SANDESHKHALI AWAKEN

‘মধ্যরাতের তৃণমূলী শাসন’এর বিরুদ্ধে জেগে উঠছে সুন্দরবন

রাজ্য

সুদীপ্ত বসু

নয়ের দশকের শেষের দিকে গোটা দেশ তোলপাড় করে দেওয়া বিহারে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিল দীপেশ চন্দক, হীতেশ চন্দক। ১৯৯৬ সালে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল দীপেশ চন্দক। পরে যদিও রাজসাক্ষী হয়ে জামিনে ছাড়া পায়।
তাদেরই সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড। পশু খাদ্য কেলেঙ্কারির চার্জশিটেও ছিল এই সংস্থার নাম। মমতা ব্যানার্জির দল পশ্চিমবঙ্গে সরকারের আসার পরেই পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে যুক্ত কালো তালিকাভুক্ত সেই সংস্থার চালকলই খাদ্য দপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়!
উত্তর ও দক্ষিন-দুই চব্বিশ পরগণার ১৯টা ব্লক নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ডেল্টা বা ব-দ্বীপ সুন্দরবন। গত প্রায় এক দশক ধরে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ লোনা মাটির ভূখন্ডে রেশন দুর্নীতির চক্র চলেছিল পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এই সংস্থার হাত ধরে। খোদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আদালতে পেশ করা নথিতেও রয়েছে তার উল্লেখ। দীপেশ চন্দক, হীতেশ চন্দকদের হয়ে সেই কারবার নিয়ন্ত্রন করত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-বাকিবুর রহমান- শেখ শাহজাহানের বাহিনী।
২০১৮ সালেও এই সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জের কৃষকরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সেই দীপেশ চন্দকরা কৃষকদের ভুয়ো নথির মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকে সরকারি টাকা নয়ছয় করতো। কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হতো না অথচ তাঁদের নথি ব্যবহার করে সেখান থেকে কমিশনের একটা অংশ ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হত। ধান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ গোটাটাই ছিল স্রেফ খাতায় কলমে।  সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় রেশনে  নিম্নমানে চাল সরবরাহ করা হতো। ডিলারদের হুমকি দিয়ে চাল তুলে নিত শাহজাহান বাহিনী। অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের ডিরেক্টর হীতেশ চন্দক ও দীপেশ চন্দক এবং সুন্দরবনের সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করেও কোটি কোটি টাকা সরিয়েছে।
বিহারের পশু খাদ্য কেলেঙ্কারির জালিয়াতদের লোনা মাটির দেশে পা রাখার জায়গা করে দেওয়া হয়েছিল নবান্ন থেকেই। এই দুর্নীতিতন্ত্র কায়েম করতেই দুষ্কৃতীতন্ত্র কায়েম করা হয়। সন্দেশখালির যে দুষ্কৃতীরাজের কথা শুনে সারা দেশ চমকে উঠছে তা এমনি এমনি গড়ে ওঠেনি, এর পিছনে দুর্নীতি কায়েম রাখার তাগিদ ছিল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হয়ে ভাইপো সাংসদের বরাভয়ে সন্দেশখালির এই বিস্তীর্ণ প্রান্তরে মধ্যযুগীয় শাসনের মডেল তৈরি করেছিল শাহজাহান।
সেই সাম্রাজ্যে টান পড়লে কাঁপবে নবান্নও, বিলকুল জানেন মুখ্যমন্ত্রী।
৫ জানুয়ারি শাহজাহানের বাড়িতে ইডি যদি তল্লাশি করতে পারতো তাহলে তা নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত তদানীন্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমানকেও ছাপিয়ে যেতো, মনে করছেন খোদ সন্দেশখালির মানুষজনই। তার জন্যই ইডি অফিসারের ওপরে হামলা, এতে সন্দেহ নেই অনেকেরই। 
