CABLE TV CRISIS

মার খাচ্ছি ট্রাই’র ষড়যন্ত্রে, ক্ষোভ কেবল অপারেটরদের

জাতীয় রাজ্য কলকাতা

cable tv cable operators bengali news

তিনদিন ধরে সারা দেশের কয়েক কোটি সেট টপ বক্স অকেজো। কারণ? 

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় টেলিকম নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাই’ এনটিও-৩ নামে একটি মাশুল বিষয়ক নির্দেশিকা লাগু করেছে। এই নির্দেশিকার সুযোগ নিয়ে স্যাটেলাইট চ্যানেল ব্রডকাস্টাররা তাঁদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাইয়ের তরফেও এর বিরোধিতা করা হয়নি। অপরদিকে কেবল টিভি’র এমএসও সংস্থাগুলি এই দামবৃদ্ধি সংক্রান্ত কোনও চুক্তি ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে করতে রাজি হয়নি। 

এই জটিলতার ফলে ৩ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশের সাড়ে চার কোটি বাড়িতে পছন্দের টিভি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না দর্শকরা। টাকা দিয়েও চ্যানেল দেখতে না পাওয়ার আক্রোশ আছড়ে পড়ছে স্থানীয় কেবল অপারেটরদের উপর। অথচ, এই গোটা ঘটনাক্রমে তাঁদের কোনও ভূমিকাই নেই। এই অচলাবস্থা কাটাতে ইতিমধ্যেই কেরালা, কলকাতা সহ ৭টি রাজ্যের হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। 

এই নজিরবিহীন সঙ্কটের ফলে জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন কেবল টিভি অপারেটররা। এ রাজ্যে কেবল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কমবেশি ১০ লক্ষ। কেবল অপরেটররা জানাচ্ছেন, ২০১৯ সাল থেকে এখনও অবধি ৩টি এনটিও নির্দেশিকা এনেছে কেন্দ্রীয় টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতি ক্ষেত্রেই ট্রাইয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, দর্শকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই কেবল টিভির ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হচ্ছে। যদিও প্রত্যেকবারই এরফলে দাম বেড়েছে কেবল টিভি পরিষেবার। 

অপারেটররা বলছেন, ট্রাইয়ের ষড়যন্ত্রে আমরা মার খাচ্ছি। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতার চাঁদনি চকে ট্রাইয়ের আঞ্চলিক দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন কেবল অপারেটররা।

কেবল অপারেটররা জানাচ্ছেন, এনটিও-১’র হাত ধরে ট্রাইয়ের তরফে বলা হয়, গ্রাহকরা যেই চ্যানেল দেখবেন, শুধুমাত্র তার ভিত্তিতেই টাকা দিতে হবে। ফলে তাঁদের কেবল খরচ কমবে। যদিও কার্যক্ষেত্রে এর উলটো দেখা যায়। এনটিও-১’র আগে স্টারের সমস্ত চ্যানেল দেখতে গেলে খরচ পড়ত ১৯ টাকা। এনটিও-১’র ফলে একই সংস্থার ১টি চ্যানেল দেখার খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ১৯টাকায়। এরফলে গ্রাহকদের পাশাপাশি সমস্যায় পড়েন কেবল অপারেটররা। দ্রুত ব্যবসা হারাতে শুরু করেন তাঁরা। 

কেবল অপারেটরদের অভিযোগ, কেবল টিভিতে যেই চ্যানেল টাকা দিয়ে দেখতে হয়, সেই চ্যানেল ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ফ্রিতে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার হাত ধরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় জিও টিভি। 

এনটিও-১’র পরে ২০২০ সালে এনটিও-২ নিয়ে আসে ট্রাই। সেখানে চ্যানেলের দাম ১৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১২টাকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাইয়ের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ব্রডকাস্টাররা। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে এনটিও-৩ আনে ট্রাই। এবং তাকে হাতিয়ার করে একেকটি চ্যানেলের ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এমএসও সংস্থাগুলি এই সংক্রান্ত চুক্তি করতে অস্বীকার করায় যাবতীয় জটিলতার জন্ম। 

কেবল অপারেটরদের অভিযোগ, কেবল শিল্পে সরাসরি বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশের জন্য প্রয়োজন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কেবল অপারেটরদের বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া। নিয়ম মাফিক সেই কাজই করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আর তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার সব দেখেও চুপ। বরং ঘুরপথে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে সাহায্য করছে তৃণমূল।

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববাংলা কেবল টিভি অপারেটর্‌স ইউনিয়নের সভাপতি শঙ্কর মন্ডল বলেন, ‘‘দুই সরকারের উদাসীনতায় আমরা জীবিকা হারাতে বসেছি। বৃহৎ পুঁজিকে সুবিধা করে দিতে আমাদের স্বনির্ভর কর্মসংস্থানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এই চক্রান্ত সফল হলে এ রাজ্যের ১০ লক্ষ পরিবার পথে বসবে। চ্যানেল বন্ধ হওয়ার ক্ষোভ আমাদের উপর উগরে দিচ্ছেন মানুষ।হাওড়া, আরজিকর সহ বহু জায়গায় কেবল অপারেটরদের অফিস ভাঙচুর হয়েছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment