পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন এবং তৃণমূলের দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজন বামপন্থার পুনর্জাগরণ। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলার দ্রুত বামপন্থার পুর্জাগরণ দরকার। তৃতীয় শক্তি হিসাবে বামপন্থার উত্থান দরকার। প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা স্পষ্ট বলেছে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ। বিহার ওড়িশা ওরা দখল করেছে। এবার লক্ষ বাংলা। আমার বিশ্বাস বাংলার মানুষ রাজ্যে বিজেপির প্রভাবকে আটকাতে পারবে।’
১৮-২০ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে চলবে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্মেলন। আগামীকাল বেলা ৩টে থেকে ‘বাংলা চায় বামপন্থার পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক প্রকাশ্য আলোচনা সভা হবে। বক্তব্য রাখবেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্ব। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের সম্মেলনে মুখ্য আলোচ্য বিষয় থাকবে বাংলার বুকে বিজেপি এবং তৃণমূলের দ্বিদলীয় মেরুকরণ ভেঙে বামপন্থার জারণ।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্য যেই সরকার চলছে (তৃণমূল সরকার) তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এরা গণতন্ত্রকে শেষ করছে। তৃণমূলকে হারিয়ে বিজেপিকে আনলে সব সমস্যা মিটে যাবে এই ধারনা ভুল। বিজেপির সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ত্রিপুরাকে দেখে শিক্ষা নিতে হবে।’ তার কথায় বিজেপিকে ঠেকাতে বামপন্থী শক্তি উত্থান প্রয়োজন।
বিহার নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিহারে বামপন্থীরা প্রায় ২০ লক্ষ ভোট পেয়েছে। যা এই সময় দাঁড়িয়ে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।’
তার কথায় বিহারে নির্বাচনের আগে বা নির্বাচন চলাকালিন তিনটি ঘটনার প্রভাব রয়েছে এই নির্বাচনী ফলাফলে। সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ফলাফল অনুমানের বিপরিত। ২০১০ সালের যা ফলাফল হয়েছিল তার প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। সেই সময় ছিল নীতিশ কুমারের উত্থানের পর্ব, কিন্তু প্রবল বিরোধীতার মুখে থাকা একটি সরকার কী ভাবে এই সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারে তা গবেষণার বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বা তার আগে এমন কিছু ঘটনা বিহারে ঘটেছে সেই ঘটনা যদি একটি মডেল হয়ে যায় তাহলে ভারতবর্ষে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিনত হবে।’
তার কথায় এসআইআরের প্রভাব রয়েছে নির্বাচনে। এই প্রক্রিয়ায় যেমন নাম বাদ গিয়েছে তেমন ভাবে নাম যুক্ত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন এসআইআর করে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা যায়নি। অনেক ভুয়ো নাম রয়ে গিয়েছে। ভট্টাচার্য বলেন, ‘তালিকায় দেখা গিয়েছে এখনও মৃতদের নাম রয়েছে। ৫০০ জনের নাম রয়েছে একই বাড়ির ঠিকানায়। বাড়ির নম্বর নেই এমন অনেক নাম রয়েছে।’ তার কথায় বিভিন্ন জায়গায় সংগঠিত ভাবে ভোট লুঠ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক গুলো আসনে বিরোধীরা কম ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। সেখানে যে তালিকায় কোন কারচুপি হয়নি তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না এখনই।’
দ্বিতীয় কারণ হিসাবে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিহারের নির্বাচন দেখিয়েছে কি ভাবে সরকার বিপুল পরিমানে টাকা খরচ করছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্পের নাম করে ৩ থেকে ৩.৫ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের আগে বা নির্বাচন চলাকালিন।’
বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, মিড ডে মিল কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বামপন্থীরা বার বার লড়াই চালিয়েছে সেই সময় নীতিশ কুমার বেতন বৃদ্ধি করেননি। ভোটের আগে তিনি তা বৃদ্ধি করেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা যা ছিল মাত্র ৪০০ টাকা তা বাড়িয়ে ভোটের সময় সরকার করে ১১০০ টাকা।’ বিহারের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোগজার যোজনায় যেই দেড় কোটি মহিলা দশ হাজার পেয়েছেন তার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘জিবিকা ভলেন্টিয়াদের ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে বিজেপি এবং শরিকরা।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যেমন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যেমন টাকা ঢুকেছে তেমন নির্বাচন চলাকালিনও টাকা ঢুকেছে। বিহারে ২০০ ইউনিট বিনামূল্যের বিদ্যুৎ এর দাবিতে বার বার আন্দোলন হয়েছে কিন্তু নীতিশ কুমার মানেনি। এখন নির্বাচনের আগে ঘোষণা করছে ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিহারের নির্বাচন দেখিয়েছে বৈষম্য, বিপুল টাকা খরচ। নির্বাচনের আগে প্রকল্পের নাম করে যদি টাকা ছড়ানো হয় তাহলে কোনদিন নির্বাচনের স্বচ্ছতা থাকে না। প্রয়োজন আইন করে এই সব বন্ধ করতে হবে নির্বাচনের আগে। নিয়ম করতে হবে নির্বাচনের ছয় মাস এক বছর আগে কেউ এই ধরনরে কোন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না।’
বিহারে পিকে এবং তার দল জন সুরাজ পার্টির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বেতন ভোগী কর্মী দিয়ে আন্দোলন ছাড়া, মতাদর্শ ছাড়া টাকা নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমে কিছু করা যায় না। এই ধরনের ঘটনা রাজনীতিতে কর্পোরেটের প্রভাব স্পষ্ট করে।’
CPI(ML) LIBERATION
সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে আটকাতে বাংলায় দ্রুত প্রয়োজন বামপন্থার পুনর্জাগরণ : দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
×
Comments :0