অনিল কুণ্ডু – নামখানা
সামুদ্রিক ঝড়ে গভীর সমুদ্রে মাঝ রাতে ট্রলার দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ওই ট্রলারের মাঝিসহ ৯ জন মৎস্যজীবী। প্রিয়জনের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তাঁদের পরিবার পরিজনেরা। শুক্রবার গভীর রাতে আচমকা সামুদ্রিক ঝড়ে বঙ্গোপসাগরে ‘এফ বি বাবা গোবিন্দ’ নামে মাছ ধরার ট্রলারটি উল্টে যায়। জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের বাঘের চর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার গভীরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই ট্রলারের ৮ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে শনিবার দুপুরে নামখানা ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে। এদিন নামখানা ঘাটে মৎস্যজীবীদের পরিবার পরিজনেরা ভীড় করেন। স্বজন হারানোর আশঙ্কায় শোকার্ত তাঁরা।
মঙ্গলবার নামখানা ঘাট থেকে ১৭ জন মৎস্যজীবী ওই ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে পাড়ি দেন। শুক্রবার গভীর রাতে আচমকা সমুদ্রিক ঝড়ে ট্রলারটি উল্টে সমুদ্রে ডুবে যায়। সেই সময় ওই ১৭ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে ৮ জন মৎস্যজীবী ট্রলারের পাটাতনে ছিলেন। বিপদ বুঝে তাঁরা চীৎকার করে সমুদ্রের জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরাতে থাকেন। দুর্ঘটনা স্থলের আশে পাশে মাছ ধরতে থাকা অন্য ট্রলারের মৎস্যজীবীরা তাঁদেরকে উদ্ধার করেন। বাকি ৯ জন মৎস্যজীবী সেই সময় ওই ট্রলারের কেবিনের মধ্যে ছিলেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে দুর্ঘটনার সময় তাঁরা ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি গভীর সমুদ্রের জলে উল্টে ডুবে যায়।
এদিকে গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ট্রলারটিকে উদ্ধার করতে শনিবার সকাল থেকে দিনভর চেষ্টা করা হলেও উদ্ধার করা যায়নি। উপকূল রক্ষী বাহিনী ও সমুদ্রে থাকা অন্য ট্রলার গুলি ওই ট্রলারটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় ট্রলারটিকে বেঁধে আনার চেষ্টা করা হলেও বারার কাচি দড়ি ছিঁড়ে গেছে। ট্রলারটিকে উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে আসতে ডুবুরির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এদিন ডুবুরিদের একটি দল পাঠানো হয়েছে।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি এদিন জানান, শুক্রবার রাত প্রায় ২টো নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ট্রলারটির উদ্ধার কার্যে ডুবুরির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থলে শনিবার বিকালে ডুবুরি পৌঁছলেও এদিন তাঁরা কাজে নামতে পারেননি। রবিবার ভোর থেকে তাঁরা কাজ শুরু করতে পারবেন। নিখোঁজ ওই ৯ জন মৎস্যজীবী ট্রলারের কেবিনের মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি এদিন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ডুবে যাওয়া এফ বি বাবা গোবিন্দ ট্রলারের ৮ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে নামখানা ঘাটে নিয়ে আসার পর তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার ৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ২জনের শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাঁদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ট্রলার থেকে উত্তাল সমুদ্রের জলে তাঁরা ঝাপ দিলেও জলের সঙ্গে তাঁদের লড়াই করতে হয়েছে।
মৎস্যজীবী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে নিখোঁজ মৎস্যজীবীরা হলেন কানাই দাস, বাসুদেব দাস, নিরঞ্জন দাস, জগবন্ধু দাস, নিখিল দাস, শংকর দাস, মুকুন্দ বৈরাগী, পাদুরী দাস ও সৌরভ দাস। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের বাড়ি কাকদ্বীপ ও হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানা এলাকায়।
Comments :0