BANKURA COLLEGE PROTEST

ক্লাস থেকে বের করা হলো প্রতিবাদী ছাত্রীদের, বিক্ষোভ বাঁকুড়ায় (দেখুন)

জেলা

শনিবার বাঁকুড়া সারদামণি মহিলা মহাবিদ্যাপীঠের সামনে ছাত্রীদের বিক্ষোভ।

মধুসূদন চ্যাটার্জি: বাঁকুড়া

চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছিলেন ছাত্রীরা। তার জন্য দুই ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন বিভাগীয় প্রধান। প্রতিবাদে শনিবারও কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন ছাত্রীরা। বাঁকুড়া সারদামণি কলেজের এই ঘটনা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান শ্যামল সাঁতরা তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়কও। ছাত্রীরা সরাসরি বলছেন এই কলেজেও ‘থ্রেট কালচারের’ শিকার হতে হলো তাঁদের।
ভূগোল বিভাগের ৫ম সেমিষ্টারের দুই ছাত্রী অপর্ণা মণ্ডল এবং শ্রেয়সী টুডুকে শুক্রবার বের করে দেন বিভাগীয় প্রধান। তাঁরা বলেছেন, আর জি কর হাসপাতালের জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ করা কী অন্যায়?
অভিযোগ, ক্লাসের বাকি ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে সাঁতরা বলেছেন যে কেউ কোন আন্দোলনে থাকলে তারও পরিণতি এরকম হবে। ওই দুই ছাত্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবব্রত মুখার্জির বিষয়টি জানালেও কোনও বিচার পাননি। 
এদিন এসএফআই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ডেপুটেশন দেওয়া দিয়ে দুই ছাত্রীকে ক্লাস করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কলেজের ভেতরে এই ধরনের ‘থ্রেট’ বন্ধ করার দাবিও তুলেছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, ওই দুই ছাত্রী ফের ক্লাসে করবে বলে জানান। 
বাঁকুড়া সারদামণি কলেজের ছাত্রীরা ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজ থেকে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মিছিল করে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামের সামনে বিক্ষোভ সভাতেও শামিল হয়। কলেজের গেটের সামনেও বিচারের দাবিতে ছবি এঁকে ও শ্লোগানে লেখা হয়। তার পর থেকেই তৃণমূলের নেতা রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা ছাত্রীদের এই আন্দোলন নিয়ে নানা ধরনের কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ভূগোলের ক্লাস চলাকালীন সময় ক্লাসের ছাত্রী অপর্ণা মন্ডল ও প্রেয়সি টুডুকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। 
অপর্ণা মন্ডল ও প্রেয়সি টুডু জানায়, আমার স্যারকে জিজ্ঞাসা করি কী অপরাধ আমাদের? উনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের আমার ক্লাস করতে দেব না। বেরিয়ে যাও তোমরা। 
শনিবার সকাল ১১টার সময় অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা কলেজে এসে সোজা ভূগোল বিভাগে চলে যান। তিনি এই বিভাগের প্রধান। সাংবাদিকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু ছাত্রীকে নিয়ে এসে জানান, ওই দুই ছাত্রী ক্লাসে শৃঙ্খলা ভাঙছিল। তাই বের করে দিয়েছেন। তিনি যে ছাত্রীদের নিয়ে আসেন তাঁর পক্ষে মতামত দেওয়ার জন্য তাঁরা কার্যত নীরবই ছিলেন। জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি আন্দোলন করার জন্য ক্লাস থেকে ছাত্রীদের বের করে দিতে পারেন কিনা? তাঁর কি সেই নৈতিক অধিকার আছে? কোন কথার উত্তর না দিয়ে তিনি একপ্রকার পালিয়ে গিয়ে ভুগোল বিভাগের ঘরে ঢুকে পড়েন। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী জানান, আমাদের ডেকে আনা হয়েছিল স্যারের পক্ষে (শ্যামল সাঁতরা) বলার জন্য। এদিন বাঁকুড়ার একাধিক কলেজের অধ্যাপকরা জানান, এইভাবে কোন ছাত্রছাত্রীকে কেউ ক্লাস থেকে বের করে দিতে পারেন না।  ব্যবস্থা নিতে গেলে কলেজের টিটার্স কাউন্সিলে আলোচনা করতে হবে। অভিভাবককে জানাতে হবে। খেয়ালখুশি মতো কাউকে ক্লাস থেকে বের করা যায় না। 
একাধিক অধ্যাপক জানান, শ্যামল সাঁতরার অধ্যাপক হিসাবে সারদামণি কলেজে যোগদান নিয়েও বহু প্রশ্ন আছে। ২০১৭ সালে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন সেই সময় কলেজ সার্ভিস কমিশনে তিনি ইন্টারভিউ দিয়ে অধ্যাপনার চাকরি পান। কিন্তু মন্ত্রীর পদ ছেড়ে ইন্টারভিউ দেননি। তা আইনত করা যায় না। রাজনৈতিক ক্ষমতাবলেই এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ।

Comments :0

Login to leave a comment