STORY — AYANDEEP SEN / NATUNPATA - 10 December

গল্প / নতুন বন্ধু — কর্পূর-হিং ও আমার ঠাকুমার গপ্পো / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY   AYANDEEP SEN  NATUNPATA - 10 December

নতুনপাতা

গল্প

নতুন বন্ধু

কর্পূর-হিং ও আমার ঠাকুমার গপ্পো
অয়নদীপ সেন

 

ঠাকুমা আমার খুব প্রিয়, ঠাকুমা আমায় খুব ভালবাসে, আমার বিভিন্ন আবদার বাবাকে মানিয়ে দেয়।
ঠাকুমা প্রতিদিন নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা ঠাকুরের পূজো করে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি পূজোর সময়ে ঠাকুরকে দেওয়া ফুল-ফল-বাতাসা দেয়, শেষে হাত নাড়িয়ে নাচের ভঙ্গিতে ধূপ-ধুনো দিয়ে আরতি করে। অবশ্য পূজো শেষে এগুলির বেশির ভাগটা আমারই ভাগে জোটে। ঠাকুমার আরতি করার একটা পঞ্চমুখী প্রদীপ, একটা ধুনচি আছে। এতে ধুনোর সাথে  সাদা রঙের গুঁড়ো গুঁড়ো কি সব মেশায়, এতে ছোবড়াগুলি সহজে জ্বলে ওঠে, ধোঁয়া সাদা মিষ্টি হয়। পঞ্চমুখী প্রদীপে সাদা সাদা টুকরো তুলোয় মুড়ে প্রদীপের মত জ্বালায়। বেশি তাপ হয় না, ঠান্ডা মনোরম উত্তাপ। ঠাকুমা সারা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হাতে হাওয়া দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। কি মিষ্টি স্নিগ্ধ সুন্দর সুবাস।


ঠাকুমার পাঁচমুখি প্রদীপ
ঠাকুমার কাছে জানতে চাইলাম এটা কি? ঠাকুমা বলল – এটা কপ্পূর । আসলে এর নাম ‘কর্পূর’। ঠাকুমা এমন অনেক শব্দ একটু অন্য রকম করে বলে। 
ঠাকুমার কাছে জানতে পারলাম এটা ধুনোয় দিলে সহজে আগুন জ্বলে ওঠে, বাতাসে খোলা জায়গায় রাখলে এটা ধীরে ধীরে উড়ে বা উবে যায়। এটা পায়েস, মিষ্টি, পাটি-সাপটায় দিলে সুগন্ধ হয়। জলে দিলে জল পরিশুদ্ধ হয়, স্বাদিষ্ট হয়। 
জেঠু বলে কর্পূরের উড়ে যাওয়ার এই ধর্মকে ‘উদ্‌বায়ী-তা’ বলে। কর্পূর সুদর্শন ছায়াবৃক্ষ। ব্যতিক্রমী পাতার গড়ন, নিশ্ছিদ্র বুনন ও ডালপালার বিন্যাস একবার দেখলেই আপনার মনে থাকবে। প্রায় দুইশ' বছর আগে আদি আবাস চীন, জাপান ও মালয়েশিয়া থেকে ভারতে আসে ।  মাঝারি উচ্চতার গাছ। প্রায় মাটির কাছাকাছি থেকেই ডালপালাগুলো চারপাশে সমান্তরালভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই খানিকটা দূর থেকে গাছটি শনাক্ত করা যায়। পাতা আকারে ছোট, দারুচিনি বা তেজপাতার মতো। ফাল্গুন-চৈত্রে ছোট ছোট সবুজাভ ফুল ফোটে। তারপর জাম-আকৃতির ফল আসে। এ গাছ থেকে কর্পুর হয়। 
কর্পুর স্বাদে তেতো, তবে সুগন্ধি। জল  জীবাণুমুক্ত করা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ সারাইয়ে এর ব্যবহার অতি প্রাচীন। বিশেষ করে জ্বর, প্রদাহ, মানসিক ব্যাধি, হুপিং কাশি, হাঁপানি ইত্যাদিতে। এখন কর্পূরের গন্ধযুক্ত পেস্ট বা দাঁতের মাজনও পাওয়া যাচ্ছে। কর্পূরের গন্ধ তীব্র, রঙ সাদা। বীজ ও কলম থেকে নতুন গাছ হয়। 


কর্পূরের মতোই একই ধরণের আরও একটি ভেষজ ‘হিং’। এটা প্রধানত কচুরি-লুচি-সিঙ্গারা ইত্যাদিতে স্বাদ ও গন্ধের জন্য ব্যবহার করা হয়।  হিং-এর কচুরি বাঙ্গালীদের খাবারে মস্ত জায়গা দখল করে আছে। 
হিং ভালভাবে খাবার হজমে সহায়তা করে। এটা একপ্রকার গাছের রেচন পদার্থ। গাছের গা থেকে গদের  আঠার মত বের হয়ে জমাট বেধে শুকিয়ে থাকে।  এর রঙ হালকা বাদামি। এটা খাবারে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের গরমে জমাট বাধা দানা পুরো মিহি হয়ে খাবারের সাথে মিশে যায় এবং খাবারে অতুলনীয় স্বাদ-গন্ধ যোগ করে ।  হিং সারারাত জলে ভিজিয়ে সকালে সেই জল খেলে পেটের পক্ষে ভাল। 
  বদহজম সারাতে বহু যুগ থেকে হিং ব্যবহার করা হয়। পেটের বিভিন্ন অসুখ সারাতেও এর জুড়ি নেই। সব খাবারে একটু হিং মিশিয়ে নিলে রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়। তাই ডায়বেটিস এর রোগীদের জন্য হিং খুব উপকারী। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে যেমন, শুকনো কাশি, হুপিং কাফ, ব্রঙ্কাইটিস বা বুকে সর্দি কমাতে সাহায্য করে। হিং, মধু এবং আদা একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ঠাকুমার গপ্পো — ঠাকুমার বিজ্ঞান।


 

Comments :0

Login to leave a comment