Abhishek Banerjee

বিদেশে থেকেও রক্ষাকবচের চেষ্টা সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক

জাতীয় খেলা

Abhishek banerjee cbi recruitment scam bengali news

‘আজকে চার্জশিটে নাম নেই বা আজ কেউ অভিযুক্ত নন বলে তিনি যে কাল অভিযুক্ত হবেন না সেরকম তো কোনও নিশ্চয়তা নেই।’ আদালতে অভিষেক ব্যানার্জির মামলায় স্পষ্ট জানালো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিষেক ব্যানার্জির রক্ষাকবচের আবেদন ও তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ইডি’র এফআইআর-কে খারিজের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি যদিও এই মুহূর্তে বিদেশে। তাঁর হয়ে আদালতে শুনানিতে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ, আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। 


‘বাঘের বাচ্চার মতো সামনে থেকে মাথা উঁচু করে লড়াই করব’, ‘যতবার ডাকবে, ততবার আসব’, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে, তথ্য পেলে সেটা জানান। বারেবারে ডাকতে হবে না। বলবেন, হাঁটতে হাঁটতে নিজেই ফাঁসির মঞ্চে চলে যাবো’— সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো কয়েকশোবার এমন ‘বাইট’ দিলেও, ইডি হোক বা সিবিআই, নিয়োগ দুর্নীতি হোক অথবা কয়লা পাচারকাণ্ডে জেরা আটকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিয়ম করে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বারেবারে। 

এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর রক্ষাকবচের আরজি জানিয়ে ও ইডি’র ইসিআইআর (এফআইআর) খারিজের দাবিতে হাইকোর্টের দরজায় ভাইপো সাংসদ।
সেই শুনানিতেই এদিন অভিষেক ব্যানার্জির তরফে অভিষেক মনু সিংভি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সওয়ালে বলেন, এই নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিষেক ব্যানার্জির নাম কোথা থেকে এল? এটা কীসের তদন্ত, কী ধরনের তদন্ত? ইতিমধ্যেই সিবিআই দপ্তরে নিয়োগকাণ্ডে তদন্তে হাজিরা দিয়েছেন। গত প্রায় এক বছর ধরে এই মামলার তদন্ত চলছে। কখনও অভিষেক ব্যানার্জির নাম উঠে আসেনি। অভিষেক ব্যানার্জির নাম তো এফআইআরে নেই, চার্জশিটেও নেই। তাই এখন মামলাটি থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দেওয়া হোক। ইডির কাছ থেকে রক্ষাকবচের আবেদনও আদালতে জানান অভিষেকের আইনজীবী।
 

এরপরেই পাল্টা ইডি’ তরফে আইনজীবী বলেন, শুধুমাত্র কুন্তল ঘোষের চিঠিতে নাম উঠে আসার প্রসঙ্গে নয়, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই তাঁকে তলব করা হয়েছে। অভিষেক ব্যানার্জি কত বড় প্রভাবশালী যে তাঁকে তলব বা সমন পাঠানো যাবে না? ইডি’র সমনে সাড়া দেননি উনি। তলব করা হলেও জেরায় হাজিরা দেননি। কেবল কিছু নথি পাঠিয়েছে দায়িত্ব সেরেছেন। এটা পশ্চিমবঙ্গের বুকে অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি। একটা প্রজন্ম ধ্বংস হয়েছে এই শিক্ষা দুর্নীতিতে। টাকা দেয়নি বলে চাকরি পায়নি মেধাবী, যোগ্য প্রার্থীরা। এটা গুরুতর অপরাধ। এই মামলায় তো প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীও জেলে রয়েছেন। 

ইডি’র তরফে আরও নির্দিষ্ট করেই এরপরেই আদালতের সওয়ালে বলা হয়, তদন্তকারী সংস্থা তলব করছে মানেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে তেমন নয়। যদি তদন্তে সেরকম প্রামান্য নথি ও তথ্য প্রমাণ মেলে তবেই তো গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গ আসছে। আগে থাকতে এমন শঙ্কা কেন? আর আজ অভিযুক্ত নন বা চার্জশিটে আজকে নাম নেই মানে তো কালকেও থাকবে না এমন তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে রক্ষাকবচের আরজি কেন?

ইডি আদালতে আরও দাবি করে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এখনও অনেক অর্থ উদ্ধার করা বাকি আছে,আমাদের তদন্ত চলছে। অভিষেক ব্যানার্জির ব্যক্তিগত শঙ্কার কারণে তো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এত বড় দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করে দিতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টও তদন্ত বন্ধ করতে বলেনি। আমরা না অভিষেক ব্যানার্জি, কে ঠিক তা জানার জন্যও তো তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। 
দু’পক্ষের এই সওয়ালের পরে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান শুক্রবার এই মামলাটির ফের শুনানি। ফলে আগামীকাল পর্যন্ত অভিষেকের রক্ষাকবচের মেয়াদ বৃদ্ধি হলো।


ওইদিনই আবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিষেক ব্যানার্জির তরফে বিদেশ যাত্রায় অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। অভিষেক ব্যানার্জি দাবি করেন গত ১৫ জুলাই তাঁর বিদেশ সফরের কথা ইডিকে জানালেও, তদন্তকারী সংস্থার দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। আগামী ৮ অগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। সেই চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৪ দিন আমেরিকায় থাকতে চান তিনি। 

যদিও সেই মামলার শুনানি বা রায়ের আগেই গোপনে সস্ত্রীক দেশ ছাড়েন অভিষেক ব্যানার্জি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্যও অপেক্ষা করেননি। তা নিয়েও তৈরি হয় প্রবল বিতর্ক। পরে ২৮ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, এবার বিদেশ যেতে হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে সাত দিন আগে তদন্তকারী সংস্থার কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে তদন্তকারী সংস্থা।

 

Comments :0

Login to leave a comment