Manipur violence Supreme Court

মণিপুর-রায় স্থগিত রেখে হুঁশিয়ারি সুপ্রিম কোর্টের

জাতীয়

Manipur violence Supreme Court

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি

মেইথেইদের জনজাতি মর্যাদা দিতে মণিপুর হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার স্থগিতাদেশ জারি করলো সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, ‘বাস্তবিকভাবে ভুল’ আদেশের কারণে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মেইথেইদের জনজাতির মর্যাদা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। প্রায় পনেরো দিন জাতি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। এপর্যন্ত ৭০ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া।

এই অবস্থায় মণিপুরের তিনটি সংগঠনের জনস্বার্থ আবেদনের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিনজনের বেঞ্চ গঠন করে জরুরি ভিত্তিতে শুনানি গ্রহণ করে শীর্ষ আদালত। গত ৮ মে প্রথম শুনানি হয়। এদিন দ্বিতীয় শুনানির পরে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় হাইকোর্টের নির্দেশকে ‘বাস্তবিকভাবে ভুল’ আখ্যা দেন। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, সাংবিধানিক বেঞ্চের পরিপন্থী রায় দেওয়ার কারণে মণিপুর হাইকোর্টের বিচারপতি এমভি মুরলিধরনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন প্রধান বিচারপতি।
এদিন হাইকোর্টের আদেশের কড়া সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা বিচারপতি মুরলিধরনকে তাঁর ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান বিচারপতি কড়া ভাষায় বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতিরা যদি সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় না মানেন, তাহলে আমাদের কী করা উচিত, তা খুবই পরিষ্কার।

জাতি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুরের পীড়িত মানুষকে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, সে বিষয়ে আদালতকে সর্বশেষ তথ্য জানাতে সলিসিটর জেনারেলকে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান, রাজ্যে ৩১৫ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ৪৭ হাজার ৯১৪ জন মানুষকে উদ্ধার করে  আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। শিবিরে খাবার, পানীয় জল, ওষুধ ও নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিবির তদারকির দায়িত্বে ডিএম, এডিএম সহ রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকরা রয়েছেন। ত্রাণের জন্য রাজ্য সরকার ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়া বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে ২৫ শতাংশ ত্রাণের কাজে ব্যয় করা হবে। ভিনরাজ্যের তিন হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিমানে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক হিংসায় ৬২৬ টি মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন রাজ্যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি বলে আদালতকে জানান মেহতা।

আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী কলিন গনসালভেস বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও হত্যাকাণ্ড চলছে। এখনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা রাজ্যে রয়েছে। তবে তাদের বিশেষ এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে না। গনসালভেস বলেন, রাজ্য পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। পুলিশের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন জনজাতি মানুষ। আরেক আইনজীবী নিজাম পাশা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি  টুইটার হ্যান্ডেল থেকে উসকানি দিয়ে অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কুকি জনজাতি গোষ্ঠী ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছেন। এতে উৎসাহিত হয়ে হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এই সংক্রান্ত প্রমাণ আদালতে তুলে ধরেন পাশা।

প্রবীণ আইনজীবী রঞ্জিত কুমার বলেন, বার্মা থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। এরা রাজ্যে আফিম চাষ করছে ও উগ্রপন্থী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। সব পক্ষের মতামত শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের বিষয়। মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। ত্রাণ ও পুনর্বাসন খুবই গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। আগামী ৬ জুন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, মেইথেইদের জনজাতির মর্যাদা দিতে এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে গত ২৭ মার্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় মণিপুর হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায় ১৯ এপ্রিল ওয়েবসাইটে প্রকাশ হতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজ্য। রাজ্যের জনজাতি মানুষ এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এই প্রতিবাদের অংশ হিসাবে গত ৩ মে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জনজাতি সংহতি মিছিল হয়। এই মিছিলের পরই হিংসা ছড়ায়। এখনও ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া। পাশের রাজ্য মিজোরামে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, অশান্ত পরিবেশ থেকে ফায়দা তুলতে আগুনে ঘি ঢালছে রাজ্যের বিজেপি সরকার।  জাতি-উপজাতির মধ্যে স্থায়ী বিরোধ তৈরি করে বিভেদের রাজনীতি চাঙ্গা করতে উসকানি দিচ্ছে শাসকদল। একদিকে, জনজাতিদের জন্য পৃথক প্রশাসনের দাবিতে বিজেপি তাদের জনজাতি বিধায়কদের রাস্তায় নামিয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যে এনআরসি’র দাবিতে বিজেপি ঘনিষ্ঠ  মেইথেইদের একাধিক সংগঠনকে পথে নামিয়েছে শাসকদল।  

Comments :0

Login to leave a comment