জানুয়ারিতে কলকাতায় যুবদের ডাকে ব্রিগেড ময়দানে ইনসাফ সভা হয়েছে। তার আগে প্রায় ২ মাস ধরে সারা রাজ্য জুড়ে ইনসাফ যাত্রা করেছেন বামপন্থী যুবরা। এই দুই কর্মসূচিকে মঙ্গলবার প্রশংসা জানিয়েছে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের বামপন্থী যুবদের আহ্বাণে হওয়া এই সফল কর্মসূচিকে ঠিক কতটা গুরুত্ব দিয়েছে সিপিআই(এম)’র সর্বোচ্চ কমিটি।
৩ নভেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হয় ইনসাফ যাত্রার পথচলা। ৫০ দিন ধরে রাজ্যের অলি-গলি ঘুরে ২২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যাদবপুর ৮বি’র জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ইনসাফ যাত্রা। যুব নেতৃত্বের হিসেব, চলার পথে আড়াইশো’র বেশি জনসভা করা হয়। পদযাত্রায় সব মিলিয়ে অংশ নেন ১০ লক্ষের বেশি মানুষ।
পদযাত্রা শেষ হয় বারুইপুর থেকে যাদবপুর মহামিছিলের হাত ধরে। তারপর যাদবপুরে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বিশাল জনসভায় সমাপ্তি ঘোষণা হয় পদযাত্রার। ১০ হাজার কন্ঠে গাওয়া হয় কাজী নজরুল ইসলামের কারার ওই লৌহকবাট গানটি।
সভা থেকে প্রাক্তন যুব নেতৃত্ব তথা সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আহ্বাণ জানান, একটা প্রজন্ম আমাদের দিন। রাজ্যকে নতুন করে গড়ে তুলব আমরা। বামপন্থার পুনরুত্থান ছাড়া বাংলার পুনরুত্থান সম্ভব নয়।
এরপর প্রস্তুতি শুরু হয় ৭ জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশের। বেনজির ভাবে সভার অনুমতি নিয়ে টালবাহানা শুরু করে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর তরফে শুরুতে বলা হয়, রাজ্য সরকারের আপত্তি রয়েছে বলে সভার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও যুবদের তরফে স্পষ্ট করা হয়, বিকল্প কোনও জায়গায় নয়, সভা হবে ব্রিগেডেই।
৮বি’র সভা থেকেও একই বার্তা দেন মহম্মদ সেলিম। পরবর্তীকালে পিছু হঠে সেনা। মেলে অনুমতি। ৬ জানুয়ারি থেকে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি থেকে বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা ভিড় জমাতে শুরু করেন শহর কলকাতায়। ব্রিগেডের ময়দানের পাশাপাশি ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল এবং মহাজাতি সদনের পাশে একটি ধর্মশালায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
৭ জানুয়ারি ভোর থেকে, প্রবল শীতকে উপেক্ষা করেই ভিড় জমতে শুরু করে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে বিশাল ২টি মিছিল আসে সভাস্থলে। এর পাশাপাশি কলকাতা শহরের ৫টি জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় মিছিল হয়। সভা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরুর আগেই মাঠের অধিকাংশ জায়গা ভরে যায়।
জনতার বিপুল ঢেউ উঠলেও, মাঠ ভরানোর কাজে অসহযোগিতা করে কলকাতা পুলিশ। জওহরলাল নেহরু রোড এবং ক্যাজুরিনা এভিনিউ দিয়ে ভিড়কে মাঠে ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। পুলিশি অতিসক্রিয়তায় কলকাতার একটি কেন্দ্রীয় মিছিল দীর্ঘক্ষণ জওহরলাল নেহরু রোডে ঢুকতে পারেনি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এই অবস্থায় মঞ্চ থেকে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। তিনি বলেন, পুলিশ মানুষকে মাঠে ঢুকতে না দিলে তাঁরা নিজেরাই পথ খুঁজে নেবেন। সেই পরিস্থিতি পুলিশের জন্য সুখকর হবেনা। তিনি জনতাকে আহ্বাণ জানান, মাঝমাঠের দখল নিতে।
এরপর পুলিশ পিছু হঠে। একাধিক অংশ দিয়ে ব্রিগেডের মাঠে ঢুকতে শুরু করে জনস্রোত। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ময়দান।
Comments :0