মালঞ্চ পেরিয়ে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে পুলিশী নিরাপত্তায় দক্ষিন কলকাতার যে ঠিকানায় পৌছতো নগদে ঠাসা গাড়ি, সেই ঠিকানার প্রশ্রয়েই এখনও শাহজাহান-শিবু বাহিনী, ইডি’কে মেরেও তারা নিরাপদে। জেলে নিরাপদ সর্দার, সন্দেশখালির মানুষের প্রিয় নেতা।
                **                         
১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে সন্দেশখালির দুটি ব্লক। তার মধ্যে শুধু ২ নম্বর ব্লকেই ৩৫৬বিঘা জমি লুট করেছে শাহজাহান-শিবু বাহিনী। ভেড়ির জমির লিজের লুট করা টাকার পরিমান তো কোটি কোটি। রায়তি জমিতেও লোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। রেগার লুটের টাকার পরিমান কোটির কাছাকাছি ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের হিসাবেই। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে ৩০০ পরিবারের আবাস যোজনার সাড়ে চার কোটি টাকা লুট হয়েছে। প্রতিবাদ করতেই অফিসে ঢুকেই বিডিও’কে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছাড় পায়নি বিডিও, আর নিরাপদ সর্দররা ছাড় পাবে, তা হয়? মেছোঘেরি, ইটভাটা, মাছের আড়ৎ, সরকারি সম্পত্তি, ফেরিঘাট কোন কিছুই বাদ যায়নি দখলের গ্রাস থেকে! প্রতিমাসে শুধু এই দুটি ব্লক থেকে শাহজাহান বাহিনীর আয়ের পরিমান পাঁচ কোটি টাকা! রেশন দুর্নীতির চেহারা তো আরো ভয়াবহ।
শাহজাহানের ভগ্নিপতির নাম সাবির আলী মোল্লা। তৃণমূল সরকারের আসার পরেই ভিলেজ পুলিশের চাকরি পায় সে। বাড়ি সন্দেশখালির তালতলায়। ন্যাজাট থানার অন্তর্গত রাজবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে। তাঁর আবার দুই ভাইকে শাহজাহানই সিভিক পুলিশের চাকরি পাইয়ে দেয়। ফলে শাহজাহানের লুট, সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে পুলিশের সাহায্যেই। যাবতীয় ঠিকাদারি থেকে আইসিডিএস প্রকল্পের বরাত লুটের কাজ করতো এই সিভিক আর ভিলেজ পুলিশ। সাবিরের বাড়িতেই আইসিডিএস সেন্টার, তাঁর স্ত্রী দায়িত্বে। 
ত্রিমোহীন বাজারের দোকানদার রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন- বর্গী হামলা। জামাকাপড়ের দোকান থেকে খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান থেকে মুদি দোকান- যখন যেমন মনে হতো সব জিনিসপত্র তুলে নিয়ে যেতো। কোন টাকা দিতো না। এমনকি বিদ্যুতের বিল লক্ষ লক্ষ টাকা বাকি শিবু হাজরা-উত্তম সর্দারদের। বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরা এলে পাল্টা মার খেতো।
এই বিপুল সাম্রাজ্য এমনি এমনি গড়ে উঠলো? সন্দেশখালি কাণ্ডে এফআইআর তালিকায় থাকা  বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের দাবি, খোঁজ নিয়ে দেখুন বসিরহাটে যখন তৃণমূল সাংসদ ভাইপো’র নব জোয়ার যাত্রা এসেছিল তখন কত লক্ষ টাকা নগদ তুলে দেওয়া হয়েছিল! গত বিধানসভা ভোটে কালীঘাটে কত দিয়েছিল শাহজাহান, জানুন তা।
‘ফেরার শাহজাহান’কে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তাই বলতেই পারেন- ‘অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকেও ব্রিটিশ পুলিশ খুঁজে পেতো না।’ শাহজাহানরাই সম্পদ মুখ্যমন্ত্রীর চোখে।
                 **
তৃণমূল আমলে পুলিশ আসলে কী? শুধু সন্দেশখালি নয় আসানসোল থেকে আরামবাগ, কেশপুর থেকে কাঁথি, বোলপুর থেকে বাসন্তী- অভিজ্ঞতা আছে গোটা রাজ্যের মানুষের।

