RSS post editorial

সঙ্ঘ পরিবারের আসল পরিচয় কপটচারিতা

সম্পাদকীয় বিভাগ

মৃদুল দে

নাগপুরে কে বি হেগড়েওয়ারের নেতৃত্বে ১৯২৫ সালের আরএসএস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রায় ১০০ বছর ধরে আরএসএস বলে আসছে যে এটা কেবলমাত্র একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ওদের কাজের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিচয়ের বিন্দুমাত্র কোন মিল আছে ? নেই, বরং বিপরীতটাই ওদের আসল পরিচয়। এই দ্বিচারিতাই সঙ্ঘ পরিবারের ওপর থেকে নিচ সকলের দীক্ষামন্ত্র, ফ্যাসিস্ত হিন্দুরাষ্ট্রই যাদের একমাত্র লক্ষ্য এবং তার জন্য তাদের যে-কোনও কাপট্য অবাধ। হেগড়েওয়ার থেকে আজকের আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত, জনসঙ্ঘের  শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আদবানি, অটল বিহারী বাজপেয়ী থেকে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত একই ধারা, একই মন্ত্র এবং একই কৌশল।
আরএসএসের অধীনে অনেকগুলি সংগঠন তৈরি হয়েছে, এখন তার সংখ্যা প্রায় কয়েক ডজন। রাজনৈতিক মুখ হিসাবে জনসঙ্ঘ এবং পরে বিজেপি আরএসএসের রাজনৈতিক দল। রাজনীতিতে যখন হালে পানি পাচ্ছে না তখন তারা অন্য পথ নেয় — সরাসরি সম্প্রদায়িক এজেন্ডা। তখন খারাপ কংগ্রেসেরও হাল। এজন্য আরএসএস ১৯৬৪ সালে গঠন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা ইত্যাদিতে উসকানি, জড়িত হওয়া, সংঘটিত করার মাধ্যমে সঙ্ঘ পরিবার তাদের শক্তি সঞ্চয় করতে প্রয়াসী হয়। সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার প্রতিযোগিতায়  রাজীব গান্ধীর সরকার ১৯৮৬ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি বাবরি মসজিদের বন্ধ দরজা খোলার পর থেকেই দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আবহাওয়া চরমে ওঠে।  দু’দশকে সুপ্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এ অবস্থার সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুসলিম মৌলবাদীরাও সক্রিয় হয় ওঠে। এই উভয় মৌলবাদীরা একে অপরের রসদ ও খোরাকের গান দেয়।


বাবরি মসজিদ ভাঙার ক্ষেত্রে নরসিমা রাও সরকারের অপরাধমূলক নিষ্ক্রিয়তা এবং আরএসএস বিজেপি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাবরি মসজিদ না - ভাঙার প্রতিশ্রুতির ওপর অগাধ বিশ্বাস ভারতে ১৯৯২-র ৬ ডিসেম্বর এই কালো দিন ডেকে এনেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষার ক্ষেত্রে সবসময় সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থান যে বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলির পুলিশ তাদের উপর মসজিদ ভাঙার পরেও সরকার যথেষ্ট আস্থা রাখেনি। ৩০ বছর ধরে এ ভয়ংকর ঘটনার পরিণতিতে আজকে ভারত এই অভূতপূর্ব বিপদের মুখোমুখি। সঙ্ঘ পরিবার প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি ভেঙে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল; এই ধরনের কাজের ধারাবাহিকতাই এই পরিবার বহন করে চলেছে আরও আগ্রাসীভাবে এবং আরও চরম স্বৈরতান্ত্রিক পথে। হিটলারি শাসনের যেন অবিকল এক রাজত্ব পরিচালনা করছে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত বিজেপি সরকার।
ঠিক তা-ই সম্প্রতি প্রতিধ্বনিত হয়েছে আরএসএসের মুখপত্রগুলির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোহন ভাগবতের বক্তব্যে। জার্মান জনগণের যাবতীয় প্রতিকূলতার জন্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের দায়ী করে হিটলার ইহুদি গণনিধনের ডাক দিয়েছিল কাজে লাগিয়েছিল দলের তাণ্ডব বাহিনী ও গেস্টাপো বা গুপ্ত পুলিশকে এবং গোটা ইউরোপে তা কার্যকর করেছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ট্রেড ইউনিয়ন ধ্বংস করে বৃহৎ ধনকুবের ও পুঁজির নির্বিঘ্ন সেবা করতে ফ্যাসিস্তদের সবসময় একটা  অভ্যন্তরীণ শত্রু দরকার হয়, উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে ফ্যাসিবাদকে রূপ দিতে। এভাবে একই ধাঁচে ভারতেও অভ্যন্তরীণ শত্রু চিহ্নিত করে নিয়েছে হিটলারের ঘোষিত ভক্ত আরএসএস এবং সঙঘ পরিবার। "এক হাজার বছর ধরে হিন্দু সমাজ যুদ্ধে লিপ্ত আছে এবং এই যুদ্ধ করার জন্য আগ্রাসী মনোভাব তাদের নেওয়া স্বাভাবি’’— এই উক্তি মোহন ভাগবতের। এই যুদ্ধ চালাচ্ছে আরএসএস ব্রিগেড। সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় জিইয়ে রেখে তা আরও তীব্র করার জন্য ভাগবত বলেছেন মুসলিমদের ভয়ের কোনও কারণ নেই! আরএসএস যেন ভারতীয় হিন্দুদের একচেটিয়া মালিকানার অধিকারী এবং মুসলিমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকতে পারবে কি পারবে না তারও মালিকানা নিয়ে নিয়েছে আরএসএস। নির্বাচনের পর বিজেপি’র নির্বাচিতরা সংবিধানের নামে গদগদ হয়ে শপথ নেন। নির্বাচন মিটে গেলে সংবিধান-বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য গোটা সঙ্ঘ পরিবারের প্রায় সকলেই বলতে থাকে ও মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের দিয়েও বলানো হয়। চুপ করেই থাকেন প্রধানমন্ত্রী; ভাগবত তখন বেহদিশ। নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষভাবে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য হিংসাত্মক আস্ফালনমূলক ভাষণ দেন। এ ঘৃণা-ভাষণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলেও কোনও ফল হয় না। সরাসরি মোহন ভাগবতই এই বিষাক্ত হুমকি দিয়ে ঘৃণা ছড়াতে নেমে পড়েছেন, হামেশাই করছেন। কাকে তোয়াক্কা, কিসের তোয়াক্কা!


শুক্রবার ১৩বজানুয়ারি ঘৃণা-ভাষণের এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এক হাত নিয়েছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গোবিন্দপুরিতে আয়োজিত ধর্ম সংসদে যে চরম ঘৃণা-ভাষণ উৎসারিত হয়েছিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ শুধু এফআইআর রেজিস্ট্রি করতেই সময়  নিয়েছে পাঁচ মাস এবং কোনও গ্রেপ্তার করেনি, তদন্তও করেনি এবং আজ পর্যন্ত কোনও চার্জ শিট পর্যন্ত দেয়নি। এতদিন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের দিল্লি পুলিশ কী করছিল ? আদালতের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে। সুদর্শন নিউজ টিভির সম্পাদক একইভাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বর্ষণ ও হুমকি দিয়েছিলেন তাতেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ‘‘নাম কোয়াস্তে এফআইআর করা নয় উপযুক্ত তদন্ত ও জরুরি ব্যবস্থা নেওয়াই আসল কথা, এ ব্যাপারে বিরাট ঘাটতি। ঘৃণা বিদ্বেষমূলক ভাষণ ভয়ংকর এক বিপদ, এটা বন্ধ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বর্তায়।’’ বিভাজন তৈরি করার জন্য তো সমস্ত টিভি চ্যানেল পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট, একপেশে বিতর্ক পরিবেশন করছে, তারা যেন পার না পায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা সুপ্রিম কোর্ট বলেছে। মিডিয়ার স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ঘৃণা ভাষণের জন্য শাস্তিও প্রয়োজন। এটাই সুপ্রিম কোর্টের অভিমত। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছে সরকার আইন পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে কিন্তু আট বছর ধরে যেভাবে যে- হারে এবং যে মাত্রায় হুমকি ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং বিষাক্ত আচরণ ছড়ানো হচ্ছে সেটা হিন্দুত্ববাদীদের স্বার্থই রক্ষা করছে। এজন্য পরিকল্পিত মৌনতা মোদীদের।  এ কারণেই যাবতীয় সরকারি ব্যবস্থাগুলি অসার এবং অকেজো প্রমাণিত হচ্ছে। কোনও প্রতিশ্রুতিই মোদী সরকার রক্ষা করতে পারছে না; যখন বেকারিত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য, দুর্নীতি একটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তখনই কোনও না কোনও বিতর্ক, গণতন্ত্র হরণ, দেশের নিরাপত্তা বা সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন তুলে দৃষ্টি ঘোরাতে কর্পোরেট ও মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গোটা সঙ্ঘ পরিবার চক্রান্তে সদাব্যস্ত। 
ইতিপূর্বে এই মোহন ভাগবতের মুখ থেকেই নিঃসৃত হয়েছে, ঠিক বিপরীত কথা। মিডিয়াতে সব প্রকাশিত। ২০১৮ সালের ১৮সেপ্টেম্বর ভাগবত বলেছিলেন যেদিন আমরা বলতে শুরু করব যে ভারতে মুসলিমদের কোনও দরকার নেই সেদিন হিন্দুত্ব বলে কিছু থাকবে না। কয়েক মাস বাদে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনিই বলেছেন, হিন্দু মুসলমানরা ভাইয়ের মতো; কেবল ওদের প্রার্থনার ধরন আলাদা এবং কারো কাছ থেকে কারও কোনও ভয় নেই। এক বছর বাদে ২০২১ সালের পাঁচই জুলাই এই ভাগবতই বলেছেন যে, যারা গো-রক্ষার নামে পিটিয়ে মানুষ মারছে তারা প্রকৃত হিন্দু নয়, এরা হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভাগবত দিল্লির একটা মসজিদে যান, মাদ্রাসায় যান, ক্ষত মলমিত করার চেষ্টা করেন। মিডিয়া রিপোর্টে আরও রয়েছে ২০২২ সালের  ৫অক্টোবর জ্ঞানবাপী মসজিদ সম্পর্কে তিনি বলেছেন সর্বত্র শিবলিঙ্গ খুঁজে বেড়ানো ভালো কাজ নয়, বিতর্ক তৈরি করা আদৌ ঠিক নয়, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কে বন্ধ করবে, মদতদাতারা!
গোরক্ষার নামে যারা পিটিয়ে মারছে সেটা গোটা দুনিয়া জানে, গোটা দেশ জানে তারা কারা। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্পর্কে চুপ, যেন কিছুই জানেন না। যদি এই অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয় তাহলে সরকারের উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিদের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রথম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাস্তবে এটা হবে না, কাজেই ভাগবতের এসব উক্তিও অর্থহীন। এসব উক্তির ছড়াছড়ির মধ্যে একজন সংসদ বলেছেন হিন্দু সংস্কৃতি ও হিন্দু ধর্মকে যদি একটা সাগর ধরা হয় তবে হিন্দুত্ব একটা ময়লা ভর্তি ডোবা; ডোবা কখনো সাগরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।


এটা এখন সকলেই জানেন যে আরএসএস একটা গুরুতর কলঙ্কের অপরাধবোধ কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছে না, সম্ভবও  না, কয়লাকে আর কত ধোবে! আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। নিজেদের এই সংগ্রাম থেকে বিযুক্ত করে ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সবরকমের সহযোগিতা করেছিল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের গর্ভ থেকেই জন্ম বিজেপি’র পূর্বসূরি জনসঙ্ঘ এবং পরবর্তীকালে বিজেপি। পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি কংগ্রেস যখন স্লোগান তোলে এবং ওই দিবসটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করা ডাক দেয়, আরএসএস তখন সব জায়গায় তার স্বয়ংসেবকদের বলে যে তাদের নিজস্ব ভাগোয়া পতাকা জাতীয় পতাকা হিসাবে ঐদিন পূজিত হবে। এটাই হলো আরএসএসের দেশভক্তি। এইজন্য নেহরু তাঁর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়’ বইতে লিখেছেন, ‘‘এই সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি মুখে তত্ত্বের বেলায় ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেও তাদের বেশি আগ্রহ তাদের গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য এবং তাদের সুরক্ষায়। এই কারণে অবধারিতভাবেই এসব সুযোগ-সুবিধার জন্য তারা ব্রিটিশ সরকারের মুখাপেক্ষী হয় তার ফলেই তারা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সব রকমের বিরোধ পরিহার করে চলে।’’ ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বোম্বের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ‘আরএসএস আইনের মধ্যে থেকে নিজেদের আড়াল করে রেখেছিল, ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে যখন আন্দোলন তীব্র সেখানে অংশগ্রহণ থেকে তারা বিশেষভাবে দূরে সরে থাকে।’ সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস রাজন্যবর্গদের শাসিত রাজ্যগুলির স্বাধীনতা বিরোধী শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল এবং এজন্যই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ তারা সব সময় করে। তাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ছিল কাশ্মীরের রাজা হরি সিং যে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক ছিল। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে স্বাধীনতা সংগ্রামী সাজানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সব ফাঁস হয়ে যায়। আগ্রায় বাজপেয়ী তাঁর পৈতৃক গ্রামে এই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের নাম পুলিশের হাতে তুলে দেন এবং পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিও দেন। এজন্য তাঁর স্বল্পকালীন শাস্তি হয় এবং পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য তিন মাসের মধ্যেই জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। স্বাধীনতা লাভের আগে আরএসএস এবং তার সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো স্বাধীনতা আন্দোলনকে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে বিকৃতি বলে উল্লেখ করে। সেজন্য তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ায়। ধর্ম ভাষা জাতি নির্বিশেষে সব অংশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিল। এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিরোধিতায় আরএসএস অবতীর্ণ হয়ে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল।


এখন কাউকে না পেয়ে সাভারকারকে স্বাধীনতা আন্দোলনের  বীর সাজানো হচ্ছে। প্রথম দিকে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিলেন সন্দেহ নেই, কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ব্রিটিশদের স্বার্থ পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমা ও কৃপা প্রার্থনা করেন ব্রিটিশ শাসকদের কাছে। সেটা মঞ্জুর হয়ে, তিনি ছাড়াও পান, ব্রিটিশদের প্রতি কর্তব্যও পালন করেন। সম্প্রতি কর্ণাটকে বিজেপি’র সরকার বিধানসভায় সাভারকারের পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতি উন্মোচন করে; স্কুলে তাঁর জীবনী পড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে যেহেতু সঙ্ঘ পরিবার অংশগ্রহণ করেনি, দ্বিজাতিতত্ত্ব বা দেশভাগের তত্ত্ব প্রথম হাজির করেছিল। সেজন্য মোদী-শাহ’র উদ্যোগে গোটা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করে নতুন করে লেখার কাজ শুরু হয়েছে। বদলে দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে বিখ্যাত ঐতিহাসিকদের রচিত ভারতের ইতিহাসকে। আরএসএসের প্রচারে সবসময় বলা হয় এটাই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ। ভণ্ডামি আর কাকে বলে! 
আরএসএস-বিজেপি’র মদতদাতারা পরিচিতই —বিদেশের চরম দক্ষিণপন্থীরা বিশেষত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, আদানি-আম্বানিদের কর্পোরেট জোট, প্রায় গোটা মিডিয়া, তৃণমূলের মতো ছদ্মবেশী কিছু দল ও গোষ্ঠী, রাষ্ট্রযন্ত্রের বশম্বদ অংশ। অফুরন্ত এবং এর চেয়ে বহু বহু গুণ বেশি শক্তি সঞ্চিত আছে ফ্যাসিস্ত মতাবলম্বীদের বিরোধী, বিভাজন-বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতার ঘোরবিরোধী এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির অটুট ঐক্যের মধ্যে।

Comments :0

Login to leave a comment