EDITORIAL

এ কেমন প্রধানমন্ত্রী

সম্পাদকীয় বিভাগ

NARENDRA MODI BJP UTTAR PRADESH GUJRAT POLLS HIMACHAL POLLS

হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাটের নির্বাচনের আগে হরিলুটের বাতাসার মতো প্রকল্প-প্রতিশ্রুতি ছড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তুলনায় হিমাচলে একটু কম হলেও গুজরাটে সীমা পরিসীমা নেই। গত মার্চ থেকেই নিয়মিত গুজরাট সফর কয়েকগুন বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতি সফরেই ঘোষণা করেছেন গুচ্ছ প্রকল্প। এই সময়কালে অন্যান্য রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী মোট যত সফর করেছেন তার থেকে কয়েকগুন বেশি সফর করেছেন গুজরাটে এবং সময়ও বেশি কাটিয়েছেন গুজরাটে। আরও লক্ষ্যনীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য সফরের খতিয়ানে সকলের শীর্ষে মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাট। তারপরে আছে উত্তর প্রদেশ। কারণ উত্তর প্রদেশ তার নিজের রাজ্য না হলেও সেই রাজ্যেই তার নির্বাচন ক্ষেত্র। এছাড়া অন্য যে রাজ্যগুলি মোদীর সফর তালিকায় থাকে সেগুলি সবই বিজেপি শাসিত রাজ্য। অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য তথা বিরোধী শাসিত রাজ্যে সচরাচর মোদী পদার্পণ করেন না। বিরোধী শাসিত রাজ্যে মোদীর আনাগোনা হলে বুঝতে হবে সেরাজ্যে ভোট আসছে। তেমনি গুজরাট ব্যতীত অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যে মোদী সফরের বহর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় নির্বাচন আসন্ন।


চমকপ্রিয় প্রচার সর্বস্ব মোদী যে ক্ষমতার কাঙাল তা তার প্রতিটি পদক্ষেপেই স্পষ্ট। তার সব পদক্ষেপের একটাই লক্ষ্য ভোট। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ, জাতি তথা দেশের মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা যতটা তার চেয়ে তিনি অনেক বেশি তার দলের প্রতি, হিন্দুত্বের প্রতি এবং বিজেপি পদ রক্ষার প্রতি। প্রধানমন্ত্রী কোনও দলের হন না; প্রধানমন্ত্রী দেশের, জনগণের। প্রধানমন্ত্রী হবার পর কেউ দলের অনুশাসনে চলেন না, চলেন সংবিধানের অনুশাসনে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম। পদে পদে তিনি সংবিধানের নির্দেশকে অবজ্ঞা, অবমাননা ও অবহেলা করেন। পরিবর্তে সঙ্ঘের আদর্শই তার আচরণীয় হয়ে ওঠে।

তাই প্রধানমন্ত্রী তার ভাষ্যে পদে পদে ধর্মীয় বিভাজন উসকে দেন। ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অশ্রদ্ধা-অস্বীকার করে সঙ্ঘ কথিত কাল্পনিক ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অগ্রাধিকার দেন। কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতাকে উৎসাহিত করেন। বহু ধর্ম, মত, ভাষা, সংস্কৃতির বৈচিত্রে ভরা ভারতের উজ্জ্বলতাকে অস্বীকার করে সঙ্ঘের হিন্দুত্বের স্বৈরাচারী প্রয়োগকেই আশ্রয় করেন।


ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যগত পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে না। তিনি নিজে যে রাজ্যের মানুষই হয়ে থাকুন না কেন তার চোখে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমান গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি যে ভাষার মানুষ হোন না কেন সব ভাষার প্রতি তাঁর সমান শ্রদ্ধাশীল হবার কথা। আমাদের সংবিধান সেই মূল্যবোধেরই শিক্ষা দেয়।


প্রধানমন্ত্রীর আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখা। ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির কারনে কারও প্রতি কোনও বৈষম্য চলে না। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর আরও দায়িত্ব থাকে ঐতিহাসিক ও সামাজিক কারণে পিছিয়ে পড়াদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া। তাদেরকে অন্যান্যদের সঙ্গে একই সারিতে নিয়ে আসার জন্য বিশেষ সরকারি ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।


এত বড় একটা দেশে নির্মম যে সত্য আমাদের কষ্ট দেয় তা হলো রাজ্যে রাজ্যে, অঞ্চলে অঞ্চলে অসাম্য। আঞ্চলিক ও রাজ্যগত অসাম্য। আঞ্চলিক ও রাজ্যগত অসাম্য-বৈষম্য দূর করা সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর দায়। মোদী যে সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও অযোগ্য তা তিনি পদে পদে প্রমাণ করে দিয়েছেন। তার পছন্দের রাজ্যকে সুয়োরানির নজরে দেখা সেই অযোগ্যতারই একটা প্রমাণ।

 

Comments :0

Login to leave a comment