মুক্তধারা
গল্প
তর্পণ
মৃদুল পাল
হিল্লোল আজ কোলকাতায় আসছে,অকলেন্ড থেকে,দুদিনের জন্য।তার ফ্লাইট এখনো মধ্য গগণে।ভোরবেলার জন্য যতটুকু আলোর দরকার ঠিক ততটুকুই আলো ধার দিয়েছে সূর্য,পৃথিবীকে।
ফ্ল্যাটবাসী কাকাকাবু এবং কাকিমা ছেলের অভ্যর্থনার জন্য সারারাত জেগে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।কাকিমা লাবন বানাচ্ছে।গেসের আগুণে বসানো কড়াইতে তপ্ত গুড়ের ঝোলে খইর গুড়ো ঢেলে দিয়ে,কাকিমা খন্তি দিয়ে পুরো প্রকরণটাকে হালকা হাতে নেড়ে নেয়।কাকাকাবু হিল্লোলের রুমের আগোছানো বই পত্র,জামা কাপড় গুলোকে এক এক করে গুছিয়ে রাখে।সব কিছুর ওপর ধুলোর আচ্ছাদন।কাকাবাবু একটি শুকনো গামছা দিয়ে ধুলোবালি পরিষ্কার করছে।
প্রাতঃভ্রমণকারীরা রাস্তায় বেড়িয়ে পরেছে।একজন সাদা ধুতি এবং সেন্ডো গেন্জি পরিধিত ভদ্রলোক কলাগাছের খোলে কিছু খাবার সাজিয়ে একটি প্রাপ্তবয়স্ক বটগাছের নীচে রেখে দেয়।তার আরেক হাতে ছিলো জলের মৃন্ময় পাত্র।জলের পাত্রটিও সে খোলের পাশেই রেখে ভূমিস্পর্শ করে নমষ্কার দেয়।তার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে অনুচ্চ কন্ঠে মন্ত্রোচ্চারণ করতে থাকে।একটি কাক টুকটুক করে খোলের পাশে এসে ঠোকর মেরে খাবার খেতে থাকে।
একটি হলুদ টেক্সি পোদ্দার কলোনির সামনে এসে দাঁড়ায়।টেক্সি থেকে হিল্লোল নেমে আসে।গাড়ির আওয়াজ শুনে তিনতলার বন্ধ জানলার পর্দার ফাঁক দিয়ে হিল্লোলের মা বাবা দুজনেই রাস্তার পানে উকি মারেন।
:হিমু এসে গেছে,চল,চল,আমরা যাই।-একে অপরকে বললো।
হিল্লোল ট্র'লি বেগ হাতে নিয়ে লিফ্টে চড়ে ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ায়।নীচের সিঁড়িতে দুটো কালো রঙের বেড়াল আগন্তকের দিকে তাকিয়ে আছে।হিল্লোল বুক পকেট থেকে একটি চাবি বের করে দর্জা খুলে ফ্ল্যাটের ভেতর ঢুকে।অনেক দিন ধরে দর্জা জানলা বন্ধ থাকায়,ফ্ল্যাটের ভেতরটা সেঁদিয়ে উঠেছে, গোমা গোমা একটি গন্ধ হিল্লোলের নাকে লাগে।মেঝে ধুলো বালি ছড়িয়ে রয়েছে,হিল্লোলের বুটজোতার ঘর্ষণে কড়মড় করে শব্দ হয়।সে সুইসবোর্ডের সুইসগুলো এক এক করে অন করে সমগ্র ঘরেই আলোর অবারিত সঞ্চার করে।কিয়ৎ সেকেন্ডের মধ্যেই সমগ্র ঘর আলোকময় হয়ে উঠে।ফ্ল্যাটের ঈষাণ কোনে একটি স্বর্ণাংগী ফ্রেমে বাঁধানো রয়েছে কাকাবাবু এবং কাকিমার স্থির চিত্রকল্প।ছবিটা স্থির,কিন্ত ছবির ভেতরের চরিত্র দুটো মনে হয় ছেলেকে ছুঁয়ে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।ফটোর গ্লাসের প্রতিবিম্বে হিল্লোলকে ফটোর দিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।হিল্লোল ফটোর সামনে থাকা একটি পিতলের ঘট(যার মুখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা) তুলে, তড়তড়িয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে বেড়িয়ে যায়,বাবুঘাটের উদ্দেশ্যে।
ফ্ল্যাটের নীচে হলুদ টেক্সিটি দাঁড়িয়ে ছিলো।টেক্সির ভেতর থেকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে 'যা চন্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্য দলনী...' শুনা যায়।
Comments :0