মুক্তধারা
গল্প
রোদ্দুর
নির্মলেন্দু শাখারু
ছেলেটির নাম রোদ্দুর।মা-বাবার দেয়া নাম। অনেক প্রচলিত নাম থাকতে কেন যে এই নাম তাঁরা দিল, ছেলেটিও বলতে পারে না। তার বাবা-মা বেঁচে থাকলে হয়তো জানা যেত। দুর্ভাগ্য, তাঁরা তো আজ নেই । রোদ্দুর যখন খুব ছোটো তখন থেকেই সে বাপ-মা হারা। তাই তার পক্ষে এসব বলা সম্ভব নয় ।
তবে বয়স্কদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, রোদ্দুর যখন জন্মেছিল সেই সময় নাকি ঝলমলে রোদ্দুরে পরিবেশ ছিল। তাই তার এই নাম।অবশ্য এসব অনুমান ভিত্তিক। সঠিক করে কেউ কিছু বলতে পারে না। তবে যে যাই বলুক, রোদ্দুর ছেলেটি আসলে রোদের মতোই ঝলমলে ও
প্রাণচঞ্চল! পাড়ার কোনো কাজে কিংবা কারুর আপদে -বিপদে সে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আবার কখনো সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রোদ্দুর রোদ গায়ে মেখে বনবাদাড়ে ছুটে বেড়ায়। গাছে গাছে দোল খায়।সে সব ছেড়ে কখনো নদীর জলে চলে জলকেলি, লাফাংঝাফাং ইত্যাদি। বিকেলে সটান খেলার মাঠে। চলাফেরার বিরাম নেই। পায়ে যেন তার চরকি লাগানোই থাকে। সত্যি পারে
রোদ্দুর!
ওদিকে প্রকৃতির রোদ্দুর আঁধার ঠেলে জীবনকে আলোকিত করে।যে রোদ্দুরে ঘাম ঝরে, সেই রোদ্দুরই তো মায়াময় হয়ে একটা নতুন দিন, একটা নতুন জীবন, নতুন করে বেঁচে থাকার ঘোষণা করে। এই রোদ্দরই প্রতিদিন নিশিশেষে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।তার স্পর্শে সবুজ আরও সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের রোদ্দুরের ঘরের জানলা দিয়ে এই কচি রোদ আসে রোজ রোজ।যেন সে তার মরমী সই। তখন রোদ্দুর তার মনের কথা বলতে চাই রোদের কাছে।তার যত কষ্ট ঢেলে দেয় রোদের কাছে। রোদ বুঝি শোনে তার মনের কথা!
আবার শরৎ এলেই এই সোনালি রোদ পুজো পুজো গন্ধ আনে। আমাদের ছোট্ট রোদ্দুরও সাথ দেয় তার সাথে। শীতের মিষ্টি রোদ পৌষের পিঠে খাওয়ার আমেজ আনে।এও উপভোগ করে সে। সত্যি রোদের কী অপার মহিমা! তার এই কীর্তি অবাক চোখে চেয়ে দেখে আমাদের ঘরের রোদ্দুর।
Comments :0