TMC Leader Birbhum

বীরভূমে তৃণমূল নেতাকে পিঠিয়ে খুনের অভিযোগ

রাজ্য জেলা

গভীর রাত্রে পরিত্যক্ত মাঠ থেকে উদ্ধার হয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ক্ষতবিক্ষত অচৈতন্য দেহ। পরবর্তীতে তাঁকে বোলপুর হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। বোলপুরের কঙ্কালী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূল নেতাকে পিটিয়েই খুন করা হয়েছে বলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। নানা তত্ব উঠে এসেছে এই খুনের পেছনে। এই তৃণমূল নেতার একাধিক স্ত্রী ও আরও নানান মহিলার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকার ঘটনার কথা যেমন সকলেই মুখ থেকেই বেরিয়েছে তেমনই পঞ্চায়েতের বর্তমান উপপ্রধানের সাথে বিবাদের কথাও বলছেন অনেকেই। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের এমন পরিণতি নাকি এই সম্পর্কের অজুহাতে দলের গোষ্ঠী বিবাদের ঝাল মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে ? এমন নানা প্রশ্ন দাঁনা বেঁধেছে এই খুনকে কেন্দ্র করে। পুলিশ তরফে অবৈধ সম্পর্কের জের খুন বলেই জানানো হয়েছে। তবে তৃণমূলের এক জেলার নেতা জানিয়েছে, ‘‘স্রেফ অবৈধ সম্পর্কের জেরে এমনভাবে পিটিয়ে খুনের তত্ব কেমন যেন খটকা লাগাচ্ছে। পুলিশ হয়ত অযথা ঝামেলা এড়াতে এই তত্ব খাঁড়া করে তদন্ত করতে চাইছে। তবে খুনের পেছনে নিশ্চিতভাবেই অন্য কোনও রহস্য আছে।’’ 
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের কঙ্কালী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন সমীর থান্ডার (৪৬)। তার বাড়ি পারুলডাঙা উত্তরনারায়নপুর ক্যানেল পাড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত্রে গ্রামের দলীয় কার্যালয় থেকে রাতের বেলায় বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন এই পঞ্চায়েত। এই সদস্য আবার বোলপুর পৌরসভার অস্থায়ী কর্মী। গভীর রাত্রে বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে এক পরিত্যক্ত মাঠে এই তৃণমূল নেতাকে জখম হয়ে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার মানুষ। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ও সেখান থেকে বর্ধমান নিয়ে যাওয়া হলে রবিবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রতক্ষ্যদর্শীদের কথায়, সারা দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল মৃতের। তাতেই স্পষ্ট হয়েছে, শাসক দলের এই নেতাকে পিটিয়েই খুন করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ , প্রতিবেশী একাধিকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৃত সমীর থান্দারের তিন স্ত্রী। এক স্ত্রী মামনি থান্দার স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘রাতে ফোন পাই যে একটা ঝামেলা হচ্ছে। তারপর শুনলাম পিটিয়ে মেরে দিয়েছে। পার্টি-পার্টি করেই ঝামেলা। এর আগেও মারামারি হয়েছে। আমি বলেছিলাম পার্টি ছেড়ে দিতে। কারা মারল কিছুই জানি না। তবে উত্তরনারায়ণপুরের লোকেরাই মেরেছে। ওদের শাস্তি চাই।’’ খুনের প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আদতে বখরা বাঁটোয়ারা নিয়ে দলের অন্দরের বিবাদের ফলশ্রুতিতেই এই খুন। এরা তো জনগনের সেবা করতে পদে বসে নি। এদের একটাই লক্ষ্য লুট।’’ 
কঙ্কালী পঞ্চায়েতের প্রধান ছবিরানী সাহা জানিয়েছেন, ‘‘সমীর থান্ডার আমাদের পঞ্চায়েতের সদস্য। তাঁকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে খুনের কারণ ও খুনিদের চিহ্নিত করুক।’’ শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই ৫ জনকে আটক করেছে। 
তবে এই খুনের পেছনে তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। একসময় এই সমীর থান্ডার ছিলেন পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সেখ মামনের স্যাঙাত। বর্তমানে তার সাথে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছিল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল জেলে থাকাকালীন সেখ মামনের অবস্থান দোদুল্যমান ছিল। অনুব্রত ফেরার পর সেখ মামন ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এলাকার রাশ হাতে রাখতে। আর তার জেরেই তৃণমূলের অনুব্রত-কাজল সেখের (জেলা পরিষদের সভাধিপতি) চিরাচরিত দ্বন্দেরও সাক্ষী হয়েছে এলাকার মানুষ। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, ‘‘দিনকয়েক আগেই কাজল সেখ মামনের বিরুদ্ধে কঙ্কালী পঞ্চায়েত এলাকায় মিটিং করেছিল।’’ সেই মামনের সাথে খুন হওয়া তৃণমূল নেতা সমীর থান্ডারের ইদানীং সম্পর্কের অবনতির ঘটনাই নানান জল্পনা ইঙ্গিত দিয়েছে খুনের কার্যকারণ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে। 

Comments :0

Login to leave a comment