Probandha — Stephen Hawking / MUKTADHARA / 6 DECEMBER

প্রবন্ধ — নাস্তিক হকিং / সাগ্নিক চক্রবর্তী / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha  Stephen Hawking  MUKTADHARA  6 DECEMBER

মুক্তধারা

প্রবন্ধ
নাস্তিক হকিং
সাগ্নিক চক্রবর্তী

স্টিফেন হকিং-এর লেখা অন্যতম বিখ্যাত বই – ‘এ ব্রিফ হিস্ট্ররি
অফ টাইম’ (১৯৮৮)। এছাড়াও অন্যান্য বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে
রয়েছে ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’, ‘দি ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল’, ‘দি
থিওরি অফ এভরিথিং’ ।
স্টিফেন হকিং গড বা ভগবানে বিশ্বাসী ছিলেন না, বরং বিশ্বাসে
তিনি নাস্তিক। মাত্র ২১-বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত
হলেন, ৩৩-বছরের মধ্য বাকশক্তি হারালেন।
নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি
ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রী-সহ অনেকে তাকে নাস্তিক হিসাবে
স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে স্টিফেন হকিং নিজে মনে করতেন “সাধারণ
অর্থে তিনি ধার্মিক নন”, তিনি বিশ্বাস করতেন –“দুনিয়া
বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি
করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনও
হস্তক্ষেপ করেন না।“
গত শতকের শেষ দিকে হকিং-ই অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন
‘ব্ল্যাকহোলস আর নট সো ব্ল্যাক’ বা ব্ল্যাকহোল পুরোপুরি কালো
নয়। সে ও আলো উগড়ে দেয়, ব্ল্যাকহোল থেকেও আলো বেরিয়ে
আসে।
ঘোষিত নাস্তিক ছিলেন স্টিফেন হকিং, চিকিৎসকদের সমস্ত
ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত করে তার দীর্ঘ জীবন নিয়ে কৌতুক
করতে কখনও দ্বিধা করতেন না। তিনি বলতেন – মৃত্যুকে যারা ভয়
পায়, তারাই মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে আজগুবি গল্প ফাঁদে।

অন্ত্যেষ্টি নিয়ে তিনি কখনও কিছু বলেন নি। শুধু চেয়েছিলেন, তার
সমাধি ফলক-এ লেখা থাকবে তার বিখ্যাত সমীকরণ E=mc² ।
এহেন স্টিফেন হকিং এর চিতাভস্ম ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবে-তে
রাখার রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। ৩১-শে
মার্চ বিজ্ঞানীর পরিবার সুত্রে

