শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জেরে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ ও ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর তিন দফায় মোট ৯০টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে প্রথম দফার ২৪টি আসনে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়াও শুরু করেছেন। প্রায় এক দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরকে শাসক বিজেপি’র কেন্দ্রীয় শাসনে দমবন্ধ অবস্থায় রাখার পর বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। আশা করা যায় নির্বাচনের পর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাবে এবং জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন হবে। অর্থাৎ কাশ্মীরের মানুষ তাদের নিজের সরকার পাবে। দিল্লির হুকূমে আমলাদের খামখেয়ালি শাসনের অধীনে থাকতে হবে না।
মুসলিম প্রধান জম্মু ও কাশ্মীরে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র পক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা একরকম অসম্ভব মেনে নিয়ে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা কৌশলে ক্ষমতা দখলের ছক কষা শুরু হয়। কাশ্মীরে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে, দাপট দেখিয়ে, তাদের ভীত সন্তস্ত্র করে অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়ে বিজেপি চেয়েছিল সারা দেশে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে মেরুকরণ তীব্র করতে। কাশ্মীর হাতে পেলে তাকে ব্যবহার করে সারা দেশে হিন্দুত্বের ঢেউ তোলা সহজ হবে। আর সেই ঢেউয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো সহজ হবে। এমন আশু ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রথমে পিডিপি’র সঙ্গে জোট করে রাজ্যের ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করে। এটা ছিল অনেকটা সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনোর মতো। কিন্তু সেই জোট বেশি দিন টেকেনি। হিন্দুত্বের উগ্র কর্তৃত্বের দাপটে গুরুতর সঙ্কটের মধ্যে সরকার পতন হয়। বিজেপি জোট থেকে সরে আসায় সরকার পড়ে যায়। মওকা বুঝে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। অর্থাৎ সরাসরি দিল্লি থেকে সরকার পরিচালনা। কিছুদিন পর ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার ঐ বছর ৫ আগস্ট কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয় ৩৭০ এবং ৩৫ক ধারা বাতিল করে। কাশ্মীরকে দু’টুকরো করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর) করা হয়। তারপর থেকে টানা পাঁচ বছর চলছে সীমাহীন নিপীড়ন পর্ব। কাশ্মীর কার্যত সেনা-আধাসেনার দখলে চলে যায়। মানুষের যাবতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার এমন কি মৌলিক অধিকারগুলি থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়। একদিকে নিরাপত্তাবাহিনীর নিপীড়ন অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ-কাশ্মীরের মানুষের যন্ত্রণাকাতর দুর্বিষহ জীবন।
এরই মধ্যে ক্রমাগত দাবি ওঠে সাংবিধানিক অধিকার ফেরানোর, রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার। কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষা করে চলতে থাকে স্বৈরাচারী কেন্দ্রীয় শাসন। নির্বাচন করার আগে তলে তলে ছক কষে আসন পুনর্বিন্যাস করা ও আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়। একাজ নিখুঁত পরিকল্পনায় করা হয় যাতে বিজেপি লাভবান হয়। তাদের বেশি আসনে জেতার সুযোগ তৈরি হয়। তারপরও জেতার সম্ভাবনা না থাকায় ভোট এড়িয়ে যেতে থাকে। শেষে সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় এবছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য। সন্দেহ নেই ক্ষমতা দখলের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে বিজেপি প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু বিরোধীরাও ছেড়ে কথা বলবে না। এটা ঠিক বর্তমান পরিস্থিতিতে সব বিরোধী শক্তি জোট বেঁধে বিজেপি-কে ধূলিসাৎ করা জরুরি হলেও শেষ পর্যন্ত সার্বিক বিরোধী ঐক্য হবে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোটামুটি আসন সমঝোতা হতে চলেছে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স জোটবদ্ধ হয়েছে। অন্যরাও বোঝাপড়া করবে। ফলে শাসক বিজেপি’র পক্ষে হালে পানি পাওয়া কঠিন। কাশ্মীরের মানুষ নিজেদের নির্বাচিত সরকার পাবে আপাতত এটাই বড় কথা।
Editorial
কাশ্মীরে ভোট
×
Comments :0