বৃষ্টি উপেক্ষা করেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা। সাধারণ মানুষের দেওয়া ত্রিপল মাথায় দিয়েই তারা স্লোগান তুলছেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। পাঁচ দফা দাবিকে সমানে রেখে টানা তিনদিন স্বাসডথ্য ভবনের অদুরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা।
বৃহস্পতিবার জুনিয়ার ডাক্তাররা বার বার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাদের বৈঠকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের আবেদন জানালেও তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি নবান্নের পক্ষ থেকে।
তার জেরে বৃহস্পতিবার নবান্নে গিয়েও ফিরে এল জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদল।
এদিন কয়েকদফা টানাপোড়েনের পর নবান্নে যান জুনিয়ার ডাক্তাররা। বৈঠক শেষ পর্যন্ত না হওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং তাঁদের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। তাই এই মিটিং লাইভ করা সম্ভব নয়। আমার ভিডিও ক্যামেরা রেখেছিলাম যাতে পুরো বৈঠকটা ডকুমেন্টেড থাকে।’’
আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসক তথাগত দাশ ‘গণশক্তি’-কে বলেন, ‘‘লাইভ স্ট্রিমিং না হওয়ায় বৈঠক করা যায়নি। সবরকম আলোচনা করতে রাজি আছি। তবে তা সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।’’
আরজি কর কাণ্ডে নথি লোপাটে দায়ী রাজ্য প্রশাসনের ‘ডকুমেন্টশন’-কে ভরসা করছে না সংশ্লিষ্ট কোনও অংশই। শীর্ষ স্তরের প্রশাসনিক বৈঠক সরাসরি দেখানো হয়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী ধমক-ধামক দেন। তা’হলে এই বৈঠক দেখাতে আপত্তি কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টে দু’দিনের শুনানিতে কোথাও সরাসরি সম্প্রচার সংক্রান্ত আপত্তি তোলা হয়নি।
আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়ার চিকিৎসকরা। ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জুনিয়ার চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে বলেন। তাকে হাতিয়ার করেই প্রশাসনও চাপ বাড়ায়। মঙ্গলবার দুপুরে এই চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দেন। পুলিশে তাঁদের আটকালে সেখানেই গত মঙ্গলবার থেকে অবস্থানে বসেন আছেন।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র সচিব জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে আসার চিঠিতে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। বিকেল ৪:৪৫ নাগাদ ১৫ জন প্রতিনিধি আসতে পারবেন। বৈঠকের কোনো লাইভ স্ট্রিমিং হবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জুনিয়ার চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্যের এতগুলি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, ১৫ জন প্রতিনিধি দলের বদলে ৩৪ জন করা হোক এবং পুরো বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করা হোক। এরপর সময় জুনিয়ার চিকিৎসকরা সেই সময় অনুযায়ী বাসে করে নবান্নে পৌঁছান। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিং করতে সরকার রাজি না হওয়ায় তাঁরা বাইরেই বসে থাকেন।
প্রায় ২ঘন্টা ১৫ মিনিট অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, জুনিয়র চিকিৎসকরা আমাদের সাথে আলোচনায় আসুক সেটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা এলেন না। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবো না কারণ তাঁরা ছোট। রাজ্যে প্রায় ২৭ জন রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার সত্ত্বেও আমরা কোন ব্যবস্থা নেইনি। বাংলার মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি দুদিন হয়ে যাওয়ার পরও কোন সমাধান সূত্র বের করতে পারলাম না। আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তাদের আমি অনুরোধ করছি কাজে ফেরার জন্য যাতে আর কোনও মৃত্যু না হয়।
মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের সব অংশ। কারণ সিনিয়র চিকিৎসকরা পুরোদমে পরিষেবা দিচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা আছেন কেবল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অথচ তাঁদেরই দায়ী করা হচ্ছে আন্দোলনে নামায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরপরও যদি ওরা বসতে চান তাহলে ডিজি, চিফ সেক্রেটারি সাথে বৈঠকে বসতে পারেন। ৩৪ জনের মধ্যে দু তিনজন মিটিং করতে চাইনি বাকিরা চেয়েছিল। এদের বাইরে থেকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে। তিনি বলেন, ওরা বিচার চায় না, চেয়ার চায়। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না, আমি বিচার চাই।
জুনিয়র ডাক্তাররা ফের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে তাঁদের ধর্না মঞ্চে ফিরে গিয়েছেন। আন্দোলনরত সব অংশই বলছে, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রমাণ লোপাটে যুক্ত স্বাস্থ্য দপ্তর এবং স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ আধিাকিরকদের নির্দিষ্ট করে দায়ী করছেন। দায়ী করছেন ‘থ্রেট কালচার’ চালানোর জন্য। এখানেই অস্বস্তি মুখ্যমন্ত্রীর। তাই তিনি সরাসরি সম্প্রচার চাইছেন না।
Comments :0