কাশ্মীরে ফের সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত ২ সেনা জওয়ান। প্রাণ গেছে সেনাবাহিনীর দুই মালবাহকের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বারামুলার জেলার বোটাপাথরিতে ১৮ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের বাহিনীর গাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীরা। ঘটনায় আরও ৪ জন সেনা জওয়ান জখম হয়েছেন। এদিন সকালেই পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদীরা বহির্রাজ্যের এক শ্রমিককে গুলি করে। জখম হয়ে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। অন্যদিকে, শ্রীনগরের গণবাগ থেকে এদিন সকালেই এক যুবকের দেহ মিলেছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা মহম্মদ জাহুদ বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২০ অক্টোবরই গাণ্ডেরবালে সন্ত্রাসবাদী হামলায় এক চিকিৎসক এবং ৬ জন শ্রমিককে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদীরা। তার দুই দিন আগে সোপিয়ানে আরও এক জনকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে কাশ্মীরে ১২ জন নিহত হলেন সন্ত্রাসবাদী হামলায়।
মোদী-শাহের চোখে ‘স্বাভাবিক’ জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের অতি প্রিয় গুলমার্গের কাছে নাগিন এলাকায় যেখানে সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালায় তা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে। এখানে নাগরিকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে। সাধারণভাবে এই এলাকায় সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা নেই বলেই প্রশাসনিক ও গোয়েন্দা বিভাগের হিসাব। সেই এলাকায় এইরকম হামলা অপ্রত্যাশিত বলে নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে। যেভাবে জম্মুতে নতুন নতুন এলাকায় উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়েছে, এটাকেও তেমনভাবেই দেখা হচ্ছে। তিন জন সন্ত্রাসবাদী হামলায় যুক্ত বলে জানা গেছে। জখমদের সঙ্কটজনক অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীনগরের ৯২ বেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই দুই সেনা জওয়ান, এক জন মালবাহকের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলেই এক মালবাহকের মৃত্যু হয়েছিল। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলওয়ামার বাতগুন্দ ত্রাল এলাকায় উগ্রপন্থীদের গুলিতে জখম হন এক পরিযায়ী শ্রমিক প্রীতম সিং। তিনি উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। সেনাবাহিনীতে মালবাহকের কাজ করতেন। এই নিয়ে এক সপ্তাহে তিন বার শ্রমিকদের উপর হামলা হলো। শেষ তিন দিনে দু’বার হামলা চললো সেনা কনভয়ে। সেনাবাহিনী চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে এক বিবৃতি দিয়ে এদিন বলেছে, বুটাপাথারিতে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে গুলির লড়াই হয় জওয়ানদের। প্রথমে এদিন সন্ধ্যায় উগ্রপন্থীরা সেনা কনভয়ে হামলা চালায়। পরে শুরু হয় গুলি বিনিময়। সেনা সূত্রের খবর, তিন সন্ত্রাসবাদী নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে বুটা পাথারিতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করে বলেছেন, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা আচমকা বেড়ে গেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। নিহতদের পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, সেনা কনভয়ে হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত এবং গভীরভাবে ব্যাথিত। মালবাহক সাধারণ নাগরিকেরও মৃত্যু হয়েছে। কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন তিনি।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের জয় এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই উগ্রপন্থী হামলা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। রাজ্যের মর্যাদার দাবি যখন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে এবং তা নিয়ে ওমর দিল্লিতে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তখন পরপর হামলা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। এদিনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আবদুল্লা শপথ নেওয়ার পর প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই রাজ্যের মর্যাদা ফেরাতে কেন্দ্রের কাছে আরজির প্রশ্নে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ গত পাঁচ বছরে এবং বিধানসভা ভোটের প্রচারেও লাগাতার দাবি করেছেন, কাশ্মীর সন্তাসবাদ মুক্ত হয়ে গিয়েছে। যখন ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে বিশেষ মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন থেকেই টানা এই দাবি শুনে আসছে জম্মু-কাশ্মীর সহ গোটা দেশ। কিন্তু বাস্তবে রক্ত ঝরা বন্ধ হয়নি। সেনা জওয়ানদের সঙ্গেই পরিযায়ী শ্রমিকরাও ফের নিশানা হয়ে উঠেছেন। গত রবিবারই গাণ্ডেরবালে শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়কের উপর উগ্রপন্থী হামলায় এক চিকিৎসক এবং ছ’জন শ্রমিক প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে চার জন শ্রমিক ছিলেন পরিযায়ী। এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই আরেক পরিযায়ী শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয় সোপিয়ানে। তিনি বিহার থেকে এসেছিলেন রোজগারের তাগিদে।
Terrorist Attack Kashmir
ফের সন্ত্রাসবাদী হামলা কাশ্মীরে, জওয়ানদের সঙ্গে হত ২ মালবাহক
×
Comments :0