কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা জনিত কোনও বিষয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের ব্যবহার করা যাবে না। তাঁরা কেবলমাত্র ট্রাফিক, উৎসবের সময় ভিড় সামলানো ইত্যাদি কাজে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু তারপরেও নিয়ম বিরুদ্ধ ভাবে সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার। এই অভিযোগ জানিয়ে শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল সিপিআই(এম)।
এদিন সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে বলা হয়, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী লঙ্ঘন করে নির্দিষ্ট কিছু ব্লকে, এমনকি বিডিও অফিসে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ চলাকালীন নিরাপত্তা ও পাহাড়ায় তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও এই পদে কর্মরত ব্যক্তিরা ইউনিফর্ম ছাড়াও সাধারণ পোষাকে নির্বাচনী কাজে যুক্ত থাকছেন, যাঁদের এলাকার মানুষ চেনেন। ’’
সিপিআই(এম) জানিয়েছে, প্রমাণ হিসেবে অভিযোগ পত্রের সঙ্গে বসিরহাট বিডিও অফিসে পাহারারত সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি ভিডিও ক্লিপিংও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়েছে।
সিপিআই(এম)’র তরফে দাবি জানানো হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজেই, বিশেষত আইন শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে যাতে কোনওভাবেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার না করা হয়। একইসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে, নিয়ম ভঙ্গ করলে যেন কঠোর এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৪ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিভিক ভলান্টিয়ার সংক্রান্ত একটি নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশে আদালত স্পষ্ট জানায়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কোনও ভাবেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করা যাবে না। তাঁরা কেবলমাত্র, ট্র্যাফিক, কিংবা উৎসবের সময় ভিড় সামলানোর কাজে পুলিশকে সাহায্য করবেন।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত শুনানি হয়। সেখানেও সিভিক সংক্রান্ত আগের রায় বহাল রেখেছে আদালত।
যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নতুন করে সামনে এসেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সক্রিয়তা। শনিবার মুর্শিদাবাদের ডোমকল ব্লকে মনোনয়ন জমা দিতে যান বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা। অভিযোগ তাঁদের উপর হামলা চালায় তৃণমূল কর্মীরা। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে হেলমেট পরা সিভিক ভলান্টিয়ারদের। আবার বসিরহাটের মতো বেশ কিছু ব্লকে দেখা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের বদলে ব্লক অফিসের নিরপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।
এই অভিযোগ সামনে আসার পরে যদিও ভিন্ন সুর তৃণমূলের গলায়। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, সিভিক ভলান্টিয়াররা বয়স্ক মানুষকে জল দিয়ে সাহায্য করছিলেন, সামাজিক কাজ করছিলেন। সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ায় তাঁরা বাধ্য হয়েছেন আসরে নামতে।
কার্যত বিরোধীদের তোলা আদালত অবমাননার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র।
অপরদিকে মনোনয়ন জমাকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ ওঠায় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শনিবার কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটির ভিডিওগ্রাফি করতে হবে সমস্ত ব্লকে।
Comments :0