Patashpur Rape and Murder

মুখ বন্ধ রাখতে চাপ পুলিশের, পটাশপুরেও ক্ষোভ পরিবারের

রাজ্য জেলা

নির্যাতিতা মহিলার বাড়িতে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল।

কিশোর নাগ: পটাশপুর

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের গ্রামে মহিলাকে ধর্ষণ করে মুখে কীটনাশক ঢেলে হত্যার পর আটচল্লিশ ঘন্টা অতিক্রান্ত। পুলিশই রটিয়েছে যে মূল অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে গ্রামবাসীদের প্রহারে। কিন্তু বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেনি। 
পরিবারের অভিযোগ, মুখ না খুলতে চাপ দিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু প্রকৃত ময়নাতদন্তের দাবিতে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে পরিবার।
এদিন বিকালে পটাশপুর থানায় মিছিল ও বিক্ষোভ অবস্থান সহ ডেপুটেশন দেয় বামফ্রন্ট। দোষীদের আড়াল না করে প্রকৃত তদন্ত করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়। বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা সোমবার নির্যাতিত নিহত মহিলার পরিবার সঙ্গে কথা বলেন। 
বামফ্রন্ট প্রতিনিধিদের কাছে পুলিশ ও প্রশাসনের সম্পর্কে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবার ও গ্রামবাসীরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা লেখা হয়েছে জেনে রাগে ক্ষোভে ফুঁসছেন মৃতার পরিবার পরিজন এবং গ্রামবাসীরা। 
পরিবার জানিয়ে দিয়েছে যতই চাপ দিক প্রশাসন, দেহ নেওয়া হবে না। প্রকৃত ময়নাতদন্তের আর্জি জানিয়ে পরিবার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডেও নির্যাতিতার পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে সরব। টাকা দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে সরাসরি। বামফ্রন্টের ১২ সদস্যের  প্রতিনিধিদল পটাশপুরের গ্রামে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই মহিলার মেয়ে ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা সুব্রত পন্ডা, কালিপদ মহাপাত্র, আশিস শী, সুশীল দে, সিপিআই নেতা সৈকত গিরি, আরএসপি নেতা মন্টু দাস মহাপাত্র প্রমুখ। 
পরিবারের বাস কার্যত ঝুপড়িতে। পরিবার জানায় যে রবিবার পটাশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করে ফেরার সময় পুলিশ কীভাবে জোর করে হাতে পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দেয়। 


নিহত মহিলার মেয়ের অভিযোগ, বারবার টাকা ফেরত দিতে চাইলেও পুলিশ রীতিমতো ধমকে টাকা নিতে বাধ্য করে। মুখ না খুলতে হুমকি দেয়। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ এমনও হুমকি দেয় যে ‘বাড়াবাড়ি করলে উল্টো ফল হবে‘।
মেয়ে জানান যে তাঁর মা ওই ঝুপড়ি বাড়িতে একাই থাকতেন। বাবা, ভাই কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। কিন্তু গত একমাস যাবৎ ভাই বাড়িতে ছিল। ঘটনার দিন, শুক্রবার, মা ও ভাই বাড়িতেই ঘুমিয়েছিল। রাত দুটো থেকে আড়াইটার মধ্যে ভাই আর মাকে বাড়িতে দেখতে পায়নি। খোঁজাখুঁজি শুরু করে। প্রতিবেশীদের জানায়। পরের দিন সকালে কিছুটা দূরে মা-কে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মা। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরুচ্ছিল। হাতের শাঁখাপলা ভাঙা। বিধ্বস্ত।
পরিবার জানিয়েছে তখনও মহিলা বেঁচে। কোনোরকমে জানিয়েছিলেন যে গোয়ালঘরে শব্দ হওয়ায় গরু চুরি হয়ে যাচ্ছে কিনা দেখতে দরজা খুলে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেইসময় শুকচাঁদ মাইতি সহ আরও কয়েকজন তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে চ্যাং-দোলা করে তুলে নিয়ে যায়। পাশবিক অত্যাচার করে শুকচাঁদ। বাধা দিলে মারধর করে। তার মুখে জোর করে আগাছা মারার বিষাক্ত ওষুধ ঢেলে দিয়ে পালায়। 
বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে পরিবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মানছে না। পরিবার সঠিক ময়নাতদন্তের আবেদন নিয়ে আদালতে যাবে।
গ্রামে ভয়ের পরিবেশ। তা সত্ত্বেও এক প্রবীণা বললেন, ‘‘ওই মহিলাকে দীর্ঘদিন ধরেই শুকচাঁদ খুব বিরক্ত করত। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যাকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছিলো না। শুকচাঁদের স্বভাবচরিত্রও ছিল খুব খারাপ। গ্রামের ওই মহিলার মৃত্যু সংবাদ আসামাত্রই গ্রামের বউ-মেয়েরা শুকচাঁদকে মারধর করে। কিন্তু পুলিশ এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুকচাঁদ মারা যায়।’’
ওই মহিলার প্রশ্ন, পুলিশ তুলে নেওয়ার সময়ও শুকচাঁদ দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল। মহিলাদের মারে তার মৃত্যু হয় কিভাবে? 
জানা গিয়েছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এলাকায় রীতিমতো ত্রাস হয়ে ওঠে এই শুকচাঁদ। দলে তারপ্রভাব সবাই জানে। ছোট একটি চা দোকান চালালেও ভিতরে ভিতরে ছিল তার ভেড়ির ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, জমি দখল, ধর্ষণের বহু অভিযোগ আছে পঞ্চায়েত থেকে পুলিশের কাছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Comments :0

Login to leave a comment