ভাঙচুর যারা করল ছবি থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। অপরাধীদের আড়াল করতে প্রতিবাদীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। কিন্তু সমন দিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না। আর জি করে ধর্ষণ-খুনের আসল পাণ্ডাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে লড়াই।
শনিবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সমনের জবাব দিয়ে বেরিয়ে এই মনোভাব ঘোষণা করে দিয়েছেন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং আইনজীবী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ছিলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বসু, এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী এবং আইনজীবী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদে নামায় তাঁদের সমন পাঠিয়েচিল কলকাতা পুলিশ।
কলেজ স্ট্রিট থেকে আইনের ছাত্ররা, আইনজীবীরা, ছাত্র-যুব-মহিলারা পরপর মিছিল করে সমনের জবাব দিতে যান লালবাজারে। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাস্তা আটকায় পুলিশ। যাঁদের নামে সমন তাঁরা হাতে হাত ধরে যান লালবাজারে। বাকি জমায়েত অপেক্ষায় ছিল তাঁদের ফিরে না আসা পর্যন্ত। প্রবল বৃষ্টিতে কলেজ স্ট্রিট, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে প্রায় হাঁটু সমান জল। তাতেও আটকায়নি মিছিল। রাস্তার দু’ধারে বহু মানুষ ভিড় করে দেখেছেন মিছিল। মোবাইলে নিয়েছেন ছবি।
লালবাজারের সামনে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘এতদিন বলেছি ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এখন বলছি ‘ফাইট ফর জাস্টিস’। বিচার চাইলে রাস্তায় থাকতে হবে। লড়াইয়ে থাকতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছে বলে প্রতিবাদী হেনস্তা করছে পুলিশ। কিন্তু প্রতিবাদের কন্ঠস্বর চাইলেই বন্ধ করে দিতে পারবে না পুলিশ। আজও পুলিশকে বলা হয়েছে প্রতিবাদীদের নামে গাদা গাদা নোটিস পাঠানো বন্ধ করতে হবে। এসব নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। আর জি করের খুনী ধর্ষকদের ধরতে হবে। আর্থিক দুর্নীতির মাথাদেরও ধরতে হবে। সেই বিচার চাইতেই তো পতে নেমেছেন গোটা রাজ্যের মানুষ।’’
আইনজীবী আন্দোলনের নেতা মিহির ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কখনও বেআইনি হতে পারে না। পুলিশকে বলেছি সংবিধানেই সেই অধিকার আমাদের রয়েছে। বরং, আপনাদের পাঠানো নোটিশের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। পুলিশকে বলেছি যে চাইলে আইনি পদক্ষেপ নিন। হাইকোর্টে দেখা হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে পুলিশই তদন্তে চরম গাফিলতি দেখিয়েছে। এক বিচারপতিকে বলতে হয়েছে যে ত্রিশ বছরের কর্মজীবনে এমন ধারায় তদন্ত দেখেননি। তারপর প্রতিবাদীদের নামে এমন সমন পাঠানোর কারণ থাকতে পারে না।’’
১৪ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে ভেঙে দেওবা হয় প্রতিবাদী এবং বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের মঞ্চ। এরা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। প্রমাণ লোপাটে এই হামলা, অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবাদীরা। দুষ্কৃতীদের ছবি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগও সামনে আসে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী ভাঙচুরে মধ্যে ডিওয়াইএফআই’র পতাকা দেখতে পেয়েছিলেন! শুরু হয় সমন। ছাত্র-যুব কর্মীদেরই কেবল নয়, এর আগে সমন পাঠিয়ে ডাকা হয় দুই চিকিৎসক কুনাল সরকার এবং সুবর্ণ গোস্বামীকে। সেদিনও তাঁদের সঙ্গে চিকিৎসকের অভূতপূর্ব মিছিল গিয়েছিল লালবাজারে।
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছি। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চাইছি। উনি হামলাবাজদের ঠেকাতে পারেন না। আর প্রতিবাদীদের হেনস্তা করেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যদি আসল অপরাধীদের ধরতে চায় গোটা রাজ্যের মানুষ সাহায্য করবে। প্রতিবাদীরা তো বিচারের দাবিই তুলছে। তারাও সাহায্য করবে। কিন্তু এরা সে কাজ করছে না।’’
R G KAR LALBAZAR
অপরাধীদের আড়াল করতে প্রতিবাদীদের হেনস্তা পুলিশের, লালবাজারে মীনাক্ষী
×
Comments :0