Bangla Bachao Jatra

লড়াই তৃণমূল – বিজেপির চোরদের সাথে খেটে খাওয়া মানুষের : মীনাক্ষী

রাজ্য

মানুষের আবেগকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। ছবি প্রীতম ঘোষ, দক্ষিণ দিনাজপুর

‘আমরা চাই মহিলাদের স্বনির্ভর করতে। তারা যাতে নিজেদের পায় দাঁড়াতে পারে সেই জন্য আমরা লড়াই করছি। আর এই লড়াই চলবে। মাইক্রোফিনান্সের জাল থেকে রাজ্যের মহিলাদের উদ্ধার করতে হবে।’ দক্ষিণ দিনাজপুর বললেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে শুরু হয়েছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। আজ চতুর্থ দিন। এদিন কুমারগঞ্জে হয় প্রথম সভা। সেখানে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে বাড়ছে। মুখেই কণ্যাশ্রী, রূপশ্রীর কথা শোনা যায়। এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ৪৫০০ মেয়ে নাবালিকা অবস্থায় বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন করতে হবে কেন নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে? কোথায় সরকার ওরা কেন নাবালিকা বিবাহ আটকাতে পারছে না?’’ 


মাইক্রোফিনান্সের চক্র বন্ধ করার আওয়াজ উঠেছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা থেকে। এদিন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের বক্তব্যে উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘মাইক্রোফিনান্সের দাপট বাড়ছে। গোটা রাজ্যের মহিলারা আজ মাইক্রোফিনান্সের জালে আটকে গিয়েছে। কোথায় দুয়ারে সরকার মানুষকে এই জট থেকে বার করার জন্য? আমাদের কাজ হবে মহিলাদের এই জাল থেকে বাইরে আনার। মহিলাদের স্বনির্ভর করার কাজ করতে হবে আমাদের।’’
বিজেপিকে আক্রমণ করে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘গোটা দেশে যেখানে যেখানে বিজেপি সরকার আছে সেখানে প্রতিদিন তপশিলি জাতি এবং উপ-জাতির মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন ১৩ জন তপশিলি জাতি এবং উপ-জাতির মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। আর এখানে শুভেন্দু, দিলীপ, সুকান্তরা তপশিলি বাড়িতে কলা পাতায় খাবার খাওয়ার নাটক করে। দাঙ্গাবাজ বিজেপি কি ২০১১ সালের আগে এই রাজ্যে ছিল? তৃণমূল নিজে হাত ধরে বিজেপিকে এই রাজ্যে এনেছে। আট হাজার স্কুলে তালা লাগিয়ে আরএসএসের স্কুল খুলিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূলে মুরোদ নেই বিজেপিকে আটকানোর। বিধানসভার ভিতর ওরা সব এক। ওদের গটআপ গেমের জন্য আমাদের ১০০ দিনের কাজ চলে গেলো।’ 
মীনাক্ষী বলেন, ‘তৃণমূল বিজেপির চোররা আজ একদিকে অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষ। বুথে যদি আমরা শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াই সব মানুষ যদি এক হয় তৃণমূল কোন দম হবে না ভোটে জেতার। আমাদের গুন্ডারাজের বিরুদ্ধে এক হতে হবে।’  
সিপিআই(এম) নেত্রী বলেন, মোদী সরকারের আমলে মানুষ ভয় নিয়ে বাঁচছে। কখনও যুদ্ধ জিগির নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে কখনও এনআরসির নাম করে ভয় দেখাচ্ছে। নোটবন্দি জিএসটি করে বললো সন্ত্রাসবাদ শেষ। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়নি দিল্লির ঘটনা তার প্রমাণ। জিএসটি করে ছোট ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা বাড়িয়েছে। এখন কয়েকটা জিনিসের ওপর জিএসটি তুলে নিয়েছে, কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় যেই জিনিস আছে সেখানে জিএসটির কোন ছাড় দেয়নি। মানুষকে এরা বাঁচতে দেবে না। 
গোটা দেশে বেকারির হার বাড়ছে, এরাজ্যেও কোন কাজ নেই। এই প্রসঙ্গ টেনে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘বলেছিল বছরে দুকোটি বেকারের চাকরি দেবে যেই ভোট পার ওমনি সব ভুলে গিয়েছে। কথা ছিল রেগার কাজ হবে কি না? গ্রামের মানুষ কাজ পাবে কি ন? মানুষ কাজ পাচ্ছে না মানুষ। তিন বছর ধরে কাজ নেই, মানুষের আয় নেই। কোথায় তৃণমূল এবং বিজেপি? একটাও কথা নেই ওদের মুখে। শুধু ধর্মের নাম ভাগ করছে।’’
তিনি বলেন, ‘মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকরা বিক্রি করছে না, তৃণমূলে ফোরে দালালরা বসে আছে। গরীব মানুষকে যত লুঠ করা হবে তত ভোটের সময় তৃণমূলের হেলিকপ্টার ঘুরবে আকাশে।’ 
ওয়াকফের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্য সরকারকে নিশানা করে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘মমতা বলেছিল ওয়াকফ নিয়ে ভয় পেতে না। ওই আইন এখানে চালু করতে দেবে না। এখন এসআইআর চলাকালিন ওয়াকফ সম্পত্তির খতিয়ান জমা দেওয়ার কথা বলছে রাজ্য সরকার। এরা আসলে মানুষকে ঠকাচ্ছে, বিজেপির কথায় চলছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘একটা ডাক্তারকে ধর্ষণ করলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জ্বালিয়াতি শুরু করলো। এখন মেয়েটার বাবা মাকে মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট যত্ন করে রাখতে হচ্ছে। কোন তদন্ত হলো না। বিজেপির এবং তৃণমূলের কিসের সম্পর্ক যে একের পর এক দুর্নীতি হচ্ছে তার একটাও তদন্ত হচ্ছে না। বিচার হচ্ছে না।’ 
কুমারগঞ্জের সভায় বক্তব্য রাখেন এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার।

Comments :0

Login to leave a comment