মুক্তধারা
প্রবন্ধ
বিস্মৃত বাঙালির জীবনচরিত: রাজনারায়ণ এবং 'সেকাল-একাল' সম্পর্ক
সৌরভ দত্ত
স্কুল ছুটির পর হেয়ার সাহেব নিজে স্কুলের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
স্কুলে আগত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করতেন।
এবং তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে তাদের গায়ের নোংরা,ময়লা সাফ করতে উদ্যত হতেন।
কারোর গা থেকে যদি বিন্দুমাত্র ময়লার বেরোত তার কপালে জুটত হেয়ার সাহেব কর্তৃক বেত্রাঘাত।
ভারতীয় ছাত্রদের তিনি শুধুই শাস্তি দিয়েই ক্ষান্ত হতেন না।
ছাত্রদের দেহ থেকে নোংরা সাফসুতরো জন্য গায়ে মাখা সাবানও কিনে দিতেন।
এই হচ্ছেন হেয়ার সাহেব তিনিই এই স্কুলের প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় মানুষজন স্কুলটিকে হেয়ার স্কুল বলেই চিনতেন।
তাকে নিয়েই চর্চা এই চর্চা চলবে।
হেয়ার সাহেবের স্কুলে যখন রাজনারায়ণ পড়তেন তখন তিনজন শিক্ষক ছিলেন।
দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ,উমাচরণ মিত্র আর রাধামাধব দে।শৈশবে রাজনারায়ণের গণিত বিষয় কখনোই খুব একটা ভালো লাগত না।
তবু ও তিনি সাহিত্য অপেক্ষা গণিতকে উৎকৃষ্ট গণ্য করেছিলেন।রাধামাধব দে রাজনারায়ণকে গণিতের পাঠদান করতেন।
এবং রাজনারায়ণ বসু এখনকার ছাত্রদের মতো স্পষ্ট লিখছেন–"গণিতের পুস্তক দেখিলে আমার আতঙ্ক উপস্থিত হইত।
এই রোগকে গণিতাতঙ্ক রোগ বলা যাইতে পারে।উহা জলাতঙ্কের ন্যায়।গণিতের মধ্যে বীজগণিতের প্রতি আমার অনুরাগ ছিল" এইরূপ অনুভব আমাদের অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যেই লুক্কায়িত রয়েছে।
গণিতশাস্ত্র বা অংক দেখলে তাদের গায়ে জ্বর আসে।পাটিগণিত অপেক্ষা বীজগণিত সকলের মন টানত।
হেয়ার স্কুলে পড়ার সময় রাজনারায়ণরা হাতে লেখা এক পত্রিকা বের করত।এই সংবাদপত্রের নাম ছিল "Club Magazine "।
হেয়ার স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায় শিশু রাজনারায়ণ স্যাটায়ারধর্মী একটি কবিতা রচনা করে তার এক বেনে সহপাটীকে ব্যাঙ্গ করেছিলেন।
হেয়ার স্কুলের ক্লাসেই তিনি প্রথম পড়েছিলেন রবিনসন ক্রুশো।
(চলবে)
Comments :0