Editorial

এবার ভুয়ো ব্যালট

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


শাসক তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করতে রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগে ভুয়ো ব্যালট ছাপানোর গুরুতর অভিযোগ যে নিছকই বিরোধীদের অভিযোগ নয় ডাল মে কুচ কালা হ্যায় তা পরিষ্কার হয়ে গেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জরুরিভিত্তিক নির্দেশিকায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর গোপন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্প্রতি নানা মহল থেকে অভিযোগ দানা বাঁধছিল। অভিযোগটি বাড়তি মাত্রা পেয়ে যায় পুরুলিয়া থেকে নির্বাচনের কাজে যুক্ত দুই উচ্চ পদস্থ আধিকারিককে আচমকা বদলি করে নবান্নে নিয়ে আসায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ব্যালট পেপার ছাপার দায়িত্বে ছিলেন ঐ দুই আধিকারিক। প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় ব্যালট পেপার ছাপার মৌখিক নির্দেশ পালনে আপত্তি করায় তাদের একরকম শাস্তিমূলক বদলি করে পঞ্চায়েতের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আর নীরবতা পালন করা সম্ভব হয়নি নির্বাচন কমিশনের। তড়িঘড়ি নির্দেশিকা জারি করে ব্যালট পেপার ছাপানো, সুরক্ষিত রাখা, বাড়তি বা ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট পেপারগুলি কীভাবে নষ্ট করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে করণীয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আসলে ভুয়ো ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজটি গোপনে দিব্যি চলছিল। কিন্তু যে কোনোভাবেই হোক তা বাইরে বেরিয়ে আসায় বেকায়দায় পড়ে যায় কমিশন। তাই নিজেদের দায়িত্বশীল প্রমাণ করতে নির্দেশিকা জারি করে। তা না হলে অভি‍যোগের তির কমিশনের দিকেও ঘুরে যে‍‌তে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো ভুয়ো ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রয়োজন হলো কেন? অতীতে বুথ থেকে ব্যালট ‍‌ছিনতাই করে গুন্ডারা ছাপ্পা মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে শাসক দলের জয় নিশ্চিত করত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের লক্ষ্য শুধু জয় বা পঞ্চায়েত দখল ছিল না। তারা চেয়েছিল পুরোপুরি বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত। তাহলে যথেচ্ছ লুঠতরাজে কোনও বাধা-প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। সবচেয়ে বড় কথা পঞ্চায়েতের ভেতরে কীভাবে সর্বগ্রাসী চুরির আয়োজন হ‍‌চ্ছে বাইরে কেউ টের পাবে না। আন্দাজ করতে পারলেও প্রত্যক্ষদর্শী মিলবে না। এবার সেই অবস্থা নেই। তৃণমূল এবার বুঝে গেছে গ্রাম বাংলা যেভাবে চুরির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে তাতে দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গড়া কার্যত অসম্ভব। কিন্তু চুরি তো তাদের করতেই হবে। চুরি তাদের ডিএনএ-তেই, চুরি তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। আর চুরির জন্য সবচেয়ে জরুরি যে কোনও মূল্যেই হোক জেলা পরিষদগুলির দখল নেওয়া। শুধু দখল নেওয়া নয়, যথাসম্ভব বিরোধীহীন করা। বিরোধীরা না থাকলে, থাকলেও দু’-একজন থাকলে নতুন কৌশলে চৌর্যবৃত্তি চালিয়ে যাওয়া যাবে। জেলা পরিষদগুলি দখলের লক্ষ্যেই এবার প্রশাসনের মধ্যে দলদাস আমলাদের ব্যবহার করে বাড়তি ব্যালট পেপার ছাপানোর পরিকল্পনা হয়েছে।
বাড়তি অর্থাৎ ভুয়ো ব্যালট পেপারগুলি  চলে যাবে দলের নেতাদের কাছে। তারা তাতে ছাপ মেরে ভোটের পরে গোপনে বদলে দেওয়া হবে আসল ব্যালটের সঙ্গে। বিশেষ করে যে আসনগুলি তৃণমূল হারার আশঙ্কা করছে এই ভুয়ো ব্যালট ব্যবহার হবে সেখানেই। স্বাভাবিকভাবে বিরোধীদের কড়া নজরদারি ও সতর্কতা প্রয়োজন যাতে কোনও অবস্থাতেই মানুষের রায় বদলে না দিতে পারে। তেমনি নিয়ম রক্ষার জন্য শুধু নির্দেশিকা জারি নয়, প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হবে যাতে এমন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে।


 

Comments :0

Login to leave a comment