Hooghly polbar festival

সম্প্রীতির অনন্য বার্তা হুগলী জেলার পোলবার বহ্নুৎসবে

জেলা

একদিকে দেশজুড়ে যখন সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ ছড়াচ্ছে সেই সময় হুগলী জেলার পোলবার বহ্নুৎসব সম্প্রীতির অনন্য বার্তা দিলো। লালন ফকির লিখেছেন "অন্তরে যার সদাই সহজ রূপ জাগে। নাম বলুক না বলুক মুখে। যার কীর্তিকে সংসার। নামের অন্ত নাই কিছু তার, বলুক যে নাম ইচ্ছে হয় যার, বলে যদি রূপ দেখে।" হুগলীর পোলবা ব্লকের জাড়ুড়া গ্রামের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে লালনের সেই আদর্শকেই পূর্ণ রূপ দিলেন। প্রতিবছরের মতো এইবছরেও বৃহস্পতিবার সুগন্ধ্যার জারুড়া গ্রামে এই বহ্ন্যুৎসব আয়োজিত হয়েছিলো। সুগন্ধ্যা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গ্রাম জারুড়া এখানেই মোকাম পিরের মাজার রয়েছে। বহু প্রাচীন কাল থেকেই সনাতনী ও ইসলামী সংস্কৃতির মানুষের মিলনস্থল হয়ে আছে এই এলাকা। প্রতিবছর শ্রীপঞ্চমী তিথির পরের যেকোন বৃহস্পতিবার দেখে এই অঞ্চলের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এই মাজারে একত্র হন। বাড়ি থেকে চাল ডাল নিয়ে আসেন। কাঠের জ্বালে সবাই মিলে সেই চাল ডাল দিয়ে খিচুড়ি ভাজা রান্না করে সবান্ধবে উপভোগ করেন। শুধু পোলবা ব্লক নয় পাশের জেলা হাওড়া ও বর্ধমান থেকেও দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এই গ্রামে আসেন বহ্ন্যুৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য।


স্থানীয় মানুষজন জানান চারিদিকে যতই হানাহানি থাক আমরা এখানে ভাইয়ের মতোই থাকি। প্রতিবছর আমরা সবাই মিলে এখানে একত্র হই। খুব ভালো লাগে। আমাদের দুই সম্প্রদায়ের বাড়ির কুটুম আসে। সকলে একসাথে হই। এ যেন এক মহামিলনক্ষেত্র। এলকার বাসিন্দা শেখ আজাদ আলি জানান হিন্দু মুসলিম সব সম্প্রদায় মিলেই আমরা উৎসব পালন করি। সবাই মিলে রেঁধে বেড়ে খান। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। 
এলকার বাসিন্দা অশীতিপর রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন বছর দশেক ধরে আমরা এই উৎসবে আসছি। মোকাম পির নামে প্রচলিত হলেও এটা সব ধর্মের মিলনক্ষেত্র। আমাদের আত্মীয় কুটুম্বরা আসেন প্রতিবছর সবাই মিলে খোলা আকাশের নীচে রেঁধে বেড়ে খাই এটা একপ্রকার সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র বলা চলে। প্রতিবছর শ্রীপঞ্চমীর পরে বৃহস্পতিবার দেখে এখানে মেলা বসে। এখন যা লোক দেখছেন একটু বেলায় পুরো মাঠ ভরে যাবে।


এলাকার বাসিন্দা কল্পনা মল্লিক বলেন প্রতিবছরই আসি দুপুরটা বেশ আনন্দে কাটে। ৮-১০ বছরের বেশি সময় ধরেই আমরা এখানে আসছি। আমার বোনেরা তাদের ছেলেপুলে সবাই আসি এখানে। আমার বোন এসেছে পান্ডুয়া থেকে। পান্ডুয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণা দাস জানান প্রতিবছর দিদির বাড়ি আসি ভালোই লাগে। বিভেদ আছে থাকবেও তবে বিবিধতার মাধ্যমে যে মিলনের সংস্কৃতি তাকে কোন মৌলবাদ ধ্বংস করতে পারেনা। সুগন্ধ্যা পঞ্চায়েতের জারুড়া গ্রাম গ্রাম বাংলার সেই সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment