STORY / chandrayaan — SOURAV DUTTA / NATUNPATA

গল্প — চাঁদের গর্ব – চাঁদের কলঙ্ক / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY  chandrayaan  SOURAV DUTTA  NATUNPATA

গল্প

চাঁদের গর্ব – চাঁদের কলঙ্ক

সৌ র ভ  দ ত্ত


বৃষ্টি কমে গেছে – আগের তুলনায় আকাশ অনেকটা স্বচ্ছ। বাড়ি ফিরছি মাথায় চক্কর কাটছে ইসরোর ড্রিম প্রোজেক্ট চন্দ্রযান-৩ এর ল্যাণ্ডিং এর বিষয়টা। বাড়ি ফিরতে সাড়ে প্রায়  ছটা বেজে গেল। বাড়ির দরজা খুলেই মেয়ে বলল – বাবা যেনো আজ বুম্বাদা-লিপুদা'রা কত বোম ফাটিয়েছে, ঠানডিদের বাড়ি কাঁসর-ঘন্টা বেজেছে। আজ বিক্রম চাঁদে গেছে না! বিক্রম রাঠোরকে চিনতাম। ইণ্ডিয়ার হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলত। প্রচুর সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু সেভাবে সফল হতে পারেননি। ভালো লাগল ইসরোর বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য দেখে। নিঃসন্দেহে কিছুটা গর্বও অনুভব হল। বেশ তো! হাতে চাঁদ পাওয়া গেছে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল চাঁদের সেই অন্ধকার দিকটার কথা। সীমাহীন দারিদ্র্যতা, কু-সংস্কারে ন্যুব্জ আসমুদ্রহিমাচল ভরতবর্ষের ছবি ফুটে উঠল মনের আয়নায়। তৎক্ষণাৎ সমস্ত ভাবনাকে চুরমার করে পাড়ার তিনমাথার মোড় থেকে – জয় শ্রীরাম হল্লাধ্বনি ভেসে এল। রাতের খাওয়া শেষ করে। স্কুলের ব্যাগ থেকে পরীক্ষার খাতাগুলো বের করে রেখে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। জানলার বাইরে গন্ধরাজ গাছের ফাঁকে মিহিন চাঁদের আলো এসে পড়েছে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখি বুড়ো'দা খবরের কাগজ দিয়ে গেছে। কাগজে মাঝের পাতায় গ্রামে গ্রামে মিষ্টিমুখ, লাড্ডু বিনিময় এর ছবি প্রকাশ পেয়েছে। সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে বাঙালি বিজ্ঞানীদের সাফল্যের খবর। খবরের অদ্ভুত সব শিরোনাম। প্রত্যেকেই যে যার মতো করে গোটা প্রোজেক্টটার ফুটেজ পেতে চাইছে। দু-একটা স্কুল আহ্লাদে আটখানা হয়ে রাতারাতি বিজ্ঞান সচেতনতায় চন্দ্রযান-৩ এর বড় বড় ম্যুরাল চিত্র বানিয়েছে।

স্কুলে গিয়ে হল ঘরে প্রার্থনা শেষ করে রোল কলের খাতাটা যেই হাতে নিয়েছি। অমনি দরজার সামনে ক্লাস এইটের এক ছোকরা জিজ্ঞাসা করল – রাকেশ রোশন প্রথম চাঁদে গিয়েছিল স্যার? আমি তো মাইরি! কি বলব ঠিক ভেবে উঠতে পারছি না। খানিকক্ষণ বাকরুদ্ধ থেকে বললাম – বাবা, ওটা রাকেশ শর্মা হবে। সে বলল– না, না কাল রাতে ইউটিউবে দাদা দেখাচ্ছিল ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটা। প্রচুর লোক লাইক-কমেন্ট করেছে। আপনি জানেন না স্যার – অভিনেতা ঋত্বিক রোশনের বাপ্ রাকেশ রোশনই প্রথম চাঁদে গেছিল। মাথায় ইয়া বড় টাক আছে লোকটার – আরে সবজান্তা দিদিমণি বলেছেন।

ছাত্রটির কথা শুনে আমি তো পুরো হতভম্ব। ভাবছি কে চাঁদের গর্ব – কে চাঁদের কলঙ্ক! হায় রে: চন্দ্রযান-৩! হায়রে বিক্রম! …এ যে একেবারে তুঘলকি ভারতবর্ষ !…এইসব ভ্রান্তিবিলাস দেখতে দেখতে…আমার সাথে খলখল করে যেন গোটা ক্লাস হাসছে …গোটা দেশ হাসছে …ক্লাসের রবীন্দ্রনাথ - গান্ধী - নেতাজীর ছবি গুলি মনে হল কেঁপে উঠল!


 

Comments :0

Login to leave a comment