Natunpata GALPO / BANDHU

নতুনপাতা গল্প / বন্ধু

ছোটদের বিভাগ

Natunpata GALPO  BANDHU 11 JUNE

বন্ধু
নন্দিনী সরকার


মিমি খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠে। ওদের বাড়িটা ঠিক গ্রামের ভেতর না- হলেও পুরো শহুরে এলাকায় নয়। তাই বাড়ির আশেপাশে এখনো বেশ কিছু গাছগাছালি আছে। কয়েকটা ফ্ল্যাট মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও ফাঁকা জায়গারও দেখা মেলে। মিমির বাবা-মা দুজনেই খুব গাছ ভালোবাসেন। মিমির মা  ছোটোদের একটা স্কুলে পড়ায়। আর বাবা এক ডাক্তারের কম্পাউন্ডার। তাঁরা কাজে বেরনোর আগে রোজ কিছুক্ষণ গাছের দেখভাল করেন। সেই থেকে মিমিরও অভ্যাস হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে
চোখেমুখে জল দিয়ে আগে বাগানে যাওয়া। কোন্ গাছে কি ফুল ফুটেছে, কোন্ গাছের ডালে পাখি বাসা করেছে _এসব 
না- দেখে ও কোনোদিন পড়তে বসে না। বাবার কাছে থেকে অনেক গাছ  ছোটো থেকেই ও চিনে গেছে। তবে শুধু গাছ নয়, বাগানের পাখি কাঠবিড়ালি প্রজাপতি সকলেই ওর বন্ধু। ওদের জন্য খাবার ছড়িয়ে দেয়  
সকালে। জল রাখে । কিছু পায়রা চড়ুই আর ঘুঘু রোজ আসে। আর মাঝে মাঝে  আসে টিয়া দোয়েল শালিখ। বুলবুলিও আসে তবে খুব কম। কয়েকটা কাঠবিড়ালি তো মিমির সামনে দিয়েই ছুটে পালায়। ভয় করে না ওকে। এদের নিয়েই মিমির দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। ওদের বাড়ির ঠিক পাশে চৌধুরিদাদুদের বেশ বড়ো একটা আম বাগান আছে। সেখানে অনেক আম গাছ আছে। পাখি, কাঠবিড়ালি আছে। দাদু ওদের মানে পাড়ার ছোটোদের খুব ভালোবাসত। নিজের হাতে তৈরি গাছের আম এলাকায় সবাইকে খাওয়াত। মিমিরা লুকোচুরি খেলত ওই বাগানে। দাদু ওদের গল্প বলত। কিন্তু মাসখানেক আগে হঠাৎ 
চৌধুরিদাদুর খুব শরীর খারাপ হয়। কলকাতা থেকে তাঁর ছেলে এসে তাঁকে নিয়ে যান।  গাছগুলো থাকে। গাছের অজস্র পাখিরাও থাকে। কিন্তু কয়েকদিন আগে নাকি কারা সব এসেছিল বাগান দেখতে। বাবা বলছিলেন 
চৌধুরীদাদুর ছেলে নাকি বাগানটা বিক্রি করে দিয়েছে। যারা কিনেছে তারা মনে হয় গাছ কেটে ফ্ল্যাট বানাবে। তাই সব দেখতে এসেছিল। পাড়ার ছোটোরা বিকেলে খেলতে গিয়ে বসে বসে এসব কথা বলছিল। সন্ধের মুখে অনেক পাখিও তখন বিভিন্ন সুরে ডেকে ডেকে নিজেদের ঘরে ফিরছিল। মিমিরা মন খারাপ করে ভাবছিল এই গাছগুলো কেটে দিলে কী হবে এদের! ওরা তখন প্ল্যান করল। এখন বাচ্চারা অনেক পরিণত। তাই ওরা রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রীকে একটা চিঠি লিখল ওদের কাঁচা হাতে অনেক ভেবে ভেবে। প্রায় কুড়িটা বাচ্চা তাতে নিজেদের নাম সই  করে ঠিকানা লিখে পরেরদিন মিমির বাবার কাছে দিল। সামনেই পরিবেশ দিবস আসছে। তাই ওদের পরিকল্পনা মতো চিঠি রেজিস্ট্রি করে মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিলেন মিমির বাবা। ওদিকে প্রোমোটারের লোকজন মাঝে মাঝেই ঘুরে 

মাপজোখ করে যাচ্ছে। সেদিন ওরা দেখল করাত কল নিয়ে এসেছে লড়ি করে। ওদের সবার চোখে তখন জল। তাহলে মন্ত্রী কি কিছুই করবেন না? পরিবেশ দিবসের ঠিক আগের দিন ওদের পঞ্চায়েত অফিস থেকে মিমির বাবার কাছে ফোন এল। বাচ্চাদের সাথে মন্ত্রী দেখা করতে চেয়েছেন বলে। মিমির বাবা অনেক আশা করে বাচ্চাদের নিয়ে গেলেন মন্ত্রীর বাড়িতে। মন্ত্রী সব শুনে , খবরাখবর নিয়ে এলাকার সরকারি অফিসে ফোন করে ওই বাগানের গাছ কাটা নিষেধ করে দিলেন। আর ওই বাগানটা ছোটোদের জন্য রাখার কথা বলে দিলেন। প্রোমোটারদের সাথে সরকারি অফিসাররা কিভাবে ব্যাপারটা মেটালেন তা মিমিরা জানে না, জানতে চায়ও না । ওরা এটা জেনেই খুশি যে আমগাছগুলো কেউ কাটবে না আর। পাখিরাও ঘর ছাড়া হবে না। পরিবেশ দিবস নিয়ে ওরা পড়াশুনো করেছে, তাই ওরা জানে গাছ ওদের সবথেকে বড়ো বন্ধু। বড়ো বড়ো মানুষেরা কেন যে এত ভুলভাল কাজ করেন সেটাই ওরা বুঝতে পারে না। 

Comments :0

Login to leave a comment