Salim slams Mamata Banerjee

মমতাই দুর্নীতির শিরোমণি: সেলিম

কলকাতা

 

মুখ্যমন্ত্রী কেন দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি? সবটাই তো তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বে ঘটেছে, তাঁর নজরদারির মধ্যেই এইসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। তিনিও দোষী। তিনি কার উপরে দোষ দিচ্ছেন? উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটা দুর্নীতিতন্ত্র চলছে। মমতা ব্যানার্জি তার শিরোমণি। বললেন মহম্মদ সেলিম। রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার দশ বছর খাদ্যমন্ত্রী থাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। সেই তল্লাশি চলাকালীন সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ইডিকে আক্রমণ করেন। এই প্রসঙ্গেই এদিন দিল্লিতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সিপিআই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই কথা বলেন। 
সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতেই পারেন, কিন্তু দুর্নীতি হয়েছে এবং তাঁর মন্ত্রী যুক্ত। সেলিম এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তূলেছেন। তিনি বলেন, যখনই আমরা একটু হই চই করি, বিক্ষোভ দেখাই তখন সিবিআই, ইডি মন্ত্রীর কাছে যায়। কেন দুর্নীতিগ্রস্তদের ধরছে না সিবিআই, ইডি? তারা কেন রেশনের এই বিপুল দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেয়নি? উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতির র‌্যাকেট। এটা একটা দুর্নীতি তন্ত্র। মমতা ব্যানার্জিই এর শিরোমণি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে? তার ক্ষমতা হয় কী করে? এমনও খবর আছে একজন আইএএস অফিসার তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন বলে তাঁকে কোণঠাসা করা হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি এদিন বলেন, ‘বালুর অনেক সুগার। ও যদি মারা যায়, তাহলে ইডি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াত তৃণমূল নেতা সুলতান আহমেদ, সাংসদ প্রসূন ভট্টাচার্যের স্ত্রীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ইডি’র নোটিশের জেরেই এই মৃত্যু বলে তিনি বলেন। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ভাইপোকে বাঁচাতে তিনি এখন অন্যদের বলির পাঁঠা করছেন। সেই কারণেই তিনি আগে থাকতে গেয়ে রাখছেন, যাতে তাঁকে কেউ সন্দেহ না করে। 
সেলিম বলেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা বরাবর বলে এসেছি বিজেপি সিবিআই, ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। শুভেন্দু অধিকারিকে নেতা বানিয়েছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। নারদায়, চিট ফান্ডের ঘটনায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আশ্রয় নিতে গেছেন বিজেপি’তে। বিজেপি ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করে দুর্নীতিগ্রস্তদের দলে টানছে। মমতা ব্যানার্জিও রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি প্রমুখকে ব্যবহার করছেন যাতে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা না নেয়। সিআইডি’র ভয় দেখিয়ে বিজেপি’র এক সাংসদকে দলে টেনে মন্ত্রী করেছেন মমতা ব্যানার্জি। ফলে দুটোই চোর। দুই দলই দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে আছে। কেউ কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। এই বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি আর অমিত শাহের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। দুই জনেই দলের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষা করছেন। 
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সেলিম এদিন বলেন, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যা করছেন তা নিন্দনীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা দর্শন নিয়ে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিজেপি রবীন্দ্রভবনকে ধ্বংস করছে। আরএসএসের পৃষ্ঠপোষকতায় কেন্দ্রের নির্দেশে এইসব কাজ করছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। সেলিম বলেন, ফলকে যেভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম দেওয়া হয়েছে সেই একইরকম কাজ মমতা ব্যানার্জিও করেছেন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে। রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মুখ্যমন্ত্রীই অধ্যক্ষ হতে চান। তাঁর নিয়োজিত উপাচার্যকে দু্নীতির ঘটনায় জেলে যেতে হয়েছে। ভগৎ সিং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, বিবেকানন্দ সকলের ছবি সরিয়ে তাঁর জায়গায় মমতা ব্যানার্জির ছবি লাগানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে একইভাবে সর্বত্র মোদীর ছবি। মোদী আর মমতার মানসিক কাঠামো তো একই জায়গা থেকে তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। মোদীর জন্য ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়নি শান্তিনিকেতন। বহু বছরের কাজ আছে এর পিছনে। মোদী মনে করেন সবকিছু হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে। আর মমতা ব্যানার্জি মনে করেন রাজ্যে সবকিছু হয়েছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে। লড়াই চলছে কার ছবি সেখানে থাকবে, তা নিয়ে। আমরা চাই দুটো ফটোই ছুঁড়ে ফেলা হোক।

 

Comments :0

Login to leave a comment