এই ছোট ছোট পিপির বাচ্চাদের এখন কোথায় পাঠাবো? মেন রোড পেরিয়ে সেই এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। বললেন টুম্পা বিবি। না খাটলে আমাদের খাওয়া হয় না। গাড়ি ভাড়া করে পাঠানো সম্ভব, আপনি বলুন না? স্কুল বন্ধ হয়ে গেল, এখন পড়াশুনার কী হবে? প্রশ্ন তনুজা বিবির। স্কুল কমিটির সদস্য আব্বাস আলি জানালেন পঞ্চায়েত সদস্য কোহিনুর বিবিকে জানিয়েছি। বলেছেন দেখছি কি করা যায়। মাসিয়ায় একটা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র(এস এস কে)আছে। সেখানে তিনজন সহায়িকা আছেন। একজন যদি এখানে আসেন তাহলে ভালো হয়। দাবি গ্রামবাসীদের। রাজপথ এস এইচ জির সদস্য সুরিয়া বিবি,আসরাফুন নেছার, কোহিনুর বেগমরা জানালেন, স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। মিড ডে মিলও বন্ধ হয়ে গেল। আমরা দশজন ভাগাভাগি করে রান্নার কাজ করতাম। মাসে ৩ হাজার টাকা দশজন ভাগ করে নিতাম। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।
উত্তর ২৪পরগনার বাদুড়িয়া ব্লকের বাদুড়িয়া উত্তর চক্রের রামচন্দ্রপুর রাজপথ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি গত ২৮ফেব্রুয়ারির পর থেকে বন্ধ হয়ে আছে। কেন্দ্রের একমাত্র সহায়িকা নাসিমা বিবি ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নিয়েছেন। গভীর সঙ্কটে সংখ্যালঘু পরিবারের ছাত্র ছাত্রী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। আশঙ্কায় অবিভাবক অবিভাবিকারা। কী হবে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা? প্রশ্ন দীনমজুরের গ্রাম ইসলামপুরের। বসিরহাট-২নং ব্লকে এমনি ভাবে ১১টি এস এস কে বন্ধ হয়ে গেছে।
বামফ্রন্টের সময়কালে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে পঞ্চম বামফ্রন্ট সরকার ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনার সুযোগ করে দিতে সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র(এস এস কে) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র(এম এস কে) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সময় বামফ্রন্ট পরিচালিত বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ৫০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও ৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলে। ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন খাল বা নদীর ধারে বা কোনো বিচ্ছিন্ন জায়গায় জনপদগুলি গড়ে উঠেছে। নদী,খাল পার হয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় অথবা মেন রোড দিয়ে দূরবর্তী স্থানে কোন বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
সেই কারণে ঘরের দুয়ারে ৩জন সহায়িকা নিয়োগ করে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং ১জন মুখ্য সম্প্রসারক ও ৪ জন সম্প্রসারককে নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা হয়। স্থানীয়ভাবে অভিভাবকদের সহায়তা দানে জমি সংগ্রহ করে শিক্ষা কেন্দ্রের ভবন সরকারি আর্থিক সাহায্যে নির্মিত হয়। অভিযোগ, ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল সরকারের রোষানলে পড়ে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলি। সহায়িকা অবসর গ্রহণ করলে নতুন করে আর সহায়িকা নিয়োগ হয়নি। এর ফল স্বরূপ বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির রামচন্দ্রপুর উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০১৪ নং ( ইসলামপুর/ রাজপথে) শিশু শিক্ষা কেন্দ্র গত ইংরাজী ২৮ ফেব্রুয়ারি '২০২৩ বন্ধ হয়ে গেল। একই রকমভাবে বাদুড়িয়ার চন্ডীপুর ও রঘুনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
অভিযোগ, কোন হেলদোল নেই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির। এর পাশাপাশি ১জন মুখ্য সম্প্রসারক ও ৪ জন সম্প্রসারককে নিয়ে বাদুড়িয়া ব্লকে যে ৫টি এম এস কে তৈরি করা হয়েছিল,সেখানেও বাড়ছে ড্রপ আউট। এগুলিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাজনক তৈরী হয়েছে। যেমন শহীদ তিতুমীরের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে যে এম এস কে'টি আছে তার ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২০০-২৪০জন। বর্তমানে ৮২জন। কারণ কী? বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য শঙ্কর ঘোষ বলেন, অনুন্নত এই সমস্ত এলাকায় মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়তে আসতো। গ্রামে কাজ নেই। ফলে ভিনরাজ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে ড্রপ আউট। ঘরে অভাব অনটনের কারণে কেউ কেউ আবার পড়াশুনা ছেড়ে শিশু শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। তিনি এও জানান রামচন্দ্রপুর উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয় রামচন্দ্র খাসপুর সরোজিনী নাইডু বালিকা বিদ্যালয়টিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। ২০১১ সাল পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে ৭০০-৭৫০ ছাত্রী ছিল ওই বিদ্যালয়ে। ড্রপ আউট সহ অন্যান্য কারণে এখন সাকুল্যে ২৩৪ জন ছাত্রী পড়ে স্কুলটিতে।
স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রত্না বিশ্বাস জানান ৪ জন শিক্ষিকা ও ১ জন প্যারাটিচার, ১জন কম্পিউটার শিক্ষক, ১ জন গ্রুপ ডি কর্মী ও ১জন করণিককে নিয়ে স্কুল চালাতে হচ্ছে খুবই অসুবিধার মধ্যে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি সে কথা। বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকার পোষিত লাইব্রেরী সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
Comments :0