এরাজ্যে রেগায় দুর্নীতির চেহারা কত প্রকারের, জব কার্ড কেলেঙ্কারি কীভাবে হয়, কীভাবে ভুয়ো অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে তা পরবর্তীতে চলে যায় তৃণমূলের নেতাদের পকেটে তাও সন্দেশখালিই একমাত্র জানে তা তো নয়। দক্ষিনবঙ্গে সিংহভাগ জনপদের সেই অভিজ্ঞতা আছে।
কীভাবে রায়তি জমি, পাট্টার জমি সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে দখল করা হয়, কীভাবে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয় তা দেখেছে রাজ্যের একাধিক প্রান্ত, সন্দেশখালি তো নতুন নয়।
কীভাবে চাষের জমিতে লোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, কীভাবে লিজের জমি দখল নিয়ে ভেড়ির কারবার চলে, ভেড়ির কারবারে কীভাবে কোটি কোটি টাকা ওঠে তা ক্যানিং থেকে বাসন্তী, মিনাখাঁ থেকে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জও জানে।
তাহলে সন্দেশখালির নতুনত্ব কোথায়? 
শাসক তৃণমূলের কুৎসিত, হিংস্র চেহারার সব উপসর্গই হাজির সন্দেশখালিতে অন্যান্য অনেক জনপদের মতই। কিন্তু মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়াতে হয় রক্তচক্ষু নিয়েই -দ্রোহকালের চেনা পথেই কেন হাঁটা শুরু করলো সন্দেশখালি?
সন্দেশখালি প্রকৃত বৈশিষ্ট্য তার সাহসী প্রতিবাদে। আমাদের সব চেতনাকে এক ধাক্কায় বিস্ময়, লজ্জার, ঘৃনার দোরগোড়ায় টেনে নিয়ে এসেছে দ্বীপাঞ্চলের কলোনীপাড়া, পাত্রপাড়া, মাঝেরপাড়ার সেই জননীরা।
একমাত্র পুত্র সন্তানের হাত ধরে, আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের জননী নির্বিকার ভাবে বলে যাচ্ছেন- মানুষের চামড়া তো এখনও শরীরে আছে আমাদের! আর কতরকম ভাবে আমরা বোঝাবো বলুন- রাত বিরেতে ফোন করে তুলে নিয়ে যাওয়া হত থানার পাশে তৃণমূলের অফিসে, এসি লাগানো ঘরে। সেখানে সারা রাত আমাদের সঙ্গে ‘মিটিং’ করতো শিবু হাজরা। ভোরবেলায় ফেরত পাঠানো হত বাড়িতে। ‘না’ বলার অধিকার ছিলো না আমাদের। বললে স্বামীকে ঐ পার্টি অফিসে তুলে নিয়ে কোদালের বাঁট দিয়ে পেটানো হত। শরীর খারাপ, অসুস্থতা কোন কিছুতেই না বলা যেতো না। দিনের পর দিন! এই অন্ধকারেই হাজার হাজার মহিলা জীবন কাটাচ্ছেন!’
সন্দেশখালি প্রতিবাদে জেগেছে, কিন্তু আতঙ্ক এখনও রয়েছে। শাহজাহান বাহিনী এখনও রাতের অন্ধকারে চড়াও হচ্ছে, সঙ্গে পুলিশের মিথ্যা মামলা। ঘরের পর ঘর পুরুষশূন্য। বিক্ষোভের সামনের সারিতে থাকা মহিলারাও শিশু, সন্তানদের নিয়ে রাতভর শাঁখ বাজিয়ে, থালা বাজিয়ে সাহস জিইয়ে রাখছেন বিদ্যাধরীর পাড়ে, ছোল কলাগাছিয়ার তীরে।
স্বাধীনোত্তর বাংলায় কে কবে টেলিভিশনের পর্দায়, খবরের কাগজের পাতায় শুনেছেন মহিলাদের এমন নিদারুন বিবরণ?
নিজেদের জমি, হকের টাকা, রেগার টাকা, ভেড়ির লিজের টাকা আদায়ের লড়াই শুধু নয়, লোনা মাটির দেশে নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচানোর শেষ মরিয়া লড়াইয়ে নেমেছে ‘অর্ধেক আকাশ’! সন্দেশখালি এরাজ্যের আস্ত একটা ব্যবস্থা, আস্ত একটা সমাজকেই প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
তবুও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটিবারের জন্যও বলতে পারছেন না যে তৃণমূল অফিসে মধ্যরাতে মহিলাদের নিয়ে এসে এমন ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে চলে না! চলতে পারে না!
নয়টি দ্বীপ বেষ্টিত সন্দেশখালি একটা পচা-গলা, কুৎসিততম শাসনের ছবিকেই প্রতি মুহুর্তে আমাদের সামনে তুলে ধরছে। আপনি নীরব থাকতেই পারেন, কিন্তু ভাবীকাল আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাবে নীরবতার মত ঘৃন্য অপরাধের জবাব চাইতে চাইতে।
                ***
সেদিন ভারী চশমা পড়া বিশিষ্টজন খবরের কাগজের পাতায় ‘নেক্রোফিলিয়া’র ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। নেক্রোফিলিয়া- অর্থাৎ মৃতদেহ নিয়ে যৌন আকর্ষন! সিপিআই(এম) এক তরুণীর মৃতদেহ নিয়ে যৌন আকর্ষণের অসুখে ভুগছে- বলেছিলেন সেই বিশিষ্টজন। একটি বড় কাগজের তৎকালীন ট্যাবলয়েড সংস্করণে বলা হয়েছিল ‘সিপিএম দুদিন ধরে যা করলো তা সামাজিক ভাবে ধর্ষণ’!
কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য? ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩।  মধ্যমগ্রাম কাণ্ড। ট্যাক্সি চালকের কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার বর্বর ঘটনা। বর্ষবরণের রাতে সেদিন শহর কলকাতা জেগেছিল সেই কিশোরীর নিথর দেহ নিয়ে। রাত পেরোতেই সেই লড়াই বদলে যায় মৃতদেহ রক্ষার লড়াইয়ে! কিশোরীর মৃতদেহকেও কার্যত ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। শ্মশানে ফেলে রাখা হয়েছিল ঘন্টার পর ঘন্টা। এগিয়ে আসে সিআইটিইউ সহ বামপন্থী গণসংগঠনগুলি। শেষে সেই নিথর দেহ নিয়েই শহরে মিছিল হয়েছিল।
ধর্ষন, পরবর্তীতে আগুনে পুড়িয়ে মারা কিশোরীর দেহ বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার লড়াইকে ‘নেক্রোফিলিয়া’ বলে কুৎসিত ব্যাঙ্গ করেছিলেন তৃণমূলের তাঁবেদার কট্টর বামবিরোধী বুদ্ধিজীবীরা। 
বিরলের মধ্য বিরলতম অপরাধ- কামদুনি কাণ্ড। ভেড়ির তল্লাটে দলবদ্ধ ধর্ষন, খুনের সেই মামলায় রাজ্য সরকার, পুলিশ, সরকারি আইনজীবীদের ভূমিকা আসলে দলতন্ত্র ও মহিলাদের প্রতি শাসক তৃণমূলের মনোভাবকেই বেআব্রু করেছিল। একটি মামলায় ১৬বার আইনজীবী বদল হয়, প্রথম এক বছরে শুনানি শুরু করা যায়নি। পুলিশ ৬২ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজনের বয়ান নিয়েছিল! কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্ম! পরিণাম ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত একজন সহ চারজন মুক্তি পায় বেমালুম!
আর এখন? সন্দেশখালির রাস্তায় মিছিল করে গৃহবধূরা যাবতীয় সঙ্কোচ, লজ্জাকে সরিয়েই রাতের অন্ধকারে মনোরঞ্জনের জন্য তৃণমূল অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচারের কথা প্রকাশ্যে বলার পরেও ‘আদৌ তা সত্যি কীনা’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সরকার? এদের যদি ‘জননীর জঠরের লজ্জা’ না বলি তাহলে কাকে বলবো?
সরকার একটা পুলিশের দল তৈরি করেছে খতিয়ে দেখতে যে মহিলারা নিজেদের সম্ভ্রম হারানোর মিথ্যা অভিযোগ করছেন কীনা। রাজ্য মহিলা কমিশন আবার এক ধাপ এগিয়ে সন্দেশখালি ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে বলেছে- ‘আমরা সন্দেশখালি যাওয়ার আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে এরকম কাউকে পাইনি। শুনলাম মহিলাদের রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাজ, অন্য কোন ব্যক্তিগত কাজ করানো হতো। তবে শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগ নেই।’ 
মহিলাদের রাতে মিটিংয়ের নামে পার্টির অফিসে তুলে নিয়ে রাতভর শুধু বসিয়ে রাখাটাও কী হেনস্থা নয়? মহিলা কমিশনের মহিলা চেয়ারপার্সন অবলীলায় সাফাই গাইছেন। অথচ তার কিছুক্ষন আগেই ৫১জন মহিলা সাদা কাগজে গোটা ঘটনা লিখে সই করে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন!
মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ। এই বাংলায় সুশীল সমাজ, বিশিষ্টজন, স্বশাসিত সংস্থাগুলিকেও বিনিময়মূল্য দিয়ে পোষ মানানো যায় – এমন ঘটনাকে বাস্তবে প্রমান করে দেওয়ার জন্য।
               ***
সন্দেশখালির ১৩টি নদীতেও এখন কারফিউ! অবরুদ্ধ সন্দেশখালির ভূগোল। প্রতিবাদকে দমানোর সব চেষ্টাই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে করছে সরকার। পারবে? সময় বলবে।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়েছেন শিবু-শাহজাহানদের পাশে। শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে! দিনের পর দিন তৃণমূলের উন্মত্ত বিকৃতকাম বাহিনীর ‘টার্গেটে’ পরিণত হওয়া মহিলাদের পাশে দাঁড়ানো তো দূর অস্ত বরং শাহজাহানের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নামিয়েছেন তিনি।
প্রতিবাদী জননীদের পালটা উত্তর- গত দশ বছর ধরে ভয়ে গুটিয়ে না থেকে এদের যদি আমরা আগে ‘টার্গেট’ করতে পারতাম তাহলে আমাদের শুধু শরীর রক্ষা পেতো না, বাঁচতো সুন্দরবনও। ভয় দেখিয়ে সবার মুখ বন্ধ করিয়ে মধ্যরাতের শাসকরা ধংস করেছে সুন্দরবনের জল জমি জঙ্গল।

Comments :0

Login to leave a comment