুন সরকারের এজেন্সি আপনাদের থেকে বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনে নেবে। প্রসঙ্গত বর্তমানে (২০২৩-২৪) সরকারের পেঁয়াজের জরুরি মজুত রয়েছে  ৩ লক্ষ টন। অতিরিক্ত ২লক্ষ টন পেঁয়াজ কিনে মজুত ৫লক্ষ টন করা হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলা তার সঙ্গে পেঁয়াজ  নিয়ে মোদী সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র ও মধ্য প্রদেশে বিপাকে পড়েছে শাসক বিজেপি। রপ্তানি শুল্ক চাপানোর প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ কারবারীরা সোমবার থেকে পেঁয়াজ নিলামের বাজার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। ফলে মহারাষ্ট্রের নাসিক ও  লাসাগাওতে বড় পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে কেনাকাটা বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরাও রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। এদিকে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এদিন জানিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁর নির্দেশে কৃষকদের থেকে পেঁয়াজ কিনে নেওয়ার কেন্দ্র খোলা হচ্ছে নাসিকে। এতে আশা করছি কৃষকদের পেঁয়াজ বিক্রির সমস্যা মিটে যাবে। 
এদিকে আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক চাপানোয় কৃষক ও পেঁয়াজ বিক্রেতা সকলের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল শিবসেনা। দলের মুখপত্র সামনায় সেনা জানিয়েছে, আচমকা শুল্ক চাপানোয় জাহাজে বহু পেঁয়াজ মজুত হয়ে বন্দরে দাড়িয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ আগের বরাত মতো তা মজুত হয়ে রয়েছে। হাজার হাজার টন পেঁয়াজ মজুত হয়ে পড়ে আছে।  রপ্তানি পণ্যের শুল্ক চাপিয়ে নতুন দর নিয়ে  রফা না হওয়ায় জাহাজও ছাড়ছে না। বেশি দিন তা বন্দরে আটকে থাকলে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে কৃষকদের সর্বনাশ হবে। সামনা জানাচ্ছে কেন্দ্র যে পেঁয়াজের দাম নিয়ে যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে কৃষকের কোনও উপকার হবে না আবার সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হবে না। মাঝে জাহাজে মজুত পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে হয়ে যাবে।
ভারতের নির্বাচনে আলু, পেঁয়াজ, টমেটোর দাম অনেক সময় বড় ভূমিকা নিয়েছে। ভারতে প্রথম অকংগ্রেসী সরকারের পতন হয় ১৯৮০ সালে।  চরণ সিংয়ের সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলা নিয়ে সরব ছিল বিরোধীরা। তার প্রভাব পড়েছিল ভোটে। ১৯৯৮ সালে মহারাষ্ট্রের লোকসভা নির্বাচনে। দাম বেড়ে চলায় কংগ্রেস নেতা ছগন ভুজওয়াল মুখ্যমন্ত্রী মনোহর যোশীকে দীপাবলীর শুভেচ্ছা হিসাবে এক বাক্স পেঁয়াজ উপহার পাঠান। সেই বছর লোকসভা নির্বাচনে পেঁয়াজের দাম ইস্যু হয়ে ওঠে। সেই নির্বাচনে বিজেপি মহারাষ্ট্রে গোহারা হেরে যায়। ৪৩ আসনের মধ্যে মাত্র ৪টি আসনে জেতে বিজেপি। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে পেঁয়াজের দাম কাঁদিয়েছিল বিজেপি-কে। বিজেপি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মাকে সরিয়ে ১৯৯৮ সালে সুষমা স্বরাজকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আনে। সেই বছর পেঁয়াজ ও টমেটোর দাম বেড়ে যায়। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সুষমা স্বরাজ দিল্লির দায়িত্ব নিলেও পেঁয়াজের দাম রুখতে পারেননি। সেই সময় পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ টাকা কেজি হয়ে যায়। দিল্লিতে সেবার  ক্ষমতা হারায় বিজেপি।
 

Comments :0

Login to leave a comment