তৃতীয় দিনে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। উত্তর দিনাজপুর থেকে সোমবার শুরু হয়েছে কর্মসূচি। এদিন করণদিঘিতে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মিনাক্ষী মুখার্জি সহ সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। মিনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আজ কোন নিরাপত্তা নেই। এখন রেশন দোকানে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন পাওয়া যায়। তাহলে সরকার চাইলে তো পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা রেসন কার্ড দিতে পারে যাতে যেখানে কাজ করছে সেখান সে রেশন তুলতে পারে। স্বাস্থ্য বীমার কার্ড দিতে পারে তো অন্য রাজ্যে যাতে সে চিকিৎসা পায়।’’ উল্লেখ্য উত্তর দিনাজপুর থেকে বহু মানুষ অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছেন কাজের জন্য। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে তারা কাজ করছেন। বিভিন্ন সময় বহু দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কোন সময় সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের বুকের রক্ত চুষে আজ তৃণমূলের নেতারা বড়লোক হয়েছে। এরা ১০০ দিনের টাকা চুরি করেছে, চাকরি বিক্রি করেছে। মানুষের টাকা লুঠ করে আজ এরা বড় বড় বাড়ি গাড়ি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কাজের দাবিতে স্বাস্থ্যের দাবিতে যেই লড়াই সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে লাল ঝান্ডা। আমাদের রেগার কাজকে বাঁচাতে হবে, বিড়ি শ্রমিকদের বাঁচাতে। জব কার্ডের টাকা চুরি করেছে তৃণমূল। বিজেপির কমিটি এসে দুর্নীতির তদন্ত করে গেলো কিন্তু একটাও এফআইআর হলো না তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে। আমরা এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমারা এই রাজ্যের বাচ্চা গুলোকে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে চাই। মহিলাদের নিরাপত্তা চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে চাই।’
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাস বলেন, ‘একমাস ধরে এসআইআরের কাজ চলছে মানুষের মনে ভয় তৈরি করা হচ্ছে। বলছে বাবা, মা, ঠাকুমা, ঠাকুরদার নাম দেখাতে হবে ভোটার তালিকায়। এই সময়কালে বহু বন্যা হয়েছে ঘর বাড়ি ভেসে গিয়েছে সেই সব বাড়ির লোকদের কাছে কোথা থেকে কাজ আসবে? জন্মসংশাপত্র তাদের অনেকের কাছে নেই। তাদের বলা হচ্ছে প্রমাণ দেখাতে হবে, কী ভাবে পারবেন তারা। এই গোটা একমাস ধরে বিজেপির কোন লোক দেখা যায়নি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’
তিনি বলেন, ‘যখন এসআইআর চলছে তখন বিজেপি সিএএ ক্যাম্প চালু করলো। কিন্তু কমিশন কোন পদক্ষেপ নিলো না। প্রথমে বিজেপি বললো অনুপ্রবেশকারিদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে, হিন্দু মুসলিমের মধ্যে যাতে বিদ্বেশ তৈরি হয় তার প্রচার করেছে বিজেপি। বিহারেও এই একই প্রচার করেছিল। কিন্তু একটাও অনুপ্রবেশকারিকে দেখাতে পারেনি।’
পলাশ দাসের কথায় এই রাজ্যে অনেক প্রান্তিক পরিবার আছে সে হিন্দু হোক বা মুসলিম তাদের অনেকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ নেই তাদের আজ সঙ্কটের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মতুয়ারা আজ বিজেপির বিরুদ্ধে। সিএএ, মতুয়া কার্ডে নাম করে টাকা নিচ্ছে বিজেপি। তৃণমূলের মতোই দুর্নীতি। হিন্দু হিন্দু মুখে করে কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে মতুয়া কার্ডের নাম করে হিন্দুদের গলায় পা দিয়ে টাকা নিচ্ছে তারা।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা।
ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, ‘গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল যেমন দূর্নীতি করছে তেমন বিজেপি এবং তৃণমূল ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করছে। সরকারের ব্যার্থতায় স্কুল কলেজ বন্ধ হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকার গ্রামীন অর্থনীতিকে উন্নত করেছিল। গ্রামে ব্লকে স্কুল কলেজ তৈরি করেছিল এখন সেই স্কুল গুলোয় তালা পড়ে গিয়েছে। কারখানা তৈরি হয়নি, উল্টে রাজ্য সরকার মদের দোকান খুলেছে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনারুল হক। তিনি বলেন, ‘চোপড়া থেকে ইটাহার পর্যন্ত গোটা জেলা জুড়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। চা শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না, পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ৮০ দশকে চোপড়ায় ধান চাষ হতো, কৃষির উন্নতি দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীকালে চায়ের উৎপাদন বাড়ায় একাধিক কারখানা চালু হয়। এখন চা বাগান বন্ধ, চা কারখানা বন্ধ। কর্পোরেটরা চা বাগানের জমি দখল করার চেষ্টা করছে। তৃণমূলে এই চক্রের সাথে যুক্ত। অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রতিনিধিরা অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত। চোপড়ার বিধায়ক বাড়ি তৈরি করছে মল তৈরি করছে কোথা থেকে টাকা আসছে?’
Comments :0