Editorial

মমতার ধর্ম সহায়

সম্পাদকীয় বিভাগ


লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধনের কয়েকদিন আগেই রাজ্য সরকারের সদর দপ্তর নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিলেন ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ দেদার খরচে আরএসএস-বিজেপি’র থেকে তৃণমূল মোটেই পিছিয়ে নেই। মোদী-যোগী-শাহরা অযোধ্যায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ করছেন। আর এরাজ্যের দীঘায় মমতা তৈরি করছেন জগন্নাথ মন্দির। মোদী ২২জানুয়ারি ভোটের তাগিদে উদ্বোধন করবেন অসম্পূর্ণ রামমন্দির। একই লক্ষ্যে এপ্রিলে মমতা উদ্বোধন করবেন জগন্নাথ মন্দির। রামমন্দিরকে ঘিরে ধর্মীয় পর্যটন সার্কিটের চোখ ধাঁধানো পরিকাঠামো নির্মাণে যোগী সরকার ও মোদী সরকার মিলে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে অকাতরে ঢালছে। অনেকটা একই কায়দায় ওডিশার পুরীতে জগন্নাথ মন্দিরকে ঘি‍‌রে কোটি কোটি টাকা ঢালছে বিজেপি’র পরোক্ষ সহযোগী বিজেডি সরকার। মমতা ব্যানার্জিও রাজ্যের সর্বত্র মন্দির ও ধর্মস্থানগুলিতে ভোটের রাজনীতিতে বিজেপি’র সঙ্গে পাল্লা দিতে সরকারি টাকা দু’হাতে খরচ করে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য ধর্মীয় উন্মাদনা ও ধ‌র্মীয় জিগির তুলে সরল ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভোটে জেতা। মানুষের জীবন-জীবিকার মৌলিক প্রশ্নগুলি দূরে সরিয়ে ধর্মীয় আবেগে মানুষকে আচ্ছন্ন করে ভোট বাক্স ভরায় মরিয়া প্রয়াস চলছে। দেশজুড়ে ভয়াবহ বেকারি, আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, চারদিকে রোজগারের আকাল, কৃষিতে সঙ্কট অথচ আদানি-আম্বানিদের মতো কর্পোরেট মালিকদের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে। নিচের তলার পঞ্চাশ শতাংশ মানুষকে নিঃস্ব-রিক্ত করে উপরতলার দশ শতাংশের ঘরে সম্পদের পাহাড় জমছে। শিক্ষা-গবেষণা-জ্ঞানচর্চা থেকে বিজ্ঞান-যুক্তিবাদকে নির্বাসন দিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করে ধর্মান্ধতার কল্পিত ভাষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের উদার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে একদলীয় ধর্মভিত্তিক স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চা‍‌ইছে।
এর বিরুদ্ধে বামপন্থীরা সহ অন্যান্য বিরোধী দল যখন ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাইছে তখন কিছু ছদ্ম বিজেপি বিরোধী দল নানা ছলনার আশ্রয় নিয়ে প্রকারান্তরে আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাকেই পুষ্ট করছে। এরাজ্যের তৃণমূল তেমনই একটি দল। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নির্লজ্জভাবে ঘোষণা করছেন তাঁর সরকার ধর্মের জন্য কত টাকা খরচ করছেন। ধর্ম যেখানে নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয় সেখানে রাজনৈতিক দল বা সরকার তাতে নাক গলাতে পারে না। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি হিসাব দিচ্ছেন, গত বছরেই নাকি তিনি ধর্মের জন্য হাজার কোটির বেশি খরচ করে ফেলেছেন। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য সরকারের খরচ বছর বছর বাড়তে বাড়তে এবছর আড়াইশো কোটি ছাড়িয়েছে। সরাসরি সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি পঞ্চায়েতগুলিও নিজ নিজ এলাকায় ভোটের কথা মাথায় রেখে ধর্মস্থানে টাকা ঢেলে যাচ্ছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক জরুরি বিষয়গুলি বাদ দিয়ে ধর্মে বিনিয়োগকেই উন্নয়নের নতুন দিশা হিসাবে দেখাতে চাইছে।

Comments :0

Login to leave a comment