General elections 2024

ভাঁড় ধরিয়ে ভাণ্ডার লুটছে তৃণমূল, দেশ লুটছে বিজেপি

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

  রাজ্যের মানুষকে হাতে ভাঁড় ধরিয়ে ভাণ্ডার লুট করেছে তৃণমূল, আর দেশ লুটছে বিজেপি। সোমবার হাওড়া ও উলুবেড়িয়াতে নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সরকারি প্রকল্পের সামান্য টাকা দেওয়ার আড়ালে তৃণমূল কীভাবে মানুষের সম্পদ লুটেছে তার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, রাজ্যের মানুষ যখন দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন তখন মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা প্রচার করছেন। এটাকে ভাণ্ডার বলে না, এটা ভাঁড়, চুরি দুর্নীতি করে লুটের ভাণ্ডার তৈরি করেছে তৃণমূল, পার্থ চ্যাটার্জির বাড়িতে টাকার পাহাড়ে সেই ভাণ্ডারের নমুনা দেখা গেছে। 
একইভাবে সারা দেশে বিজেপি’র লুটের উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, মোদী তার কর্পোরেট বন্ধুদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিয়েছেন, বদলে বিজেপি’র ভাণ্ডারে টাকা ঢুকেছে নির্বাচনী বন্ডের নামে। আর জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। কিন্তু বিজেপি এবং তৃণমূলের এই ভণ্ডামি মানুষ ধরে ফেলেছে। এরাজ্যের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না, মানুষ প্রতিবাদে একজোট হয়ে এগিয়ে আসছেন। ধর্মের নামে মানুষকে ভাগাভাগি করে বিজেপি তৃণমূল আর টিকতে পারবে না।
সোমবার হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জি ও উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী আজাহার মল্লিকের সমর্থনে প্রচার কর্মসূচিতে অংশ নেন মহম্মদ সেলিম। এদিন সকালে হাওড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জির সমর্থনে সাঁকরাইল চাঁপাতলা থেকে মানিকপুর পর্যন্ত একটি সুসজ্জিত পদযাত্রায় সহস্রাধিক মানুষের সঙ্গে পা মেলান মহম্মদ সেলিম। পদযাত্রায় এছাড়াও অংশ নেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জি ও জাতীয় কংগ্রেসের নেতা পলাশ ভান্ডারী। সব্যসাচী চ্যাটার্জির সমর্থনে এদিন রাতে দক্ষিণ হাওড়ার উনসানী ও পাঁচ পাড়ার দু’টি জনসভায় ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম, দিলীপ ঘোষ ও সব্যসাচী চ্যাটার্জি। এদিনই বিকেলে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট সমর্থিত জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী আজাহার মল্লিকের সমর্থনে বাগনান গদি ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম, দিলীপ ঘোষ, সিপিআই(এম) নেতা পরেশ পাল, সাবিরউদ্দিন মোল্লা, সিপিআই নেতা বিদ্যুৎ গাঙ্গুলি, কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, প্রার্থী আজাহার মল্লিক।
মহম্মদ সেলিম বলেন, বিজেপি দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে চায়। ইতিমধ্যে বিজেপি’র কথা থেকে স্পষ্ট যে এবারের নির্বাচনে মোদী জিতে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারলে দেশে আর সংসদীয় গণতন্ত্র থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলও একই কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। রাজ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের এই দুই সরকারই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়। দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র রক্ষায় বিজেপি’কে পরাস্ত করতে বাম কংগ্রেস সহ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র ভাইপো’কে বাঁচানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী তার থেকে ছিটকে দূরে গিয়েছেন। জেলযাত্রা ঠেকাতে দিল্লি আর নাগপুরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 
সেলিম বলেন, আমাদের রাজ্যে কার্পেট বিছিয়ে বিজেপি-কে নিয়ে এসেছে তৃণমূল। বিজেপি-র যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। বিজেপি-র তরফ থেকে সংসদে সিএএ, এনআরসি সহ দেশ বিরোধী সমস্ত বিল যখন পাশ করানো হয়েছে তখন তৃণমূল বিল পাশের রাস্তা সহজ করে দিয়েছিল। বিজেপি’র সমস্ত অ্যাজেন্ডা আমাদের রাজ্যে প্রয়োগ করেছে তৃণমূল, যাতে মানুষকে ভাগাভাগি করে বিজেপি সুবিধা নিতে পারে। অন্যদিকে লুটের ভাণ্ডার গড়লেও মোদী সরকারের সিবিআই ইডি তৃণমূলের মাথাদের ছোঁয়নি। কেজরিওয়াল চিদাম্বরমদের জন্য যারা লাফালাফি করতে পারে, তৃণমূলের বেলা তাদের সেটিং হয়ে গেছে। 
কিন্তু এই ভাঁওতার রাজনীতিতে তৃণমূল বিজেপি’র রাজনৈতিক মেরুকরণকে মানুষ ধরে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, আমাদের রাজ্যে নতুন করে মানুষ জাগছে। বামপন্থীদের সমর্থনে আরও বেশি করে এগিয়ে আসছেন মানুষ। সাধারণ মানুষ একজোট হয়ে বামপন্থীদের হয়ে লড়াই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন, এখন নির্বাচনেও এগিয়ে আসছেন। চার দফার ভোটগ্রহণে তৃণমূল বিজেপি’র দফারফা হয়ে গেছে। পরের দফাগুলিতেও তাই হবে। তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে ভোটের আগে দাঙ্গার আগুন জ্বালাতে চেয়েছিল বিজেপি ও তৃণমূল। দুই দলের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মানুষ। 
সেলিম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রতিদিন বাড়ছে, কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের মানুষের জীবন জীবিকার সুযোগ ধংস হয়ে যাচ্ছে। তাই লুটেরাদের হাত থেকে দেশ ও রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। মানুষের হকের কথা, রুটিরুজির কথা সংসদে বলার জন্য বামফ্রন্ট প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জি ও জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী আজাহার মল্লিককে জয়ী করে সংসদে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন তিনি। 
-----------
ক্যাপশন- আমতা বিধানসভার গদি ফুটবল মাঠে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম। মঞ্চে আছেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আনিস খানের বাবা সালেম খান। ছবি- মণিরুল হক
 

Comments :0

Login to leave a comment