Panchayat vote

লুটতন্ত্রের অবসান শুরু হবে পঞ্চায়েত উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে

কলকাতা

 গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ তৃণমূল-বিজেপি’কে হটিয়ে পঞ্চায়েত উদ্ধারের মধ্য দিয়েই শুরু হবে। বৃহস্পতিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পরেই সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা জানিয়ে বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার যেভাবে চেয়ারে বসেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণা করেছেন, সেভাবেই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে মানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করুক। নইলে মানুষের মেজাজ বুঝে নিন, মানুষকে যদি নিজেদের ভোটাধিকার রক্ষার দায়িত্ব নিতে হয় তাহলে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তার দায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকারেরই হবে। 
   সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দুদিনব্যাপী বৈঠক বৃহস্পতিবারই শেষ হয়েছে। এদিন বিকালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার আগেই সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে মহম্মদ সেলিম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী ১৫জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশন অফিসে অভিযান করা হবে অবিলম্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণার দাবিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যায়। সেলিম তারপরে সাংবাদিকদের বলেছেন, সংবিধানের ২৪৩ ধারা অনুযায়ী পঞ্চায়েত ভোট করাটা বাধ্যতামূলকই ছিল। নির্বাচন ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। যেহেতু ১৫ জুন মনোনয়ন জমার শেষ দিন, সেই জন্য এলাকায় এলাকায় আমাদের পার্টিকর্মীদের থাকতে হবে, তাই সেদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে কোনও জমায়েত হবে না। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে কমিশনে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হতে পারে। আমাদের দাবি আজ থেকেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থী ও প্রচারকারীদের নিরাপত্তা এবং ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা চাই। এগুলি অবাধ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত। পঞ্চায়েত ভোটের তারিখ পেয়েছি, কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা থেকে পঞ্চায়েতের ফল ঘোষণা পর্যন্ত কমিশনের সজাগ সতর্ক তৎপরতা দাবি করছি। উনি (রাজীব সিনহা) এর আগে মুখ্যসচিব ছিলেন, উনি ভালোই জানেন কীভাবে শাসকদল পুলিশ ও গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এর আগে গণতন্ত্র নিধন করেছে। মুখ্যসচিব হিসাবে যা করতে পারেননি এবার সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্য সরকারের তাঁবেদার না হয়ে সেই কাজ করে দেখান।
  সঠিক ভোটার তালিকা অনুযায়ী সব ভোটারদের ভোটাধিকার রক্ষা সহ সেলিম দাবি করেছেন, শাসকদলের ইচ্ছামতো বুথ ও কাউন্টিং সেন্টার যেন সরানো না হয়। এর আগে আমরা মনোনয়নে বাধা দিতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের মহিলাদের চুলের মুঠি ধরে মারতে দেখেছি, মিথ্যা মামলায় পুলিশের গ্রেপ্তারি দেখেছি, সন্ত্রাসে প্রার্থীদের পালিয়ে বেড়াতে দেখেছি, ভোটকর্মী শিক্ষক রাজকুমার রায়কে খুন হতে দেখেছি। এক দফায় ভোট হোক, আর চোদ্দ দফায় ভোট হোক, এসব ঘটনা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কমিশনের।
জেলায় জেলায় সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট কর্মীদের উদ্দেশে সেলিম বলেছেন, এখনই পঞ্চায়েতের তিন স্তরের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে, দেওয়াল লিখন করে, প্রচার শুরু করে নির্বাচনের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তৃণমূলের আর আগের অবস্থা নেই, তাদের খুঁটি নড়বড় করছে। নিজের ভোট নিজে দেওয়াটা মানুষের অধিকার, মানুষকেই সেই অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে, সিপিআই(এম) মানুষের পাশে থাকবে। তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসুন। মানবাধিকার রক্ষায়, গণতন্ত্র রক্ষায়, ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইতে আমরা মাঠে আছি, সবাই মাঠে নামুন। পঞ্চায়েত নির্বাচনেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে লুটতন্ত্রের অবসান শুরু হবে। 
সেলিম জানিয়েছেন, পার্টির রাজ্য কমিটির দুদিনব্যাপী বৈঠকে গত দু’মাসের পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়েছে, রোজগারহীন মানুষ কোন যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তা আলোচিত হয়েছে। এরাজ্যে কাজ না পেয়ে ট্রেনের সাধারণ কামরায় গাদাগাদি করে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়ানক দুর্ঘটনায় তাঁদের প্রাণহানিতে সেটাই আবার দেখা গেল। মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী উবে কোথায় গেল? এরাজ্যের ছেলেমেয়েরা জন্মেছে কি অন্য রাজ্যে যেতে গিয়ে কিংবা অন্য রাজ্যে গিয়ে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বুলডোজার রাজনীতিতে প্রাণ দেওয়ার জন্য? 
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে নিহতদের সম্পর্কে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, রাজ্যে ও কেন্দ্রে কেমন সরকার চলছে যারা গরিব পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন সম্পর্কে খবর রাখে না? সব সময় বলে আধার চাই, প্যান চাই। এখন স্টেশনগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সব নিহতদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করুক। আমাদের রেড ভলান্টিয়াররা নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে রয়েছে। আমরা দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও সবার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। 
রাজ্যজুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সই সংগ্রহ অভিযানে মানুষের ব্যাপক সাড়ার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, ইতিমধ্যেই এক কোটির বেশি সই সংগৃহীত হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসে সই দিতে চাইছেন তাতে আমরা সই সংগ্রহের কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে, আর কারা কোটি কোটি টাকার উকিল লাগিয়ে কিংবা আম পাঠিয়ে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে জনগণ সেটা দেখছেন। ভাইপোর বউ বিজয় মালিয়াদের মতো চুপিসারে পালানোর চেষ্টা করছেন। মানুষের মায়ামমতা পাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ওঁকে বাচ্চা মেয়ে বলে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। বারো বছর আগে দিল্লির বিলাসবহুল হোটেলে যখন বিয়ে হয়েছিল তখন কি বাল্যবিবাহ হয়েছিল ? মা থাইল্যান্ডে, তাঁকে দেখতে দুবাইতে যাচ্ছিলেন?  মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত সবার শাস্তি চাইছে, আর অপেক্ষায় তাঁরা রাজি নন। 
এদিকে নির্মাণ কর্মীদের কল্যাণের জন্য আদায়ীকৃত সেসের টাকা অন্যখাতে খরচ করে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, আমার সরকারের টাকা, আমি যেভাবে খুশি খরচ করব। মহম্মদ সেলিম এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, টাকা জনগণের, টাকা কারো বাপের নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, বিড়ি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য আদায়ীকৃত সেস’এর টাকা সরকারের তহবিলে ঢোকানো বেআইনি। সেসের টাকা শ্রমিকদের ঘর, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে খরচের গাইডলাইন আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও এসব মানছেন না, মুখ্যমন্ত্রীও মানছেন না।
 

Comments :0

Login to leave a comment