NATUNPATA MONDA MITHI BASAB BASAK

নতুনপাতা মণ্ডা মিঠাই / রক্ষা করো জীববৈচিত্র

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA MONDA MITHI BASAB BASAK 17 JUNE

রক্ষা করো জীববৈচিত্র
বাসব বসাক


মনে রাখা ভাল পৃথিবীটা কেবল মানুষের জন্য নয়। বরং বিবর্তনের পথ ধরে এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছে সবার শেষে। প্রায় আড়াইশ কোটি বছরের বিবর্তনের ইতিহাসের নিরীখে স্বচ্ছন্দেই বলা যায় মানুষ এসেছে এই সেদিন। এই নীল গ্রহের অনল বন প্রান্তর অগ্নরীক্ষ জুড়ে রয়েছে কত না জীব, কত না সবুজ উদ্ভিদ। যদি প্রশ্ন করা যায় যে গাছগাছালি থেকে শুরু ক'রে পোকামাকড়, শামুক ঝিনুক, ইঁদুর বাদুড়, গরু ঘোড়া, বাঘ সিংহ, বাঁদর শিম্পাজিং অথবা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয় এমন সব ব্যাকটেরিয়া কিয়া তার থেকেও ছোট করোনার মত ভাইরাস সব মিলিয়ে আমাদের এই গ্রহে ঠিক কত ধরনের জীব আছে তার জবাব দেওয়া সত্যিই দূরুহ। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অনেক খেটেখুটে বছর দুই আগে ২০১৮তে জানিয়েছেন পৃথিবী এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে মেরে কেটে ৮৭ লক্ষ, কি খুব বেশি হ'লে কোটি খানেক প্রজাতির জীবের বাসভূমি। এদের মধ্যে এতদিনে আমরা জ্ঞাতি গোত্র, নাম ধাম সমেত চিহ্নিত করতে পেরেছি মাত্র ১৩ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে। তারমানে পৃথিবীর জীবকূলের ৮৫ শতাংশই এখনও আমাদের চেনাজানার বাইরে থেকে গেছে। এই যে এত ধরনের জীব প্রজাতি একেই এক কথায় আমরা বলি জীববৈচিত্র বা বায়োডায়ভাসিটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে ১৯৮০ সালে বিজ্ঞানী লাভজয় প্রথম প্রজাতি বৈচিত্রের পরিবর্তে বামোলজিকাল ডায়ভার্সিটি শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে বিজ্ঞানী রোসেন তাকে আরও খানিক কেটেহেঁটে জন্ম দিলেন বায়োডায়ভার্সিটি শব্দটির।

 ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও শহরে ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব জীববৈচিত্র বিষয়ক কনভেনশন। সেই থেকে ২২ মে, অর্থাৎ ওই কনভেনশন শুরুর দিনটিকে পালন করা হয়ে আসছে বিশ্ব জীববৈচিত্র দিবস হিসাবে। কিন্তু মুশকিল হ'ল মানব সমাজের সীমাহীণ লোভ, দম্ভ আর অবিমৃষ্যকারিতার ফলে জীবজগতের এই বিপুল বৈচিত্র দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা ঘণিয়ে তুলছে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক সঙ্কট আর প্রকৃতির এহেন গভীর সঙ্কটের অভিঘাতে আজ বিপন্নতার মুখোমুখি গোটা মানব সভ্যতাই। আমরা কেবল ডোডো পাখির হারিয়ে যাওয়ার খবরটুকুই হয়তো রেখেছি। কিন্তু প্রতিদিনই যে গড়ে দেড়শ থেকে দু'শ প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ আমরা ক'জনই বা রাখি। সব থেকে চিন্তার ব্যাপার হল এই যে এত এত প্রজাতি বেমালুম গায়েব হয়ে যাচ্ছে তা যত না প্রাকৃতিক কারণে ঘটছে তার থেকে হাজার গুণ বেশি ঘটছে মানব সভ্যতার একদেশদর্শী দখলদারি মানসিকতার কারনে। অথচ এই বৈচিত্রময় জীব জগতকে বাঁচাতে না পারলে, সন্দেহ নেই, আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর বিপদ আসন্ন। তাই এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কেন্দ্রীয় ভাবনায় স্থান পেয়েছে এই জীববৈচিত্রই; সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের এবছরের আহ্বান প্রকৃতিকে বাঁচাও, বাঁচাও জীববৈচিত্র।

Comments :0

Login to leave a comment