জানানো হয়েছিল – ইস্টার শনিবারের বিশেষ দিনে কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেট সেন্ট মেরিজ গির্জায় অধ্যাপকের শেষ কৃত
সম্পন্ন হবে। যে গনভিল ও কেইয়ুস কলেজের সঙ্গে ওনার ৫২
বছরের সম্পর্ক, তারই অদূরে এই গির্জা। তারপর ওনার চিতাভস্ম
রাখা হবে ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে। ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে
রয়েছে আইজাক নিউটন এবং চার্লস ডারউইনের সমাধি।
কিন্তু চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান গির্জায় ওনার সমাধি কেন?
ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবে-র ডিন রেভারেন্ড জন হলের কথায় – “
হকিং-এর কাজের জন্য এই সম্মান। তিনি নাস্তিক ছিলেন কি না,
এটাই বিবেচ্য বিষয় নয়। এটা তো প্রত্যাশিত যে, মৃত্যুর পরে
নিউটন বা ডারউইনের মতো মহান বিজ্ঞানীদের পাশেই হকিং-এর
স্থান হবে”।
তবে একথাও ঠিক যে নাস্তিক হলেও ‘ঈশ্বর’-কে কখনও অচ্ছুত
করে রাখেননি হকিং। তার দুনিয়া কাঁপান ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ
টাইম’ – পুস্তকে হকিং লিখেছেন – ‘বিজ্ঞানীরা যদি মহাবিশ্বের
সমস্ত বস্তু ও শক্তিকে ব্যাখ্যা করার মত উপযুক্ত কোনও
সমীকরণ গুচ্ছ তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেটাই হবে মানব মননের
চূড়ান্ত জয়। তখন আমরা ঈশ্বরের চিন্তাধারাও বুঝতে পারব”।
ঈশ্বরের চিন্তাধারা ?...? তাহলে তার মনের গভীর কোনে কি
ঈশ্বরচিন্তা ছিল? এই প্রশ্নের মুখে তিনি স্পষ্ট করে
জানিয়েছিলেন - “সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার তত্ত্বে তিনি বিশ্বাস
করেন না। আপনারা বলতেই পারেন যে পদার্থবিদ্যার নীতিই
ঈশ্বরের কার্যকলাপ। কিন্তু ঈশ্বর কি, এ তো তার ব্যাখ্যা মাত্র।
ঈশ্বর যে সত্যিই আছেন তার সম্পর্কে কোন প্রমাণ নেই”।
ধার্মিক না হলেও ধর্ম নিয়ে যে তার বিশেষ ছুঁতমার্গ নেই, তাও
বোঝা গিয়েছিল ২০০৮-এ। তৎকালীন পোপ বেনডিক্ট একদল
বিজ্ঞানীকে রোমে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই আমন্ত্রিত

বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন হকিং। ২০১৬-তে ভ্যাটিকানে হকিংকে
ফের আমন্ত্রণ জানান বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস। হকিং-এর সাথে
আলাপচারিতাকে পোপ ব্যাখ্যা করছিলেন “ধর্মের বিজ্ঞানকে
বোঝার চেষ্টা”।

সেই বোঝার চেষ্টা থেকেই বোধ করি ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে
হকিং-এর সমাধি গড়ার উদ্যোগ। এটা ধর্মের কাছে মাথা না নোয়ানো
বিজ্ঞানীর প্রতি ধর্মের কুর্নিশ।
হকিং-এর শেষ গবেষণা পত্রটির শিরোনাম ছিল – “এ স্মুদ এগজিট
ফ্রম ইটার্নাল ইনফ্লেশন ?” বেলজিয়ামের ল্যুঁভ বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইন্সটিটিউট ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের অধ্যাপক টমাস
হেটর্গ-এর সাথে যুগ্ম গবেষণাপত্র, লেখা শেষ করেছিলেন জুলাই
১৭-তে। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।

গবেষণাপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি

নিজের শেষ গবেষণাপত্রটি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংযোজন-
সংশোধন-পরিমার্জন করে গেছেন। মৃত্যু শয্যাতেও সৃষ্টি রহস্যের
জট খোলায় এতটাই মগ্ন ও খুঁতখুঁতে ছিলেন যে অঙ্ক কষে তার
বিশ্বাসের সত্যতা বুঝতে পারার পরও গবেষণা পত্রের শিরোনামে
প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখেছেন। গত ৪ঠা মার্চ এই গবেষণা পত্রটি
শেষবারের মত সংশোধন করে লিখেছিলেন – আমাদের ব্রক্ষ্মান্ডে
যত তারা বা নক্ষত্র রয়েছে, তাদের জ্বালানির সবটুক শেষ হয়ে
গেলেও, এই ব্রক্ষ্মান্ড শুধু একটাই নয়, এমন আরও ব্রক্ষ্মান্ড
বা ইউনিভার্স আছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম মাল্টি-

ইউনিভার্স বা মাল্টি-ভার্স । হকিং নিজেও তার এই
গবেষণাপত্রটিকে বলেছেন ‘কনজেকচার’ বা অনুমান। তাই সম্ভবত
তার গবেষণা পত্রের শিরোনামায় এই প্রশ্নবোধক চিহ্ন ( ?) ।

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment