Saifuddin Molla

সাইফুদ্দিনের স্মরণে সভা সীতাকুণ্ডু গ্রামে

রাজ্য জেলা

বৃহস্পতিবার ন’বছর পূর্ণ হলো। এই ন’বছরে একদিনের জন্য তাঁর খুনে অভিযুক্ত তৃণমূলকর্মীদের জিঞ্জাসাবাদ করেনি বারুইপুর পুলিশ। কোন তদন্ত হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার সীতাকুণ্ডু গ্রাম ভোলেনি সাইফুদ্দিন মোল্লাকে। 

সাইফুদ্দিন মোল্লা। বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু গ্রামের একজন এসএফআই কর্মী। ২০১৪ সালে ১৯ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে খুন করেছিল তৃণমূলের ঘাতক বাহিনী। তৃণমূল সরকার দুয়ারে সরকার করেছে কিন্তু তারা আজও বিচার দিতে পারেনি সাইফুদ্দিনের পরিবারকে।

সাইফুদ্দিন কি শুধুমাত্র একজন ছাত্র কর্মী ছিলেন তা নয়। সাইফুদ্দিন তাঁর গ্রামের গরীব ছেলে মেয়েদের বিনা পয়সায় লেখা পড়া শেখাতেন। 

সাইফুদ্দিন মোল্লার বেড়ে ওঠামৃত্যু যে সীতাকুণ্ডু গ্রামে— সেখানে বিচারের আশায় দিন কাটছে তাঁর মাবাবাভাইদের। সেই গ্রামে সাইফুদ্দিন মোল্লাকে অটো থেকে নামিয়েলোহার রড দিয়ে মেরে খুন করায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীরা বহাল তবিয়তে দখল’ বজায় রেখেছে। পুলিশ তাদের অনুমতি না পেয়ে গ্রামে পা রাখেনি। 

বৃহস্পতিবার সাইফুদ্দিনের গ্রামবাসীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমেই তারা বলেন, ‘‘নাম লিখো না।’’ তারপর কিছুটা থেমে জড়তা কাটিয়ে তার বলতে থাকলেন। তারা বলেন, ‘‘ওই নচিন সর্দারমোস্তাফা সাঁফুইরফি সাঁফুই এবং সালাউদ্দিন সর্দাররা গ্রামে ঘুরে বেড়ায়ভোটের দিন বুথ দখল করে। টিএমসির মিছিলে সামনে থাকে।’’

২০১৪ সালে ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্য মিশ্রর জনসভা থেকে ফেরার পথে বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু গ্রামে সাইফুদ্দিন মোল্লাকে হত্যা করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সেই সময় নচিন সর্দারমোস্তাফা সাঁফুইরফি সাঁফুই এবং সালাউদ্দিন সর্দার সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করা হয়। যদিও আজও কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। এই বিষয়ে পুলিশের কেউই মুখ খুলতে চাননি। সাইফুদ্দিনের ভাই নওয়াজ শরিফ এদিন জানান, ‘‘ন’বছর ধরে গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কিছু করেনি। এবার আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব বলে ভেবেছি।’’ 

সাইফুদ্দিনের স্মৃতির প্রতিশ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন সীতাকুণ্ডুতে এদিন শহীদ স্মরণ কর্মসূচির আয়োজন করে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন এবং ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন বারুইপুর পূর্ব পশ্চিম আঞ্চলিক কমিটি। প্রথমে পতাকা উত্তোলন এবং শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন সংগঠনের নেতৃত্বরা। এরপর সংক্ষিপ্ত মিছিল করে সীতাকুণ্ডু মোড়ে এসে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সর্বভারতীয় ছাত্রনেতা সুজন চক্রবর্তীবিশিষ্ট আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জী, রাজ্যের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব আতিফ নিসার, আফরিন বেগম সহ জেলার ছাত্র যুব নেতৃত্ব। দশ বছর পরেও কেন অপরাধীরা শাস্তি পেলো নাএই নিয়ে সোচ্চার হন সুজন চক্রবর্তী। উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরাও।

২০১৪র ১৯ জানুয়ারি বারুইপুরের অমৃতলাল কলেজ মাঠের জনসভা থেকে ফেরার পথে সাইফুদ্দিন মোল্লার ওপর আক্রমণ করে তৃণমূলীরা। অটো থেকে নামিয়ে লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারে তৃণমূলীরা। সীতাকুণ্ডু গ্রামে সাইফুদ্দিন একটি কোচিং চালাতেন। সামান্য টাকায় ওই কোচিংয়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পরা পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতেন। তাঁর নিজের কাজের মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সাইফুদ্দিন। তাঁকে হত্যা করার পর গ্রামে তাঁর কোচিংটাও আর চালাতে দেয়নি মুখ্যমন্ত্রীর দলের কর্মীরা।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment